আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সেবি

আদানি সাম্রাজ্যের কর্নধার গৌতম আদানি
ছবি: এএফপি

ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি) আদানি গোষ্ঠীর ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের শেয়ার বিক্রির অনিয়ম তদন্ত করছে। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলার পর এই প্রথম তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানে সেবির এমন দুটি সূত্র জানায়, শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়ায় আইনের কোনো লঙ্ঘন বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব ছিল কি না, সেবি তা তদন্ত করে দেখছে।

তদন্তের গোপনীয়তার প্রকৃতি বিবেচনায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সূত্রগুলো জানায়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে মরিশাসভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান গ্রেট ইন্টারন্যাশনাল তুস্কর ও আয়ুশমাট লিমিটেডের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা তদন্ত করছে। আদানির প্রাথমিক শেয়ারবাজারে আসার আগে এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে অ্যাংকর ইনভেস্টর হিসেবে একটি নির্দিষ্ট দামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

কোম্পানির কোনো প্রতিষ্ঠাতা বা সহপ্রতিষ্ঠান অ্যাংকর ইনভেস্টর শ্রেণিতে শেয়ার কেনার আবেদন করতে পারবে না। একটি সূত্র জানায়, মরিশাসভিত্তিক এই দুটি প্রতিষ্ঠানের কোনোটি প্রতিষ্ঠাতা গ্রুপ, অর্থাৎ আদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি না, তদন্তে সেটার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

ভারতের পুঁজির ঘোষণাসংক্রান্ত আইনানুযায়ী বাধ্যবাধকতা রয়েছে যে কোম্পানির কোনো প্রতিষ্ঠাতা বা সহপ্রতিষ্ঠান অ্যাংকর ইনভেস্টর শ্রেণিতে শেয়ার কেনার আবেদন করতে পারবে না। একটি সূত্র জানায়, মরিশাসভিত্তিক এই দুটি প্রতিষ্ঠানের কোনোটি প্রতিষ্ঠাতা গ্রুপ, অর্থাৎ আদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি না, তদন্তে সেটার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত ২৪ জানুয়ারি থেকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির মালিকানাধীন সাতটি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার মূলধন হারিয়েছে।

হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে আদানির বিরুদ্ধে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে আয়কর ফাঁকি এবং শেয়ারবাজারে কারসাজির অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে শিল্পগোষ্ঠীটি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। শেয়ারের দরপতনের কারণে গত সপ্তাহে আদানি এন্টারপ্রাইজ সেকেন্ডারি শেয়ার বিক্রি বন্ধ ঘোষণা করে।

তদন্তের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সেবি ও আদানি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। গ্রেট ইন্টারন্যাশনাল তুস্কর ফান্ড ও আয়ুশমাট লিমিটেডের কোনো কর্মকর্তাও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সূত্র জানায়, আদানির শেয়ার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ১০টি বিনিয়োগ ব্যাংকের মধ্যে ইলারা ক্যাপিটাল ও মোনার্চ নেটওয়ার্থ ক্যাপিটাল সেবির নজরদারিতে রয়েছে। গত সপ্তাহে সেবি এই দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে।

একটি সূত্র জানায়, শেয়ার অফারিং প্রক্রিয়ায় ইলারা ও মোনার্চের ভূমিকা পর্যালোচনা করে দেখছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

মোদির কার্যালয়ের সঙ্গে বৈঠক

হিনেডনবার্গের প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, মোনার্চে আদানির একটি প্রতিষ্ঠানের কিছু মালিকানা রয়েছে। মোনার্চ আগে আদানি গোষ্ঠীর হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের কাজ দেখভাল করত। এতে বলা হয়, দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্পষ্টতই স্বার্থের দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি অভিযোগ করেছে, মরিশাসভিত্তিক ইলারা তার বাজারমূল্যের ৯৯ শতাংশ আদানির তিনটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে।

আদানি বলেছে, খুচরা বাজারে মোনার্চের বিশ্বাসযোগ্যতা ও সক্ষমতা বিবেচনায় আগের শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে তাদের বাছাই করা হয়েছিল। ইলারার ক্ষেত্রে আদানি বলেছে, আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পর্কের অভিযোগ সঠিক নয়।

তবে মোনার্চের সঙ্গে যোগাযোগ এবং স্টক এক্সচেঞ্জে তাদের প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানের খুবই সামান্য শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ মালিকানা রয়েছে আদানির।

সরকারি দুই কর্মকর্তা বলেন, হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনের পর আদানি গোষ্ঠীর সম্পদমূল্য কমতে থাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীরে কার্যালয়সহ জাতীয় পর্যায়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলগুলো হিনডেনবার্গের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পার্লামেন্টে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে।

ভারতীয় ব্যবসায় অনিয়ম নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় করপোরেট–বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে মোদির কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ব্রিফ করেছে। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির সঙ্গেও তারা যোগাযোগ রাখছে।

তবে মোদির কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কী ব্রিফ করা হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। করপোরেট–বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২ ফেব্রুয়ারি আদানির অতীত আর্থিক বিবরণী পর্যালোচনা শুরু করেছে।

হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন নিয়ে মোদির কার্যালয় ও করপোরেট–বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ইতিপূর্বে আদানি গোষ্ঠী হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনের ‘কোনো ভিত্তি নেই’ বলে দাবি করেছে। ভারতের অর্থসচিব টিভি সোমানাথান সম্প্রতি আদানি ইস্যুকে ‘চায়ের কাপে ঝড়’ বলে অভিহিত করেন।