কেজরিওয়ালকে জামিন দেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

দিল্লির আদালত থেকে ইডির সদস্যরা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে নিয়ে যাচ্ছেন। ২৮ মার্চছবি এএনআই

ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল খুব সম্ভবত আবগারি (মদ) নীতি মামলায় অন্তর্বর্তী জামিন পেতে চলেছেন। আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল–জবাব চলাকালে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি দীপংকর দত্তর বিভিন্ন মন্তব্যের মধ্য দিয়ে এমনই স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

জামিন নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাননি। অবশ্য দুই বিচারপতি মন্তব্য করেছেন যে কেজরিওয়াল স্বভাবগত অপরাধী নন, বারবার অপরাধ করার নজিরও তাঁর নেই।

বিচারপতিরা এমন কথাও বলেন, কেজরিওয়াল নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। এখন ভোট চলছে। তাতে প্রচারের অধিকার তাঁর আছে। ভোট না থাকলে হয়তো জামিন দেওয়ার প্রশ্ন উঠত না।

এমনকি একটা সময় বিচারপতিদের বলতে শোনা যায়, জামিন দেওয়া হলেও কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কোনো ফাইলে সই করতে পারবেন না।

বিচারপতিদের এই শর্তের জবাবে কেজরিওয়ালের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, তিনি নিশ্চিতভাবেই আবগারি নীতিসংক্রান্ত কোনো সরকারি নথিতে সই করবেন না। তবে তা না করার জন্য উপরাজ্যপালও যেন জনহিতকর কাজ বন্ধ করে না দেন।

সে কথা শুনে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেন, ‘আমরা চাই না, তিনি কোনো রকম সরকারি কর্তব্য পালন করুন। সরকারি কাজে কোনো রকম হস্তক্ষেপ হোক, তা আমরা চাই না।’
বিচারপতি খান্না ও বিচারপতি দত্ত অবশ্য আজ কেজরিওয়ালকে জামিন দেননি। তাঁরা মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন ৯ মে। সেদিন শুনানি না হলে পরের সপ্তাহে শুনানি হবে। তবে ডিভিশন বেঞ্চ যে তাঁকে জামিন দিতে চান, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।

আগামী বৃহস্পতিবার কিংবা পরের সপ্তাহে কেজরিওয়াল জামিন পেলে এটা পরিষ্কার যে তিনি দিল্লি ও পাঞ্জাবের ভোটে নির্বিঘ্নে দলের হয়ে প্রচার চালাতে পারবেন। ষষ্ঠ দফায় ২৫ মে দিল্লির ভোট, সপ্তম দফায় আগামী ১ জুন পাঞ্জাবে। ভোটের ফল ঘোষণা হবে ৪ জুন।

কেজরিওয়ালকে আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে তিনি বন্দী। তাঁর গ্রেপ্তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করে আম আদমি পার্টি (আপ)।

কেজরিওয়াল ওই গ্রেপ্তারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন। নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টে আবেদন খারিজ হওয়ায় তিনি সুপ্রিম কোর্টে এসেছেন। আজ সেখানেও তাঁর জামিনের তীব্র বিরোধিতা করে ইডি।

ইডির হয়ে প্রথমে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু ও পরে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জামিনের বিরোধিতা করে বলেন যে ফৌজদারি আইনে একজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক নেতার কোনো পার্থক্য নেই। তিনি জামিন পেলে ভুল বার্তা যাবে। তাঁকে মোট নয়বার সমন পাঠানো হয়েছিল। তিনি একবারও আসেননি। এখন জামিন পেলে লোকে ভাববে, তিনি কিছুই করেননি।

ইডি বিরোধিতা করলেও বিচারপতিদের কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি তাদের হতে হয়। তদন্ত কেন এত ঢিমেতালে চলছে? সাক্ষী ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জেরা করতে কেন এত সময় লাগছে? কেন দুই বছর ধরে কিছুই করা হয়নি? এসব প্রশ্ন ইডিকে শুনতে হয়। ইডি জানায়, প্রথম দিকে কেজরিওয়ালের সংশ্রব পাওয়া যায়নি। তবে তদন্ত যত এগিয়েছে, ততই প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুর্নীতি স্পষ্টতর হয়েছে।

বিচারপতি খান্না ও বিচারপতি দত্ত বলেন, তাঁদের কাছে কে রাজনৈতিক নেতা, কে নন, সেটা বিবেচ্য নয়। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই একটা পরিপ্রেক্ষিত থাকে। এ ক্ষেত্রে যেমন নির্বাচন। কাউকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। কেজরিওয়াল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। নির্বাচনে প্রচার করার অধিকার তাঁর রয়েছে।