অযোধ্যায় হেরেছেন বিজেপির প্রার্থী

বিজেপির প্রার্থী লাল্লু সিংছবি: লাল্লুর ফেসবুক থেকে নেওয়া

লোকসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে গত জানুয়ারিতে উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তখন মনে হচ্ছিল, রামমন্দির অবস্থিত অযোধ্যার ফৈজাবাদ আসনে তাঁর দল বিজেপির জয় নিশ্চিত।

কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার ভোট গণনার পর পাওয়া গেল ঠিক তার উল্টো চিত্র। সেখানে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী অবধেশ প্রসাদের কাছে হেরে গেছেন বিজেপির লাল্লু সিং। ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই আসনে টানা দুবার জয়ী হয়েছিলেন লাল্লু।

উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদে রামমন্দির অবস্থিত। ২০১৮ সালে ফৈজাবাদ জেলার নতুন নামকরণ করা হয় অযোধ্যা। তবে লোকসভার এই আসনকে এখনো ফৈজাবাদ বলা হয়।

শুধু ফৈজাবাদই নয়, বরং পুরো উত্তর প্রদেশেই এবার বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। অথচ ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্য এক দশকের বেশি সময় ধরে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

ভারতের লোকসভায় সবচেয়ে বেশি সদস্য আসেন উত্তর প্রদেশ থেকে। এ রাজ্যে লোকসভার ৮০টি (প্রায় ১৫ শতাংশ) আসন রয়েছে। বলা হয়, কেন্দ্র কার দখলে যেতে চলেছে, তার আভাস পাওয়া যায় এই রাজ্যের ফলাফল থেকে।

চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট পেয়েছে ৪২ আসন। আর বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোট পেয়েছে ৩৭ আসন। সেখানে ২০১৪ সালে ৭১টি এবং ২০১৯ সালে ৬২টি আসন পেয়েছিল এনডিএ।

ফৈজাবাদে হেরে যাওয়ার পর বিজেপির প্রার্থী লাল্লু সিং বলেন, ‘আমি আপনাদের এবং অযোধ্যার সম্মান রক্ষা করতে পারিনি। নিশ্চয়ই আমার মধ্যে কোনো কমতি ছিল। অযোধ্যার লোকসভা আসনে আমাদের জিততে না পারার নিশ্চয়ই কিছু কারণ আছে।’

ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। বিজেপি বলে আসছে, এই মন্দির নির্মাণের মধ্য দিয়ে তারা তাদের তিন দশকের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে।

হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে গত দুই মাসে প্রতিটি নির্বাচনী প্রচারসভায় বিজেপি ভোটারদের রামমন্দির নির্মাণের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। তারপরও কেন ফৈজাবাদ আসনে বিজেপি হেরে গেল? পুরো রাজ্যে কেন বিজেপির ভরাডুবি হলো?

বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজ্যটিতে বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতির কাছে বিজেপির প্রচার করা ধর্মীয় আবেদন হার মেনেছে।

বিশ্লেষকদের এই ধারণার প্রতিফলন পাওয়া গেছে রাজ্যের একটি ব্যবসায়ী সংগঠন ‘অযোধ্যা ব্যাপার মণ্ডল’-এর সভাপতি রাকেশ যাদবের কথায়। তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘মন্দির নিয়ে আমরা খুব খুশি। কিন্তু বিজেপিকে নিয়ে লোকজন হতাশ। মানুষ সব সময় জাত-পাত বা মন্দির-মসজিদের রাজনীতিতে পা দেবে না।’

রামমন্দির উদ্বোধনের আগে অযোধ্যায় এর নির্মাণকাজ করতে গিয়ে অনেক ছোট ব্যবসায়ীর দোকান ভেঙে ফেলা হয়েছিল। প্রত্যাশিত ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ বলে জানান রাকেশ।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রামমন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয়। যে ভূমিতে রামমন্দির তৈরি হয়, সেখানে মুঘল আমলে তৈরি বাবরি মসজিদ ছিল। একদল উগ্রবাদী হিন্দু ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে। তার পর থেকে সেই ভূমির অধিকার কার, তা নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়। অবশেষে ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট সেখানে রামমন্দির নির্মাণের নির্দেশ দেন।