পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির নিকটবর্তী ফাঁসিদেওয়া রেলস্টেশনের কাছে আজ সোমবার সকালে দুই ট্রেনের সংঘর্ষে কতজন হতাহত হয়েছেন, তা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, দুর্ঘটনায় নয়জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরও ২৫ জন। কিন্তু স্থানীয় পুলিশের বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যম নিহতের সংখ্যা ২৫ এবং আহতের সংখ্যা ৫৪ বলে দাবি করেছে।
দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন দুটির মধ্যে একটি ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেন। এটি আসামের শিলচর স্টেশন থেকে কলকাতায় শিয়ালদহ স্টেশনে আসছিল। এতে ১ হাজার ১০০ যাত্রী ছিলেন। আর অন্য ট্রেনটি ছিল পণ্যবাহী।
দুর্ঘটনার কারণ নিয়েও ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। শুরুতে দাবি করা হয়েছিল, পণ্যবাহী ট্রেনের চালক সিগন্যাল অমান্য করায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জানা যায়, দুর্ঘটনার জন্য পণ্যবাহী ট্রেনের চালক দায়ী নন। আজ সকাল ৫টা ৫৫ মিনিট থেকে রেললাইনের রানীপাত্র থেকে ছত্তরহাট পর্যন্ত অটোমেটিক সিগন্যাল ব্যবস্থা অকার্যকর ছিল। এই পরিস্থিতিতে স্টেশনমাস্টারদের ম্যানুয়াল মেমো ইস্যু করে গাড়ি চালানোর ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ট্রেন চালাতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
তবে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন, রেলওয়ে নিরাপত্তা কমিশন দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে। প্রতিবেদন হাতে এলে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়া স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনায় পড়ে আসামের শিলচর স্টেশন ছেড়ে আসা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেন। ট্রেনটি শিলিগুড়ির নিকটবর্তী ফাঁসিদেওয়া রেলস্টেশনে পৌঁছালে একই লাইন ঢুকে পড়ে একটি পণ্যবাহী ট্রেন। পণ্যবাহী ট্রেনটি দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে জোরে ধাক্কা দেয়। এতে কাঞ্চনজঙ্ঘার পেছনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর মধ্যে একটি পণ্যবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনের ওপর ওঠে যায়। তবে লাইনচ্যুত বগিগুলোতে কোনো যাত্রী ছিলেন না।
দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গার্ড ও পণ্যবাহী ট্রেনের চালক রয়েছেন।
আহত ব্যক্তিদের নিকটবর্তী উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন দার্জিলিংয়ের সংসদ সদস্য রাজু বিস্তা। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবও দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে যাওয়ার কথা রয়েছে। তিনি ইতিমধ্যেই হতাহত ব্যক্তিদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন।
দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি নিহতের ব্যক্তিদের পরিবারপ্রতি ২ লাখ ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ৫০ হাজার রুপি করে আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছেন।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই দুর্ঘটনার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদি সরকারের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন।
যাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন, একই লাইনে যাত্রীবাহী ট্রেন ও মালগাড়ি কীভাবে এসে পড়েছে? অনেকে এটাকে ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন। দুর্ঘটনার ফলে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে। কিছু ট্রেন ভিন্ন লাইনে চলাচল করছে।
২০২৩ সালের জুনে পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওডিশায় একটি পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেনের সংঘাতে প্রায় ২৮৮ জন প্রাণ হারান। ভারতের ইতিহাসে দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সেটি ছিল সবচেয়ে বড় ট্রেন দুর্ঘটনা।