বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতে ভোটের লড়াই শুরু আজ

প্রথম দফায় আজ ১৭ রাজ্য ও ৪ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১০২ আসনে ভোট হচ্ছে।

একটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম পরীক্ষা–নিরীক্ষা করছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। গতকাল রাজস্থানের বিকান এলাকায়ছবি: রয়টার্স

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশ ভারতে আজ শুক্রবার শুরু হয়েছে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ভোটগ্রহণ পর্ব। মোট সাত দফায় এই ভোট হবে।

লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে আজ প্রথম দফায় ১০২টি আসনে ভোট হচ্ছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে তিনটি আসনও আছে। আসন তিনটি হলো কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার।

সকাল সাতটায় শুরু হয় এ ভোট গ্রহণ। শেষ হবে সন্ধ্যা ছয়টায়।

আজ অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিম বিধানসভায়ও ভোট হচ্ছে।

আজ পশ্চিমবঙ্গের যে তিনটি লোকসভা আসনে ভোট হচ্ছে, সেগুলোতে গত নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল। সেবার পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি। এবার তাদের লক্ষ্য অন্তত ২৫ আসন।

এবার সাত দফাতেই ভোট হবে তিনটি রাজ্যে—উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে। আজ ভোট হচ্ছে তামিলনাড়ুর ৩৯ ও পদুচেরির ১ আসনেও। এ ছাড়া উত্তর প্রদেশের ৮, মহারাষ্ট্রের ৬, বিহারের ৪ এবং রাজস্থানের ১২টি আসনে ভোট হচ্ছে। আসাম পাঁচটি এবং অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয় ও মণিপুরের দুটি করে আসনে ভোট হচ্ছে। সহিংসতা উপদ্রুত মণিপুরের আউটার মণিপুর কেন্দ্রে আবার ভোট নেওয়া হবে দুই দফায়। এ ছাড়া প্রথম ছত্তিশগড়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা, উত্তরাখন্ড, আন্দামান নিকোবর, লাক্ষাদ্বীপ ও জম্মু-কাশ্মীরে একটি করে আসনে ভোট হচ্ছে।

রাজ্য দ্বিখণ্ডীকরণ ও সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজের পর এই প্রথম ভোট নেওয়া হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীরে। সেখানকার মোট ৫টি (লাদাখে ১টি) আসনে ভোট হবে পাঁচ দফায়। আজ ভোট হবে উধমপুরে।

ভোটের মুখে জম্মু-কাশ্মীরে সহিংসতা বেড়ে গেছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় দুই পরিযায়ী শ্রমিককে গুলি করা হয়। এতে একজনের মৃত্যু হয়েছে, অন্যজন গুরুতর আহত। দুজনেই বিহার থেকে কাজ করতে শ্রমিক হিসেবে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন। গত সপ্তাহে শোপিয়ান জেলায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এক হিন্দু পর্যটন গাইড।

এই ধাপে উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে লড়ছেন বিজেপির নীতিন গড়করি (নাগপুর, মহারাষ্ট্র), জিতিন প্রসাদ (পিলিভিত, উত্তর প্রদেশ), আন্নামালাই (কোয়েম্বাটুর, তামিলনাড়ু), কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং (উধমপুর, জম্মু ও কাশ্মীর) ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজুই (অরুণাচল পশ্চিম, অরুণাচল প্রদেশ)।

এ ছাড়া কংগ্রেসের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কমল নাথের ছেলে নকুল নাথ (চিন্দাওয়ারা, মধ্যপ্রদেশ), তরুণ গগৈর ছেলে গৌরব গগৈ (জরাট, আসাম), কংগ্রেস-এসপি জোটের ইমরান মাসুদ (শাহরানপুর, উত্তর প্রদেশ) ও ডিএমকের দয়ানিধি মারান (চেন্নাই সেন্ট্রাল, তামিলনাড়ু)।

প্রথম দফার ভোট শুরুর ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সব বিজেপি ও এনডিএ প্রার্থীর উদ্দেশে চিঠি লিখেছেন। গত বুধবার রাতে লেখা ওই চিঠিতে প্রত্যেককে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বার্তা সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য। হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় লেখা ওই চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘এবারের ভোট নিছক ভোট নয়। এই নির্বাচন সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ, এই ভোটে জিতে মজবুত সরকার গড়তে পারলে আমরা ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত তৈরি করতে পারব।’

চিঠিতেও প্রধানমন্ত্রী মোদি কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি। তিনি লিখেছেন, প্রবীণেরা জানেন ৫০ থেকে ৬০ বছর ধরে কংগ্রেস আমলে তাঁদের কোন পরিস্থিতিতে কাটাতে হয়েছে। গত ১০ বছরের সঙ্গে তুলনা করলে তাঁরা বুঝতে পারবেন, জীবনযাত্রার মান কতটা উন্নত হয়েছে। অনেক কাজ হয়েছে। এখনো অনেক কাজ বাকি। সেই অধরা কাজ সম্পন্ন করার জন্য এবারের ভোট নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে।

কোনো কোনো প্রার্থীকে আবার নরেন্দ্র মোদি বিশেষ বার্তাও দিয়েছেন। যেমন তামিলনাড়ু বিজেপির সভাপতি ও কোয়েম্বাটুর কেন্দ্রের প্রার্থী আন্নামালাই। চিঠিতে মোদি তাঁকে বলেছেন, পুলিশের বড় চাকরি ছেড়ে সরাসরি জনসেবা করবেন বলে আপনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আপনাকে অভিনন্দন। আপনার মতো কর্মী দলের সম্পদ। এবারের ভোটের লক্ষ৵ মোদিই স্থির করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিজেপি একাই পাবে ৩৭০, জোট পাবে ৪০০। তাঁর স্লোগান, ‘আব কি বার, চার শ পার।’