ট্রাম্পের শুল্কে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে চিংড়ি রপ্তানিতে ক্ষতি ২৫ হাজার কোটি রুপি

ভারতের বিশাখাপত্তনম শহরের উপকণ্ঠে একটি কারখানার চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটে চিংড়ি বাছাই করছেন শ্রমিকেরা। ১০ এপ্রিল, ২০২৫ছবি: রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক আরোপের প্রভাব ভারতের রপ্তানি খাতে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। দেশটির অন্ধ্রপ্রদেশে চিংড়ি রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশ ক্রয়াদেশ এরই মধ্যে বাতিল হয়েছে গেছে। ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে চিংড়ি রপ্তানিতে এক অন্ধ্রপ্রদেশে প্রায় ২৫ হাজার কোটি রুপির লোকসান গুনতে হতে পারে।

আজ সোমবার দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, নতুন শুল্ক আরোপের পর দু হাজার কনটেইনার পণ্য রপ্তানির ওপর ৬০০ কোটি রুপি শুল্কের বোঝা চেপেছে।

এ পরিস্থিতিতে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু নিজের রাজ্যের মাছ ও চিংড়িচাষিদের বাঁচাতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবার সহায়তার আবেদন করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে তাঁরা চরম দুরবস্থায় পড়েছেন।

আজ সোমবার দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, নতুন শুল্ক আরোপের পর দু হাজার কনটেইনার পণ্য রপ্তানির ওপর ৬০০ কোটি রুপি শুল্কের বোঝা চেপেছে।

ভারতের চিংড়ি রপ্তানির ওপর এখন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ৫৯ দশমিক ৭২ শতাংশে পৌঁছেছে। এর মধ্যে আগে আরোপ করা ২৫ শতাংশ শুল্কের ওপর ট্রাম্প বাড়তি আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আছে। সঙ্গে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ কাউন্টারভেইলিং শুল্ক (ভর্তুকি প্রতিরোধে আরোপিত শুল্ক) এবং ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক যোগ হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী নাইডু এখন পণ্য ও পরিষেবা করে (জিএসটি) ছাড় দেওয়া এবং রাজ্যের মৎস্যচাষিদের জন্য আর্থিক সুবিধা প্যাকেজ বৃদ্ধি করার কথা বলেছেন।

মৎস্যচাষিদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে নাইডু কেন্দ্রীয় সরকারকে জাতীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বানও জানিয়েছেন। এই খাতে দেশীয় ভোক্তা বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধও করেন তিনি।

এ বিষয় নিয়ে ভারতীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং মৎস্যমন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিংয়ের কাছে আলাদা আলাদা চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী নাইডু।

ট্রাম্পের শুল্কে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে ভারতের চিংড়ি রপ্তানি খাতে।
... এন চন্দ্রবাবু নাইড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী

মুখ্যমন্ত্রী নাইডু অর্থমন্ত্রীকে জিএসটি ও আর্থিক সহায়তার বিষয়গুলো দেখার অনুরোধ করেছেন, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীকে মৎস্য খাতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে চুক্তি এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং মৎস্যমন্ত্রীকে দেশীয় বাজার সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, অন্ধ্রপ্রদেশে মৎস্যচাষি এবং এই খাতের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো ভীষণ দুরবস্থার মুখে পড়েছে।

মৎস্যচাষিদের রক্ষা করতে রাজ্য সরকার থেকে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, নাইডু সেগুলোও ব্যাখ্যা করেন।

আরও পড়ুন

ভারতের মোট চিংড়ি রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ এবং মোট সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানির প্রায় ৩৪ শতাংশ আসে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে, বার্ষিক রপ্তানি মূল্য প্রায় ২১ হাজার ২৪৬ কোটি রুপি। প্রায় আড়াই লাখ মৎস্যচাষি পরিবার এবং ৩০ লাখ মানুষ এ খাতের ওপর নির্ভরশীল।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চিংড়ি ও সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানি করে ভারত ৬৩ হাজার ৯৬৯ কোটি রুপি আয় করেছিল।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চিংড়ি ও সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানি করে ভারত ৬৩ হাজার ৯৬৯ কোটি রুপি আয় করেছিল।

চন্দ্রবাবু নাইডু বলেন, ট্রাম্পের শুল্কে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে ভারতের চিংড়ি রপ্তানি খাতে।

আরও পড়ুন

অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব ও রাশিয়ার মতো দেশে নতুন বাজার খুঁজে নিয়ে এবং রপ্তানি বৃদ্ধিতে এসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন।

এ ছাড়া নাইডু রপ্তানিকারকদের জন্য অন্তর্বর্তী আর্থিক সহায়তা, শুল্ক বা করে ছাড়ের বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য জানতে চেয়েছেন। বলেছেন, রপ্তানিকারকেরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে সামুদ্রিক পণ্য পাঠাতে প্রস্তুত।

আরও পড়ুন