রাহুল গান্ধীর সাজা স্থগিত হলো, ফেরত পাবেন লোকসভার সদস্যপদ

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী
ছবি: এএনআই

মোদি পদবি মামলায় অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি মিলল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি আর গাভাই, পি এস নরসিংহ ও সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ রাহুলের সাজা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।

সাজা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়ার ফলে রাহুল তাঁর লোকসভার সদস্যপদ ফেরত পাওয়ার অধিকারী হবেন। ভোটেও দাঁড়াতে পারবেন। তবে লোকসভার সদস্যপদ কবে ফেরত পাবেন, তা নির্ভর করবে ওই কক্ষের স্পিকার ওম বিড়লার ওপর। আগামী সপ্তাহের শুক্রবার সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শেষ হচ্ছে।

সুরাট নিম্ন আদালতের রায়ের পরদিনই রাহুলের সদস্যপদ খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে সরকারি বাসভবন থেকেও উৎখাত করা হয়।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায় আসার পর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি টুইট করা হয়। রাহুল গান্ধীর হাসিমুখ ছবির সঙ্গে হিন্দিতে লেখা হয়, ‘এটা ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালোবাসার জয়। সত্যমেব জয়তে।’

রায়ের পর রাহুল কংগ্রেস সদর দপ্তরে যান। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘যা-ই হোক না কেন, আমার কর্তব্য অপরিবর্তিত থাকবে। ভারতের ঐতিহ্য ও পরম্পরা রক্ষা করে যাব।’

সাজা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়ার সময় বিচারপতি গাভাই শুক্রবার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা কিংবা দুটিই। নিম্ন আদালতের বিচারপতি সর্বোচ্চ সাজায় দণ্ডিত করেছেন। কিন্তু কেন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হচ্ছে, তার সপক্ষে একটিও যুক্তি দেখাননি। শুধু ভর্ৎসনা করেছেন। তিরস্কার করেছেন। উপদেশ দিয়েছেন।

বিচারপতি গাভাই এই প্রসঙ্গে বলেন, রাহুলকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে বলেই জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাঁর লোকসভার সদস্যপদ খারিজ হয়েছে। সাজা এক দিন কম হলে ওই ধারা প্রযোজ্য হতো না। তিনি বলেন, এ ধরনের জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার সময় কারণ দর্শানো উচিত। কিন্তু নিম্ন আদালত, এমনকি হাইকোর্টও আবেদন খারিজ করা নিয়ে গাদা গাদা পৃষ্ঠায় বহু কিছু লিখেছেন, কিন্তু কোনো কারণ দেখাননি।

তিন বিচারপতির বেঞ্চ আরও এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেছেন। তাঁরা নির্বাচকদের অধিকারের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। বিচারপতিরা বলেন, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারা প্রয়োগের ফলে শুধু নির্বাচিত সদস্যের অধিকারই খর্ব হয় না, তাতে ওই কেন্দ্রের ভোটারদের অধিকারও খর্ব হয়। নিম্ন আদালতের কারণ না দর্শানোর বিষয়ের পাশাপাশি নির্বাচকদের অধিকারের প্রশ্ন বিবেচনা করে বিচারপতিরা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে দেওয়া সাজা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।

সাজা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়ার সময় বিচারপতিরা অবশ্য বলেন, রাহুল তাঁর ভাষণে যে ধরনের মন্তব্য করেছিলেন, তা রুচিসম্মত নয়। এমন ধরনের ভাষণ যাতে না হয়, সে জন্য সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালে রাহুল গান্ধী ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের নির্বাচনী প্রচারে কর্ণাটকের কোলার জেলায় এক জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় মোদি পদবি-সম্পর্কিত ওই মন্তব্য করেছিলেন। দুর্নীতির মামলায় জড়িত পলাতক নীরব মোদি, ললিত মোদির নাম উল্লেখ করে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, চোরদের পদবি কেন মোদি হয়। ওই ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে গুজরাটের বিজেপি নেতা পূর্ণেশ মোদি সুরাট জেলা আদালতে রাহুলের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মানহানির অপরাধে মামলা ঠোকেন। সেই মামলায় তাঁর দুই বছরের সাজা হয়। ফলে রাহুল লোকসভার সদস্যপদও খোয়ান।

এরপর সাজা স্থগিত রাখার জন্য রাহুল প্রথমে সুরাটের দায়রা আদালত ও পরে গুজরাট হাইকোর্টে আবেদন জানান। দুই আদালতেই তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।

আজ রাহুলের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে বলেন, সাজা স্থগিত রাখা না হলে বাক্‌স্বাধীনতা, মতামত প্রকাশ, স্বাধীন চিন্তাভাবনার অধিকার কারও থাকবে না। সার্বিকভাবে কণ্ঠ রোধ হবে। তিনি বলেন, সাজা দেওয়ার সময় বিচারকেরা বলেছিলেন, ওই ভাষণ ১৩ কোটি মোদি পদবিধারীর পক্ষে অসম্মানজনক। অথচ অভিযোগকারী পূর্ণেশ মোদির পদবি আদৌ মোদি নয়। তিনি নিজেই বলেছেন, তিনি মোধ বণিক সমাজের প্রতিনিধি। তা ছাড়া ভাষণে যাঁদের নাম করা হয়েছিল, তাঁরাও কেউ মানহানির মামলা করেননি। যাঁরা মামলা করেছেন, প্রত্যেকেই বিজেপির কর্মকর্তা।

অভিষেক মনু সিংভি বলেন, নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টের বিচারপতিরা রাহুলের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগ এনেছেন। এটা কী করে আনতে পারেন, বোধগম্য নয়। রাহুলের অপরাধ জামিনযোগ্য। তিনি কাউকে অপহরণ করেননি। ধর্ষণ করেননি। খুন করেননি। তাঁর অপরাধ সমাজের বিরুদ্ধে নয়। অথচ নৈতিক স্খলনের অভিযোগ এনে তাঁকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হলো! তিনি বলেন, হাইকোর্ট ৬৬ দিন পর রায় শোনালেন। ফলে রাহুল লোকসভার দুটি অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারেননি।