মুম্বাইয়ে ইন্ডিয়া জোটের সংবাদ সম্মেলনে নেতারা। ১ সেপ্টেম্বর
ছবি: এএনআই

জুলাইয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠিত হওয়ার পর জোটের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হতে চলেছে আজ মঙ্গলবার। ছয়টি রাজ্যের সাতটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হবে আজ।

এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ আসন জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়িতে নির্বাচনের পাশাপাশি ত্রিপুরার দুটি আসন বক্সানগর ও ধনপুরে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। আরও যে চারটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে—উত্তর প্রদেশের ঘোষি, উত্তরাখন্ডের বাগেশ্বর, ঝাড়খন্ডের ডুমরি ও কেরালার পুথুপল্লী।

ছোট নির্বাচন হলেও এই ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম। এর কারণ দুটি। অ-বিজেপি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালা ছাড়া বাকি চার রাজ্যে ইন্ডিয়া জোটের দলগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি। অতীতের নির্বাচনে প্রতিটি আসনেই কংগ্রেস ওই রাজ্যের স্থানীয় দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল।

স্থানীয় দল পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল। জুলাইয়ে ইন্ডিয়া জোট গঠিত হওয়ার পর এই প্রথম দেখা গেল যে তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি। অর্থাৎ তারা বিজেপির বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়ছে। যেমন ত্রিপুরার দুটি আসন বক্সানগর ও ধনপুরে প্রার্থী দেয়নি তৃণমূল কংগ্রেস এবং স্থানীয় দল টিপ্রা মথা।

গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এ দুই দলই প্রবল উৎসাহে সিপিআইএম ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচার করেছিল। এতে অন্তত ধনপুর আসনটি হারিয়েছিল সিপিআইএম-কংগ্রেস জোট। টিপ্রা মথা অবশ্য ইন্ডিয়া জোটে নেই।

উত্তর প্রদেশে ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের দল সমাজবাদী পার্টির বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল কংগ্রেস। আজকের উপনির্বাচনে দেয়নি। উত্তরাখন্ডের বাগেশ্বরে দিল্লির দল আম আদমি পার্টির (আপ) বিরুদ্ধে লড়েছিল কংগ্রেস, যদিও দুই পক্ষেরই প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল বিজেপি। এবারে আপের আগেরবারের প্রার্থী বসন্ত কুমারকে কংগ্রেসে নিয়ে এসে মনোনয়ন দিয়েছে কংগ্রেস। আপও আর কোনো প্রার্থী দেয়নি। স্পষ্টই বোঝা যায় তাদের মধ্যে অন্তত উত্তরাখন্ডে একটা সমঝোতা হয়েছে, যদিও এখনো তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে বিবৃতি দিচ্ছেন।

ঝাড়খন্ডের ডুমরিতে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি নিতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড, যদিও তা ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দিয়েছিল। সে সময় জনতা দল ইউনাইটেড পাঁচ হাজারের বেশি ভোটও পেয়েছিল। হয়তো সেই কারণেই বিজেপিও তাদের সহযোগী দল অল ঝাড়খন্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়নের বিরুদ্ধেও প্রার্থী দেয়নি। ২০১৯-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল।

কেরালায় অবশ্য চিত্র ভিন্ন, সেখানে ইন্ডিয়ার তিন শরিক রাজ্যে ক্ষমতাসীন সিপিআইএম, কংগ্রেস ও আপ সবাই প্রার্থী দিয়েছে। কারণ, কেরালায় সিপিআইএমের মূল প্রতিপক্ষ বিজেপি নয় কংগ্রেস। ফলে সেখানে এমনটাই আশা করা গিয়েছিল।

কেরালার মতো একই চিত্র পশ্চিমবঙ্গের ধুপগুড়িতেও। এখানে লড়াই তিন পক্ষের মধ্যে —রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিআইএম-কংগ্রেস ও বিজেপি। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সম্ভবত বিজেপির, কারণ, ধুপগুড়ি আসনটি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী বিষ্ণুপদ রায়। তাঁর মৃত্যুর কারণেই ওই আসনে নির্বাচন হচ্ছে।

২০২১ সালে তৃণমূল আসনটি মাত্র চার হাজার ভোটে বিজেপির কাছে হেরেছিল। এরপর গত দুই বছরে একাধিক বিধানসভা এবং পুরসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে, বিজেপিকে দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে ওপরে উঠে আসছে সিপিআইএম—কংগ্রেস জোট।

সেই ধারা অব্যাহত থাকলে বিজেপি আগেরবারের জেতা আসনটি হারাতে পারে, যা আগামী ভোটের একটা দিকনির্দেশনা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ঠিক তিন দিন আগে গত নির্বাচনে তৃণমূলের বিজিত প্রার্থী মিতালী রায় দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এটা তৃণমূলকে ধাক্কা দেবে বলে স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য। ধুপগুড়ির গুরুত্ব বুঝে সব দলই এখানে সব শক্তি নিয়ে প্রচার করেছে, যা সাধারণত একটা উপনির্বাচনে দেখা যায় না।

চলতি মাসের ৮ তারিখ নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করবে ইন্ডিয়া জোট ছয় রাজ্যের উপনির্বাচনে সামান্য এগোতে পারল, নাকি আরও পিছিয়ে পড়ল।