প্রতি বছরের পয়লা বৈশাখে এখন থেকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে পালন হবে। আজ বৃহস্পতিবার রাজ্যের বিধানসভায় এ সংক্রান্ত এক প্রস্তাব পাশ হয়েছে। বিধানসভায় দিনটি পালন করতে প্রস্তাব দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী দল বিজেপির বিধায়কদের মধ্যে তুমুল বিতর্কও হয়। শেষতক সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা প্রস্তাব পাশ হয়।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তাদের রাজ্য নিয়ে একটি বিশেষ দিন পালন করা হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গে ’পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিন ছিল না। আর তাই নিয়ে একটি নির্দিষ্ট দিনকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে পালন করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে প্রস্তাব দেন, প্রতিবছর পালিত হবে রাজ্যের দিবস। তিনি এটাকে ’বাংলা দিবস’ হিসেবে অভিহিত করেন।
আজ দুপুরে এই প্রস্তাব নিয়ে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী দল বিজেপির বিধায়কদের মধ্যে তুমুল বাগ্বিতণ্ডা হয়। অবশেষে বিধানসভায় ১৬৭-৬২ ভোটে রাজ্য সরকারের প্রস্তাবটি পাশ হয়। বিজেপি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের প্রস্তাব পেশ করে।
গত ২৯ আগস্ট বিকেলে এই নাম নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রাজ্য সচিবালয় নবান্নের সভাঘরে একটি সভা ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বৈঠকে রাজনৈতিক দলসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া সহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। অনুপস্থিত থাকেন বিজেপি, কংগ্রেস এবং বাম দলের প্রতিনিধিরা। এই বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন কলকাতার বিশিষ্টজনেরা। বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের জন্য অধিকাংশ বিশিষ্টজনেরা পয়লা বৈশাখ পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের পক্ষে সায় দেন।
যদিও বিজেপি ২০ জুন এই দিনটি পালনের পক্ষে প্রস্তাব দেয়। রাজভবনেও এবার দিনটি পালনও করেছে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এ বছরের ২০ জুন।
মুখ্যমন্ত্রী আজ বিরোধীদের সমালোচনার মুখে চ্যালেঞ্জ করে জানিয়ে দেন, ’রাজ্যপাল আমাদের এই বিলে সই না করলেও আমাদের কিছু আসে যাবে না। আমরা পয়লা বৈশাখ দিনটি পালন করবই বাংলা দিবস হিসেবে। দেখি কার জোর বেশি? ’
১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভায় ভোটাভুটিতে বাংলা ভাগের বিষয় স্থির হয়েছিল। একভাগ পূর্ব পাকিস্তান ও অন্য ভাগ পশ্চিমবঙ্গ। সেই দিনকে স্মরণে রেখে কেন্দ্রীয় সরকার ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
কেন পয়লা বৈশাখ ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে বেছে নেওয়া হলো, তার ব্যাখ্যা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘২০ জুন, ১৯৪৭ সালে তো পশ্চিমবঙ্গের জন্মই হয়নি (কারণ সে সময় ভারত স্বাধীন হয়নি)। তাই আমরা কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যাদের সঙ্গে বাংলার মাটির কোনো যোগাযোগ নেই, বাংলার শিকড়ের যোগাযোগ নেই, তারা কীভাবে বাংলার কথা বলবে বলুন।’