ভারতের পার্লামেন্টে সংবিধান নিয়ে বিতর্ক
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার কি ভারতের সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ দুটি খারিজ করার পথে এগোচ্ছে? সেই কারণেই কি সংসদ সদস্যদের দেওয়া সংবিধানের প্রতিলিপিতে ওই দুই শব্দ রাখা হয়নি? প্রশ্নটি তুলে ধরেছেন লোকসভার বিরোধী নেতা কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
বুধবার এ অভিযোগ জানিয়ে অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, বিজেপির উচিত এর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেওয়া। জবাবে সংসদীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এই বিতর্ক ‘অনাবশ্যক’ জানিয়ে বলেছেন, এর পেছনে কোনো দুরভিসন্ধি নেই। সবাইকে সংবিধানের যে প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে, তা দেশের প্রথম সংবিধান। তারপর সেই সংবিধানে বহু সংশোধন আনা হয়েছে।
বিরোধীদের পাল্টা প্রশ্ন, তা হলে সেই সংবিধান কেন দেওয়া হলো? বর্তমান সংবিধান দেওয়াই তো উচিত ছিল।
নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে সব সংসদ সদস্যকে একটি করে ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। তাতে অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে ছিল সংবিধানের প্রতিলিপি। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি যে সংবিধান গৃহীত হয়েছিল, সেটিই সদস্যদের দেওয়া হয়। সেই সংবিধানের প্রস্তাবে ভারত ছিল ‘সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’। পরে ১৯৭৬ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ৪২তম সংশোধনী এনে প্রস্তাবে ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দুটি যোগ করেন। আদি সংবিধানের সেই কপিই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়।
বিরোধীরা বিষয়টির উল্লেখ করার পাশাপাশি সরকারের অভিপ্রায় সম্পর্কে সন্দেহও প্রকাশ করেন। অধীর রঞ্জন চৌধুরী সে প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কাউকে সংবিধান দিতে হলে বিদ্যমান সংবিধানই দেওয়া দরকার। কেন আদি সংবিধান দেওয়া হবে যার কোনো অস্তিত্বই নেই? বিষয়টি যথেষ্ট সন্দেহজনক।
কংগ্রেস নেতা কে সি বেনুগোপাল বলেন, বিজেপির অবচেতনে যা রয়েছে, সেটাই এই কাজের মধ্য দিয়ে প্রকাশ হয়ে গেছে। তারা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র তুলে দিতে চায়। দেশকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাও তারা চায় না। সেটা বোঝাতে চতুরভাবে ওরা এটা করেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা একটা বার্তা পাঠাতে চেয়েছে।
সংসদীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল অবশ্য বলেন, বিরোধীরা ছাঁইপাশ ভেবে বসে রয়েছেন। প্রথম সংবিধানের কপিই সবাইকে দেওয়া হয়েছে। সেই ব্যাখ্যাই দলের মুখপাত্র দিয়েছেন।
দলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র রাজু বিস্তের ব্যাখ্যা, সংসদ সদস্যদের দেওয়া হয়েছে সংবিধান সভা, যে সংবিধানকে স্বীকৃতি দিয়েছিল সেই কপি। এতে বিতর্কের কিছু নেই।
বিহারের বিজেপি নেতা ও রাজ্যের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদির বক্তব্যও তা। তাঁর কথায়, এই বিতর্ক অনাবশ্যক ও অহেতুক। যদিও তাঁর তির্যক মন্তব্য, এখন কি সমাজতন্ত্রের কোনো প্রাসঙ্গিকতা আছে?