অমিত শাহর বক্তব্য বিকৃতির অভিযোগ, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীকে তলব দিল্লি পুলিশের

অমিত শাহছবি: এএনআই

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বক্তব্য বিকৃত করে প্রচারের অভিযোগে তেলেঙ্গানার কংগ্রেস–দলীয় মুখ্যমন্ত্রী এ রেবন্ত রেড্ডিকে দিল্লি পুলিশ সমন পাঠিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী রেড্ডিকে আগামী ১ মে দিল্লি পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হবে। সেই সঙ্গে সমন জারি করা হয়েছে তেলেঙ্গানার আরও চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

ওই ‘বিকৃত’ ভিডিও ‘এক্স’ ও ফেসবুকে যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়ে ওই দুই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেও দিল্লি পুলিশ নোটিশ পাঠিয়েছে বলে এনডিটিভির খবর।

ভোটের আবহে একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে এ ধরনের মামলায় সমন পাঠানোয় রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গেছে। তেলেঙ্গানার ১৭ লোকসভা আসনে ভোট হবে ১৩ মে।

তফসিল জাতি, উপজাতি ও অনগ্রসরদের সংরক্ষণ নিয়ে দেশের ভোটের রাজনীতি এই মুহূর্তে সরগরম। বিজেপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এক ভাষণ ‘বিকৃতভাবে’ উপস্থাপন করে কংগ্রেস প্রচার করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত সেই ভিডিওতে অমিত শাহকে তফসিল জাতি, উপজাতি ও অনগ্রসরদের সংরক্ষণ কোটা তুলে দেওয়ার কথা বলতে শোনা গেছে।

বিজেপির নালিশের পরিপ্রেক্ষিতেই দিল্লি পুলিশ ওই সমন জারি করেছে। এর আগে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য টুইট করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিলেন।

বিজেপির বক্তব্য, শাহ তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে অসাংবিধানিকভাবে মুসলমানদের দেওয়া সংরক্ষণ কোটা তুলে দেবে। এই অধিকার আছে শুধু তফসিল জাতি, উপজাতি ও অনগ্রসরদের।

লোকসভা নির্বাচনে প্রথম দুই দফায় ভোট আগের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় খুবই কম পড়েছে। তার পর থেকেই বিজেপি ও কংগ্রেস একে অপরের বিরুদ্ধে প্রচার তীব্র করে তুলেছে। কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহার বিকৃত করে প্রধানমন্ত্রীসহ বিজেপির শীর্ষ নেতারা বলতে শুরু করেছেন, ক্ষমতায় এলে তারা দেশের জনগণের সম্পদ কেড়ে নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে ভাগ–বাঁটোয়ারা করে দেবে।

প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের জন্য নির্বাচন কমিশন বিজেপি সভাপতিকে চিঠি পাঠিয়েছে। একই রকম চিঠি পাঠিয়েছে কংগ্রেস সভাপতিকেও রাহুল গান্ধীর ভাষণ নিয়ে। তার মীমাংসা হওয়ার আগেই এবার বিজেপির অভিযোগের ভিত্তিতে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীকে সমন জানাল দিল্লি পুলিশ।

ভোট যত এগোচ্ছে, প্রচারের তীব্রতা ও তিক্ততা ততই বেড়ে চলেছে। বিজেপির প্রচারে এখন কংগ্রেসের ‘মুসলমানপ্রীতি’ ছাড়া অন্য কিছু নেই। সে প্রসঙ্গে চলে আসছে সংরক্ষণ কোটা উল্লেখ। প্রধানমন্ত্রী নিজে যে সুর বেঁধে দিয়েছেন, সেই সুরেই বিজেপির নেতারা নির্বাচনী ভাষণ দিয়ে চলেছেন।

কয়েক দিন আগে এক জনসভায় রাহুল বলেছিলেন, বিজেপি সংবিধান ও গণতন্ত্র নিকেশ করে দিতে চাইছে। ৪০০ আসন পাওয়ার তাগিদ সে কারণেই। আগেকার দিনে রাজা–মহারাজারা নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করতেন। সাধারণের জমি–জায়গা হরণ করতেন। জনগণের সঙ্গে মিলে কংগ্রেস দেশকে স্বাধীনতা দিয়েছে। গণতন্ত্র দিয়েছে। সংবিধান দিয়েছে। কংগ্রেস তা রক্ষা করবে।

রাহুলের ওই ভাষণকে মোদি মুসলমান তুষ্টিকরণ বলে দাগিয়ে দেন। রাহুলের নাম না করে তাঁকে ‘শাহজাদা’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার লড়াই থেকেই কংগ্রেসের মুসলমান তোষণ অব্যাহত। তিনি দেশের রাজা–মহারাজাদের অত্যাচার দেখলেন। কিন্তু বাদশা, সুলতান, নিজামদের অত্যাচার দেখতে পেলেন না।’

মোদি বলেন, আওরঙ্গজেবের মন্দির ধ্বংসের কথা রাহুলের মনে আসে না। লুটতরাজ দেখতে পান না। নবাব, সুলতান, বাদশাদের বিরুদ্ধে তাঁর মুখে একটি কথাও নেই। এই তুষ্টিকরণের কথাই তাঁদের ইশতেহারে রয়েছে।

ভোটের আবহে কংগ্রেসকে দুর্বল করতে বিজেপি অন্যভাবেও সক্রিয়। কয়েক দিন আগে গুজরাটের সুরাট আসনের কংগ্রেস প্রার্থী নীলেশ কুম্ভানির মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন বাকি আট প্রার্থীও। নীলেশের খোঁজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যান বিজেপি প্রার্থী মুকেশ দালাল।

আজ সোমবার মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর আসনের কংগ্রেস প্রার্থী অক্ষয়কান্তি বাম প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ‘এক্স’ হ্যান্ডলে অক্ষয়কান্তিকে বিজেপিতে স্বাগত জানিয়েছেন। কংগ্রেস মনে করছে, ইডি, সিবিআই, আয়করের ভয় দেখিয়ে বিজেপি এবার বিরোধী প্রার্থীদের মাঠ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করছে।

শুধু বিজেপির চাপই নয়, কংগ্রেসের নীতির কারণেও পদত্যাগের ঘটনা ঘটছে। দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অরবিন্দ সিং লাভলি গতকাল রোববার পদত্যাগ করেন। দিল্লির ৭ আসনে আম আদমি পার্টির (এএপি) সঙ্গে সমঝোতা ও বহিরাগতদের প্রার্থী করা তাঁর পদত্যাগের কারণ। ওই দুই বিষয়ে তিনি যে অসন্তুষ্ট, সে কথা তিনি দলীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে চিঠি লিখে জানিয়ে দেন। লাভলি অবশ্য বলেছেন, সভাপতি পদে ইস্তফা দিলেও তিনি দল ছাড়ছেন না।

দিল্লির ৭ লোকসভা আসনের ৪টিতে আম আদমি পার্টি, বাকি ৩ আসনে কংগ্রেস প্রার্থী লড়াই করছেন। ওই তিন আসনের মধ্যে উত্তর–পূর্ব দিল্লিতে কানহাইয়া কুমার ও উত্তর–পশ্চিম দিল্লিতে উদিত রাজকে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে।

লাভলির অভিযোগ, দুজনেই বহিরাগত এবং দিল্লিতে অপরিচিত। দিল্লির ৭ আসনই বিজেপির দখলে। জোট হলেও ভোটের মুখে কংগ্রেসকে এখন বিজেপির পাশাপাশি দলীয় কোন্দলের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।