‘ইলেকটোরাল বন্ড ঘুষ, বিজেপি সাড়ে ৮ হাজার কোটি ঘুষ নিয়েছে’

নির্বাচনী বন্ড নিয়ে ভারতে বিরোধীদের বিক্ষোভফাইল ছবি: এএনআই

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেছেন,  ইলেকটোরাল বন্ড একপ্রকার ঘুষ। এই বন্ডের মাধ্যমে সাড়ে আট হাজার কোটি রুপি পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।  

শনিবার কলকাতা প্রেসক্লাবে বিজেপিবিরোধী ‘দেশ বাঁচাও’ গণমঞ্চ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা প্রশান্ত ভূষণ এসব কথা বলেন।

ভারতের রাজনীতিতে আলোচিত বিতর্কিত বিষয় ইলেকটোরাল বন্ড। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক অনুদান দেওয়ার বিষয় ব্যাখ্যা করে প্রশান্ত ভূষণ বলেন,  ইলেকটোরাল বন্ড হলো এক প্রকারের ঘুষ। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোকে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি রুপি অর্থ দিয়েছে। আর মোট অর্থের অর্ধেক পেয়েছে বিজেপি। এর পরিমাণ সাড়ে আট হাজার কোটি রুপি।

প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলকে অনুদান দেওয়ার চর্চা সব দেশে আছে। এটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু ভারতে অনুদান দেওয়ার জন্য ইলেকটোরালর বন্ডের বিষয়ে গোপনীয়তা তো ভুল ছিল। ঘুষ নেওয়াটা তো অন্যায়। এই বন্ডের মাধ্যমে অনেক দলই অনুদান পেয়েছে। একমাত্র সিপিএম অনুদান পায়নি। এই সিপিএমই একমাত্র দল যারা প্রথম থেকে এই বন্ডের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল।’

ভারতীয় এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘ইলেকটোরাল বন্ডে কারও নাম থাকবে না। মানে বিষয়টা এ রকম, ধরুন আপনি ব্যাংক থেকে ইলেকটোরাল বন্ড কিনলেন। যেহেতু এতে কোনো নাম থাকবে না, তাই যে কেউ এই বন্ড কিনতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে যেকোনো রাজনৈতিক দলকে অর্থ দিতে পারবেন। আবার সেই রাজনৈতিক দল নিজেদের অ্যাকাউন্টে এই টাকা নিতে পারবে, এটাই স্কিম ছিল।’

আরও পড়ুন

প্রশান্ত ভূষণ বলেন, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি এই স্কিমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় বলেছিলেন, বন্ড যে কিনবে, তার সব তথ্য গোপন থাকবে, যাতে রাজনৈতিক দলকে অনুদান দিয়েছেন এই দাবি করে কেউ বাড়তি সুবিধা আদায় করতে না পারেন। কিন্তু পরে জানা গেল বন্ডে অদৃশ্য নম্বর থেকে নাম জানা যায়। নাম জানা থাকায় অনুদানদাতা প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়া যায়।

প্রশান্ত ভূষণ বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ইলেকটোরাল বন্ড বন্ধ ও এ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর দেখা গেল বিজেপি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বন্ডের মাধ্যমে ঘুষ নিয়ে তাদের লাইসেন্স পাইয়ে দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানও নিজেদের কালো টাকা সাদা করার জন্য, নিজেদের পলিসি বাঁচানোর জন্য এবং নির্বিঘ্নে ব্যবসা করার জন্য ইলেকটোরাল বন্ড নিয়ে সরাসরি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে ঘুষ দিয়েছে।

আরও পড়ুন

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, ‘স্পেশাল ২৬ নামে একটি সিনেমা আছে। যেখানে সিবিআই সেজে বড় বড় জায়গায় রেইড চালিয়ে টাকা লুট করত একদল ব্যক্তি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সিনেমার মতো নকল সিবিআইয়ের জায়গায় আসল ইডি–সিবিআই পাঠিয়ে অর্থ লুট করার এ অভিনব ফাঁদ পেতেছেন। এবার আপনারাই বুঝুন, আপনারা কাকে ভোট দেবেন।’

‘দেশ বাঁচাও’ গণমঞ্চ আয়োজিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী অঞ্জলি ভরদ্বাজ, রাজনৈতিক কর্মী বর্ণালী মুখোপাধ্যায়, সাংবাদিক ও বিজেপির সাবেক নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্ত প্রমুখ।