পয়লা বৈশাখে কলকাতায় মঙ্গল শোভাযাত্রা

আনন্দপুর থেকে কসবার অ্যাক্রোপলিশ মল পর্যন্ত মঙ্গল শোভযাত্রা বের করা হয়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে আজ বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ উদ্‌যাপিত হয়েছে। করোনার কারণে ১৪২৮ সালে নববর্ষ উদ্‌যাপনে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছিল ছোট আকারে। তবে এবার বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবেই নববর্ষ পালন করা হয়েছে। ঢাকার আদলে বের করা মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের ছোঁয়া। নববর্ষের প্রথম দিন দাবি উঠেছে, এবার থেকে পয়লা বৈশাখ হোক বাঙালির জাতীয় উৎসব।

কলকাতার ভাষা ও চেতনা সমিতি এবং নবজাগরণ যৌথভাবে নববর্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস চত্বরের ছাতিমতলার রাণুছায়া মঞ্চে হয় অনুষ্ঠান। নাচ–গান, কবিতা পাঠ আর নাটকের মাধ্যমে শুরু হয় নববর্ষের অনুষ্ঠান। এ সময় সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়।

গতকাল বিকেল থেকে ভাষা ও চেতনা সমিতির সদস্যরা কলকাতার ফাইন আর্টস চত্বরের সড়কে আলপনা আঁকেন। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে পরিবেশন করা হয় পান্তা ভাত, শুঁটকি ও আম পোড়া শরবতের। ছিল মাছ–ভাত ডাল আর পোস্তরও ব্যবস্থা।

সুকান্ত সেতু থেকে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা নেচে–গেয়ে মাতিয়ে রাখে বিভিন্ন বয়সী শিশুরা
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান থেকে যাদবপুরের সুকান্ত সেতু পর্যন্ত বড় শোভাযাত্রা বের হয়েছে। এই মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন কলকাতার রাস্তার এক বেহালাবাদক রহমত ভাই। তিনি বেহালা বাজিয়ে খেলনা বেহালা বিক্রি করেন কলকাতার রাস্তায়। দ্বিতীয়টি বের হয় সুকান্ত সেতু থেকে আর শেষ হয় ঢাকুরিয়ায়। আয়োজন করেন বামপন্থী সংস্কৃতিসেবীরা। এ ছাড়া কলকাতায় আজ আরও বেশ কয়েকটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রুটগুলো হচ্ছে আনন্দপুর থেকে কসবার অ্যাক্রোপলিশ মল পর্যন্ত, ত্রিধারা ক্লাব থেকে দেশপ্রিয় পার্ক পর্যন্ত, গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন থেকে দেশপ্রিয় পার্ক পর্যন্ত, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ থেকে দক্ষিণায়ন পর্যন্ত।

কলকাতার মঙ্গল শোভাযাত্রা গবেষণা ও প্রসার কেন্দ্রের সম্পাদক বুদ্ধদেব ঘোষ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমরাই কলকাতায় ২০১৭ সালে প্রথম বাংলাদেশের অনুপ্রেরণায় প্রথম কলকাতায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করি। এখন পর্যন্ত আমরা আমাদের পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলার ১০টি জায়গা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করতে পেরেছি। আগামী বছরের মধ্যে আমরা আমাদের রাজ্যের সব জেলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করতে পারব।’

গাঙ্গুলিবাগান থেকে বের করা শোভাযাত্রায় ছিল বৈচিত্র্য
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল হাতি, ঘোড়া, প্যাঁচা, ময়ূর, বাঘ, সিংহ, দক্ষিণ দিনাজপুরের বসুমারির মুখোশ, পটচিত্র, পাখা, বাংলার সরা, কুলোসহ আরও অনেক কিছু্। এ ছাড়া ছিল নৌকা, দোতারা, বাঁশি, বাংলার ঢোল, ছিল রাস্তায় নানা রঙের আর নানা লেখার আলপনা।

শিশুরা এদিন পথে নেমে নেচেছে। গান গেয়েছে। আবৃত্তি করেছে। বিভিন্ন মুখোশ পরেছে। হাতে নিয়েছে বাঙালি ঐতিহ্যের নানা পটচিত্র, প্রতীক। প্রতিটি শোভযাত্রায় পা মিলিয়েছে আবালবৃদ্ধবণিতারা। আরও ছিল মুর্শিদাবাদের জারিগান, বর্ধমানের হাপু গান, বোলান গান, বাউল গান, বুলবুলি গান।