অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে নতুন কলহে বিজেপি–কংগ্রেস

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ছবি : রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের ভারত সফরকে কেন্দ্র করে নতুন কলহে জড়াল শাসক বিজেপি ও বিরোধী কংগ্রেস। বিজেপি এই সফরকে ‘ক্রিকেট কূটনীতির’ অঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করলেও কংগ্রেস কটাক্ষ করল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘আমিত্বের’ প্রচারকে। বলল, এটা হলো আত্মমগ্নতার চূড়ান্ত রূপ।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের আহমেদাবাদ সফরে এই বিতর্কই বড় হয়ে উঠল। সেই সঙ্গে চলছে প্রবল জল্পনা আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সম্ভাবনা ঘিরে।

গুজরাটের আহমেদাবাদ শহরের মোটেরায় তৈরি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রথম নাম ছিল মোটেরা স্টেডিয়াম। পরে তার নামকরণ হয় রাজ্যের ভূমিপুত্র সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের নামে। পরবর্তীকালে পুরোনো স্টেডিয়ামের খোলনলচে পাল্টে দেওয়া হয়। নতুন স্টেডিয়াম এ মুহূর্তে বিশ্বের সর্ববৃহৎ। স্টেডিয়ামের নামও পাল্টে রাখা হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামে। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ২০২০ সালে তা উদ্বোধন করেছিলেন। বিতর্কের শুরুও তখন থেকে। জীবদ্দশায় নিজের নামে স্টেডিয়ামের নামকরণ করায় তখন থেকেই প্রধানমন্ত্রী মোদি ‘আত্মমগ্ন’ বলে সমালোচিত। বৃহস্পতিবার সেই বিতর্ক নতুনভাবে মাথাচাড়া দিল।

ওই স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার শুরু হয় ভারত-অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ ক্রিকেট টেস্ট ম্যাচ। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বছরকে স্মরণীয় করে তুলতে দুই প্রধানমন্ত্রী মোদি ও আলবানিজ খেলা শুরুর আগে স্টেডিয়ামে আসেন। রথের মতো সাজানো গাড়িতে চেপে মাঠ ঘোরেন। অস্থায়ী মঞ্চে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ও ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি রজার বিনি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বিসিসিআইয়ের সচিব জয় শাহ। মোদির হাতে তুলে দেওয়া হয় ফ্রেমে বাঁধানো মোদিরই একটি ছবি।

কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ প্রথম টুইটে বলেন, নিজের জীবদ্দশায় নিজের নামে স্টেডিয়ামের নামকরণ করে তাতে প্রদক্ষিণ করা আত্মমগ্নতার চূড়ান্ত রূপ। বিসিসিআই সচিব ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর পুত্র জয় শাহর প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানানোর ক্লিপিং জুড়ে জয়রাম দ্বিতীয় টুইটে বলেন, আত্মমগ্নতা অবিরাম চলছে। বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান অমিত মালব্য অবশ্য কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। পাল্টা টুইটে তিনি বলেন, ক্রিকেট কূটনীতি কাজে আসে।

রাজনৈতিক এই চাপান-উতোর ছাপিয়ে অবশ্য বড় হয়ে উঠেছে অন্য এক কৌতূহল। গুজরাটে থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে বিতর্কিত শিল্পপতি গৌতম আদানির দেখা হচ্ছে কি না।

অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছের শিল্পপতি গুজরাটের ভূমিপুত্র গৌতম আদানির বিপুল ব্যবসা। ওই মহাদেশে আদানি গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে কারমাইকেল কয়লাখনি, সমুদ্রবন্দর ও সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। ভারতে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গত সোমবার সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, তাঁদের দেশে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আদানি গোষ্ঠীই সর্ববৃহৎ। তিনি এ কথাও বলেছিলেন, হিনডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টের কোনো প্রতিক্রিয়া তাঁদের দেশে নেই। আদানি গোষ্ঠীর কাজকর্মে কোনো প্রতিফলন পড়েনি।