নারী কুস্তিগিরদের যৌন হয়রানি, দুই বছর আগে জানতেন মোদি

দিল্লির যন্তর-মন্তরে বিক্ষোভকালে বিনেশ ফোগাতকে আটক করেন আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। ২৮ মে তোলা
ছবি: এএনআই

ভারতে কুস্তিগিরদের যৌন হয়রানির হেস্তনেস্ত করতে বিজেপির ওপর চাপ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। চাপ বাড়িয়েছেন বিজেপির নেতারাও। এবার জানাজানি হয়েছে, এক নারী কুস্তিগির যৌন হেনস্তার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই দুই বছর আগে জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী প্রতিকারের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে কিছুই করা হয়নি।

সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের পর গত ২৮ এপ্রিল দিল্লি পুলিশ ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে যে দুটি এফআইআর দাখিল করে, তাতে এই বিষয়টি জানা গেছে। এফআইআরে এক নারী কুস্তিগির লিখেছেন, দুই বছর আগে এক অনুষ্ঠানে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, ব্রিজ ভূষণের হাতে তাঁরা শারীরিক ও মানসিকভাবে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। তা শুনে প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ক্রীড়া মন্ত্রণালয় দ্রুত প্রতিকার করবে। মন্ত্রণালয় থেকে তাঁদের ফোন করা হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি।

তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা সদস্য মহুয়া মৈত্র এফআইআরের ওই বয়ান তুলে ধরে এক টুইটে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করে বলেন, ‘আশ্বাস দিয়েও আপনি কিছুই করেননি। আপনি সব প্রতিশ্রুতি ভেঙেছেন।’ এর আগেও মহুয়া বিজেপির নারীনেত্রীদের আক্রমণ করে বলেছিলেন, ‘কোথায় বিজেপির নারী ব্রিগেড? দলের শাশুড়ি ও বহুরা? কুস্তি ফেডারেশন নিয়ে কেন এই নীরবতা?’

বিজেপির নেতারাও অবশেষে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। যেমন মহারাষ্ট্রের বিড কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত লোকসভার সদস্য প্রীতম মুন্ডে। তিনি বলেছেন, কোনো নারী এই ধরনের অভিযোগ আনলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। অভিযোগ কিছুতেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

প্রীতম মুন্ডের বোন পঙ্কজা মুন্ডেও সরব। তাঁদের প্রয়াত পিতা গোপীনাথ মুন্ডে ছিলেন রাজ্যের জনপ্রিয় নেতা। বিজেপির জাতীয় সম্পাদক পঙ্কজা বলেছেন, ‘বিজেপি খুব বড় একটা দল। আমি এই পার্টির সদস্য। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, এই দল বোধ হয় আমার নয়।’

মুন্ডে বোনদের মতোই সরব হয়েছেন উত্তর প্রদেশের বিজেপি নেত্রী সাবেক মন্ত্রী মানেকা গান্ধী। উত্তর প্রদেশের আরও কেউ কেউ দলের অভ্যন্তরে বলছেন, ব্রিজ ভূষণকে আড়াল করার কারণে জনমত ক্রমেই বিজেপির বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে।

কুস্তিগিরদের সঙ্গে দিল্লি পুলিশের ব্যবহার অথবা শাসক দলের আচরণ ক্রমেই ব্যাপ্তি লাভ করছে। গত শুক্রবার ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা সরাসরি কুস্তিগিরদের পাশে এসে দাঁড়ান। সুনীল গাভাস্কার, কপিল দেব, মোহিন্দর অমরনাথ, কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তেরা এক বিবৃতিতে দমন-পীড়নের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘কুস্তিগিরেরা তাঁদের পদক গঙ্গায় বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এটা খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। এই কুস্তিগিরেরা দেশকে সম্মানিত করেছেন। দেশকে গৌরবান্বিত করেছেন। আশা করি, তাঁরা সুবিচার পাবেন।’

ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী ও সাবেক অধিনায়ক বাইচুং ভুটিয়াও কুস্তিগিরদের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান ক্রিকেট নক্ষত্রদের অধিকাংশ নীরব। একই রকম অবস্থান ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সভাপতি ও বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য রজার বিনিরও। সতীর্থ ক্রিকেটারদের বিবৃতিতে তিনি সই করেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘দক্ষ কর্তৃপক্ষ সমাধানে সচেষ্ট। খেলাধুলার সঙ্গে রাজনীতি মেশানো ঠিক নয়।’

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ছেলে জয়। বিনি বা অন্যরা তাঁর রোষে পড়তে চান না বলেই এই অবস্থান। বোর্ডের সাবেক সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও এই প্রশ্নে নিজেকে নিরাপদে রেখেছিলেন। নারী কুস্তিগিরদের আন্দোলনে কেন তিনি নীরব জানতে চাওয়া হলে কিছুদিন আগে তিনি বিষয়টা জানেন না মন্তব্য করে বলেছিলেন, ‘ওঁদের লড়াই ওঁদেরই লড়তে দিন।’

সর্বাত্মক চাপের মুখে কিছুটা পিছু হটেছেন ব্রিজ ভূষণও। আগামী সোমবার অযোধ্যায় বিশাল সমাবেশের ডাক দিয়েও পিছিয়ে এসেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছেন কৃষক আন্দোলনের নেতারা। হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষক সমাজের বিভিন্ন অংশ সমাবেশ করছে। ব্রিজ ভূষণকে গ্রেপ্তারের দাবিতে কৃষক নেতারা ৯ জুন পর্যন্ত সরকারকে সময় দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা না হলে তাঁরা দিল্লিতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবেন।