যৌন কেলেঙ্কারিতে বিপাকে বিজেপি, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নাতি জেডিএস থেকে বহিষ্কার

প্রোজ্জ্বল রেভান্নাকে কর্ণাটক রাজ্যের হাসন আসনের বর্তমান সাংসদ ও আগামী নির্বাচনে জেডিএসের প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় তিন হাজার নারীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর প্রোজ্জ্বল দেশ ছেড়ে জার্মানিতে গেছেন বলে জানা গেছে।

ভারতের লোকসভার সদস্য প্রোজ্জ্বল রেভান্না। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছেছবি: এএনআই

ভারতে যৌন নির্যাতনের এক মারাত্মক অভিযোগ নিয়ে বেজায় বিপাকে জনতা দল (জেডিএস) ও কর্ণাটক রাজ্যে তার জোটসঙ্গী বিজেপি। ওই অভিযোগে জেডিএস বহিষ্কার করেছে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার নাতি প্রোজ্জ্বল রেভান্নাকে। তিনি কর্ণাটক রাজ্যের হাসন আসনের বর্তমান সাংসদ ও আগামী নির্বাচনে জেডিএসের প্রার্থী।

প্রোজ্জ্বলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রায় তিন হাজার নারীকে যৌন নির্যাতন করেছেন। নির্যাতনের ভিডিও তৈরি করে সেই নারীদের তিনি ব্ল্যাকমেল করতেন। নির্বাচনের সময় সেসব নির্যাতনের ভিডিও গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপরেই কংগ্রেসশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া গত শনিবার এক বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেন। যৌন নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রোজ্জ্বল দেশ ছেড়েছেন। শোনা যাচ্ছে তিনি জার্মানিতে চলে গেছেন।

যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ছেলের সঙ্গে নাম জুড়ে গেছে তাঁর বাবা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এইচ ডি রেভান্নারও। রেভান্না ওই রাজ্যের হোলেনারসিপুরা কেন্দ্রের বিধায়ক। প্রোজ্জ্বলের বিরুদ্ধে যে নারী সম্প্রতি পুলিশের কাছে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন, তিনি রেভান্না পরিবারের রাঁধুনি। তাঁর অভিযোগ, ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রোজ্জ্বল তাঁকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। এমনকি তাঁর কন্যার সঙ্গেও তিনি খারাপ ব্যবহার করেছেন।

ওই নারী প্রোজ্জ্বলের বাবা রেভান্নার বিরুদ্ধেও নির্যাতনের অভিযোগ এনে বলেছেন, স্ত্রী বাড়ি না থাকলে তিনিও তাঁকে যৌন হেনস্তা করেছেন।

আগে তিনি (মোদি) প্রোজ্জ্বলকে জার্মানি থেকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন। শাস্তি দিন। তারপর মা-বোনদের মঙ্গলসূত্র কেড়ে নেওয়া নিয়ে কংগ্রেসকে গালমন্দ করুন।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, কংগ্রেস নেত্রী

প্রোজ্জ্বলের বয়স ৩৩। সব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিটি ভিডিওই নাকি নকল ও প্রযুক্তির কেরামতি করে তৈরি। কিন্তু সেই দাবি আদৌ আমল পাচ্ছে না স্রেফ বিপুল সংখ্যার জন্য। কর্ণাটকের এক বিজেপি নেতাই দাবি করেছেন, তাঁর কাছে প্রোজ্জ্বলের কুকীর্তির প্রায় তিন হাজার ভিডিও আছে। পরিচারিকা, দলীয় কর্মী, চাকরিপ্রার্থী, অভিনেত্রী—অনেকেই প্রোজ্জ্বলের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ। সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রোজ্জ্বলের দেশত্যাগের কারণে।

