মণিপুরে বিবদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে বৈঠকে অমিত শাহ

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ
ফাইল ছবি: এএফপি

সংঘাত ও সহিংসতায় থমথমে ভারতের মণিপুর রাজ্য সফরে গেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গতকাল সোমবার তাঁর তিনদিনের এ সফর শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকারের সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিন রাজ্যের রাজধানী ইমফলে বিবদমান পক্ষের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন তিনি।

অমিত শাহ মণিপুরসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।একই সঙ্গে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। উপজাতি নয় এমন জাতিগোষ্ঠী যেমন মেইতেই অপরদিকে কুকি উপজাতি সমাজের অন্তর্গত বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন নাগা গোষ্ঠীর সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সফরকে বিবদমান দুই সম্প্রদায় — মেইতেই ও কুকিরা স্বাগত জানিয়েছে। তিনদিনের সফর শেষে তিনি সংবাদ সম্মেলনে করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে অমিত শাহ শুধু বিবদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে বৈঠকই করবেন না একই সঙ্গে যেসব জায়গায় সহিংসতা চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছিল এবং এখনো যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে এমন জেলাগুলো সফর করতে পারেন। এর মধ্যে আছে রাজ্যের চূড়াচাঁদপুর, কাংকোকপি ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মোরে জেলা।

সরকারি হিসাবে, মণিপুরে গত ৩ মে থেকে চলা সহিংসতায় ১০৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো যদিও বলেছে, ১১৫ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারাও বলছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হবে। এ ছাড়া প্রায় ৩০০টি গির্জা পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিবদমান দুই পক্ষের একটি মেইতেই সম্প্রদায়। মেইতেইদের সংগঠন কো–অরডিনেটিং কমিটি অন মণিপুর ইন্টেগ্রিটি (কোকোমি) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সফরকে স্বাগত জানিয়েছে।একই সঙ্গে সংগঠনটি বলেছে, ‘মাদক সন্ত্রাসীদের আগ্রাসন বন্ধ না করা গেলে মণিপুরে শান্তি ফিরবে না।’

মণিপুরে মাদক তৈরি ও চোরাচালান বেড়েছে দাবি করে সরকার বলছে, মিয়ানামার থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের কারণে মাদকের ব্যবসা বেড়েছে রাজ্যে। এর নেপথ্যে কুকি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত আছে বলেও অভিযোগ করছে সরকারের একাংশ। তবে কুকিরা এ বক্তব্যে আপত্তি জানাচ্ছে।

কুকি সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বয়ক সংগঠন কেএনও (কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন) এই বক্তব্যে আপত্তি জানালেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে স্বাগত জানিয়েছে। অমিত শাহর এ সফর কুকিদের আশ্বস্ত করবে ধারণা কেএনওর। কেএনওর সঙ্গে ১৫ বছর ধরে শান্তি আলোচনা চলছে সরকারের।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর কেন্দ্র করে মণিপুরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, পূর্ব ইমফলে অন্তত ২২ জনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে তারা।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার জন্য মণিপুর হাইকোর্ট সুপারিশ করার পর ৩ মে থেকে সহিংসতা চলছে। এতে নষ্ট হয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। ঘরবাড়ি ছেড়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও।

সোমবার কুকি জনগোষ্ঠীর অন্তত ৫০০ নারী দিল্লিতে বিক্ষোভ করেন। কুকিসহ অন্যান্য উপজাতি গোষ্ঠীর নারীদের দাবি, মণিপুরে তাঁদের সম্প্রদায়ের লোকজন ‘জাতিগত নিধনের’ মুখে রয়েছেন।