কংগ্রেসকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করতে চাইছে সরকার: সোনিয়া

দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে (বাঁ থেকে) কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধী। আজ ২১ মার্চছবি: এএনআই

কংগ্রেস দলকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই অভিযোগ জানিয়ে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী আজ বৃহস্পতিবার বলেছেন, সেই কাজ সরকার সুপরিকল্পিতভাবে করছে। কংগ্রেসকে তারা ভাতে মারতে চাইছে। জনগণের কাছ থেকে আদায় করা চাঁদা যাতে ব্যবহৃত না হয়, সেই চেষ্টা করে চলেছে। কংগ্রেসের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হচ্ছে। ব্যাংক থেকে জোর করে টাকাও তুলে নিচ্ছে সরকার।

রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন করে সোনিয়া গান্ধী এই অভিযোগ এনে বলেন, সরকারের এই আচরণ শুধু কংগ্রেস নয়, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর জঘন্য আক্রমণ।

লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে এই অভিযোগের জবাবে বিজেপি অবশ্য বলেছে, পরাজয় অনিবার্য দেখে কংগ্রেস আগে থেকে অজুহাত তৈরি করে রাখছে।

সংবাদ সম্মেলনে সোনিয়ার পাশে ছিলেন দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধী, জয়রাম রমেশ ও কোষাধ্যক্ষ অজয় মাকেন। সোনিয়ার অভিযোগের রেশ ধরে খাড়গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বারবার সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের কথা বলেন। সরকার সত্যিই যদি তা চায়, তা হলে উচিত কংগ্রেসকে তার ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করতে দেওয়া।

দলীয় কর্মীদের মনোবল চাঙা রাখতে সোনিয়া অবশ্য বলেছেন, ‘এই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা আমাদের নির্বাচনী প্রচার জারি রেখেছি। একদিকে রয়েছে নির্বাচনী বন্ডের বিষয়, যা থেকে শাসক দল কাড়ি কাড়ি টাকা আদায় করেছে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দলের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে তা থেকে জবরদস্তি টাকা তুলে নিয়ে তাদের অথর্ব ও পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা অভূতপূর্ব ও অগণতান্ত্রিক।’

কিছুদিন আগে কংগ্রেস অভিযোগ করেছিল, ২০১৮–১৯ সালে আয়কর বাবদ সুদে আসলে বকেয়া ২১০ কোটি রুপি অনাদায়ী বলে দাবি করা হয়। সেই অভিযোগে কংগ্রেসের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।

ওই ঘটনার কয়েক দিন পর দলের কোষাধ্যক্ষ অজয় মাকেন জানিয়েছিলেন, কংগ্রেসের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে ৬৫ কোটি রুপি জবরদস্তি তুলে নেওয়া হয়েছে। সেটা করা হয়েছে, যখন কংগ্রেসের আবেদন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ছিল। পরে ট্রাইব্যুনাল কংগ্রেসের আবেদন খারিজ করে দেয়।

অজয় মাকেন বলেন, কংগ্রেসের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ২৮৫ কোটি রুপি রয়েছে। অথচ দল তা ব্যবহার করতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে ১৯৯৪–৯৫ সালের হিসাবের নতুন নোটিশ গত সপ্তাহে দলকে পাঠানো হয়েছে। এই হারে চলতে থাকলে সরকার গান্ধীজির আমলে পৌঁছে যাবে, যখন জমনালাল বাজাজ দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। সেই সময়কার হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠাবে। ব্যাংক হিসাব জব্দ করে দেবে। সুদে আসলে জরিমানা আদায় করবে। উদ্দেশ্য একটাই। ভোটের আগে কংগ্রেসকে ভাতে মারা।

সংবাদ সম্মেলনে রাহুল বলেন, আয়কর বিভাগে হিসাব জমা দেওয়ার বিষয়ে যে বিলম্ব হয়েছিল, এক মাস আগেই তার মীমাংসা হয়ে গেছে। এখন যা করা হচ্ছে, তা ভোটের দিকে নজর রেখে। আয়কর বিভাগের একটা হিসাবে গরমিল মাত্র ১৪ লাখ রুপি। অথচ শাস্তি? অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করা দেওয়া।

রাহুল বলেন, ‘এসব করতে গিয়ে আমাদের একটা মাস ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়েছে। এটা জঘন্য অপরাধ। সেই অপরাধ করছেন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অথচ আদালত বা নির্বাচন কমিশন কেউই কিছু বলছে না। তাঁরা শুধু কংগ্রেসের ব্যাংক হিসাবই জব্দ করেননি, গোটা দেশের গণতন্ত্রকেই জব্দ করেছেন। আমরা না পারছি বিজ্ঞাপন দিতে, না পারছি নেতাদের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতে।’

রাহুল বলেন, ভারত বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ, এই ধারণাই এখন মিথ্যা। ভারতে গণতন্ত্র একেবারেই নেই।