লোকসভা নির্বাচনের সময় এই কেলেঙ্কারি জেডিএসকে বিপাকে ফেলেছে, বিজেপিও পড়েছে চরম অস্বস্তিতে। রাজ্যের ২৮ আসনের মধ্যে ১৪টির ভোট হয়েছে ২৬ এপ্রিল। সেই আসনগুলোর মধ্যে প্রোজ্জ্বলের হাসন আসনও ছিল। ওই ভোট পর্বের অধিকাংশ আসনই দক্ষিণ কর্ণাটকে, যেখানে জেডিএস শক্তিশালী। ২৬ এপ্রিল হওয়া সেই ভোটের ঠিক আগে এই কেলেঙ্কারির কথা জানাজানি হয়। যদিও তা তীব্র হয় ভোট হয়ে যাওয়ার পর। ৭ মে ভোট হবে উত্তর কর্ণাটকের বাকি ১৪ আসনে, যেখানে মূল লড়াই বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের।

এই কেলেঙ্কারি নিয়ে বিজেপিকে বেজায় চেপে ধরেছে কংগ্রেস। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে বলেছেন, ‘আগে তিনি (মোদি) প্রোজ্জ্বলকে জার্মানি থেকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন। শাস্তি দিন। তারপর মা-বোনদের মঙ্গলসূত্র কেড়ে নেওয়া নিয়ে কংগ্রেসকে গালমন্দ করুন।’

প্রধানমন্ত্রী মোদি কদিন আগেই কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদ কেড়ে মুসলমানদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে। এমনকি মা-বোনদের গলার মঙ্গলসূত্রও বাদ দেবে না।

প্রধানমন্ত্রী মোদি কদিন আগেই কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদ কেড়ে মুসলমানদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে। এমনকি মা-বোনদের গলার মঙ্গলসূত্রও বাদ দেবে না।

বিজেপি এই কেলেঙ্কারি থেকে নিজেদের বাঁচাতে তৎপর। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তাঁদের দল সব সময় ‘মাতৃশক্তির’ সঙ্গে রয়েছে। কর্ণাটকে কংগ্রেস ক্ষমতায়। তারা কেন এত দিন ব্যবস্থা নেয়নি, সে জবাব তাদেরই দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। কেন্দ্র সে ক্ষেত্রে কিছু করে না।

কর্ণাটক সরকার সূত্রের খবর, প্রোজ্জ্বলকে দ্রুত দেশে ফিরে তদন্তের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দেবে বিশেষ তদন্তকারী দল। ইতিমধ্যে পাঁচ নারী তাঁর নামে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন। তার ভিত্তিতেই পুলিশ প্রোজ্জ্বলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

এই কেলেঙ্কারির অভিযোগে বিজেপিও জড়িয়ে পড়েছে। কারণ, তাদের স্থানীয় নেতা হোলেনারসিপুরার সাবেক বিজেপি বিধায়ক দেবরাজ গৌড়ার হাতে প্রোজ্জ্বলের যৌন ভিডিওগুলো তুলে দিয়েছিলেন তাঁরই  সাবেক গাড়িচালক কার্তিক। প্রোজ্জ্বলের বাবা জেডিএস প্রার্থী রেভান্নার কাছে ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটে হোলেনারসিপুরা আসনে হারতে হয়েছিল বিজেপি প্রার্থী দেবরাজ গৌড়াকে। দেবরাজ চাননি এবার প্রোজ্জ্বল ওই কেন্দ্রে প্রার্থী হন। রাজনৈতিক খবর, রাজ্যের বিজেপি নেতারাও প্রবল আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু জেডিএস নেতা এইচ ডি দেবগৌড়া নাতির দাবি উপেক্ষা করতে পারেননি।

প্রোজ্জ্বলের সাবেক গাড়িচালক কার্তিক এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, নির্যাতিত নারীরা যাতে সুবিচার পান, সে জন্যই তিনি ওই সব ভিডিওর পেনড্রাইভ বিজেপি নেতা দেবরাজ গৌড়ার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। কংগ্রেসের কোনো নেতার হাতে দেননি। কেন তিনি এ কাজ করলেন, জানতে চাওয়া হলে কার্তিক বলেন, রেভান্না পরিবার তাঁর কিছু জমি জবরদস্তি করে কেড়ে নিয়েছিল। দেবরাজের কাছে তাই তিনি সুবিচারের আশায় গিয়েছিলেন।