জামিন পেতে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়ার অভিযোগ

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল আদালত থেকে বেরিয়ে আসছেনফাইল ছবি: এএনআই

দিল্লির তিহার কারাগারে থাকা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে আলু পুরি, মিষ্টির মতো অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি নেতা সাজিয়া ইলমি। আজ শুক্রবার তিনি অভিযোগ করেন, অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জামিন পেতে তিনি রক্তে চিনির স্তর বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এমনকি তিনি চায়ের সঙ্গে চিনিও খাচ্ছেন। নবরাত্রীর দিনে কেজরিওয়াল কোনোরকম সংযম না দেখিয়েই ব্যাপক খাওয়া দাওয়া করছেন।

এদিকে, আম আদমি পার্টির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে কারাগারে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তার দলের অভিযোগ, কারাগারে তাঁর সঙ্গে যেকোনো কিছুই হতে পারে। আজ শুক্রবার রাজ্য সভায় থাকা দলটির সদস্য সঞ্জয় সিং এক সংবাদ সম্মেলনে দলের এই অভিযোগ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে সঞ্জয় আরও বলেন, বিজেপি যেকোনো পর্যায়ে নামতে পারে, এমনকি কাউকে হত্যাও করা হতে পারে।

গত বৃহস্পতিবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) আদালতে জানিয়েছিল, টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কেজরিওয়াল প্রতিদিন আম, কলা ও মিষ্টির মতো অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার খাচ্ছেন। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জামিন নিতে বা হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তর করার জন্যই তিনি এমনটা করছেন।

উল্লেখ্য, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ইডির কর্মকর্তারা আবগারি নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত মাসে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে।

গত বৃহস্পতিবার ইডি দাবি করে, আইনি পথে জামিনের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি বাড়িতে রান্না করা বেশি চিনিযুক্ত খাবার খেয়ে রক্তে চিনির স্তর বাড়িয়ে নিচ্ছেন। ইডির বিশেষ কৌঁসুলি জোহেব হোসেন বলেন, কেজরিওয়াল অন্য খাবারের সঙ্গে আম, মিষ্টি, চিনিযুক্ত চা ও আলুপুরি খাচ্ছেন। তিনি জামিন পাওয়ার জন্য ভিত্তি তৈরি করছেন।

কেজরিওয়ালকে কারাগারে ইনসুলিন নিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে আম আদমি পার্টি অভিযোগ করে আসছে। ইডির কৌঁসুলি এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী, বন্দিকে কারাগারে ইনজেকশন দেওয়া যাবে না। এ জন্য একজন চিকিৎসা সহকারী তাঁকে সহায়তা করছে। কারাগারে তাঁকে বিষ দেওয়া হতে পারে এমন অভিযোগও ঠিক নয়। তিনি মাত্র দুদিন কারাগারের খাবার নিয়েছেন। তিনি বাড়ি থেকে আনা খাবারই গ্রহণ করছেন।

গত ২১ মার্চ ইডির হাতে আবগারি নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হন। প্রথম দফায় সাত দিন হেফাজতের মেয়াদ শেষে তাঁকে দিল্লির নিম্ন আদালতে পেশ করা হয়। সেখানে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) হেফাজতের মেয়াদ আরও সাত দিন বাড়ানোর দাবি জানায়। বিচারক চার দিন মেয়াদ বৃদ্ধি করেন। ১ এপ্রিল তাঁকে আবার হাজির করা হয়। আবগারি (মদ) নীতি মামলায় কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার বেআইনি দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছিল গত সপ্তাহে। গত সোমবার ছিল শুনানি। সুপ্রিম কোর্ট কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার নিয়ে কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) প্রতিবেদন চেয়েছেন। ২৭ এপ্রিলের মধ্যে সেই প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২৯ এপ্রিল।
আবগারি মামলায় ১০০ কোটি রুপির দুর্নীতির অভিযোগ আনলেও টাকা লেনদেনের কোনো অকাট্য প্রমাণ ইডি এখনো দাখিল করতে পারেনি। বরং আম আদমি পার্টি দেখিয়ে দিয়েছে, এই মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত সরথ রেড্ডি কীভাবে দফায় দফায় সাড়ে ৫৯ কোটি রুপির নির্বাচনী বন্ড কিনে বিজেপিকে দিয়েছে। তারপর জামিন পেয়েছে ও পরবর্তী সময়ে রাজসাক্ষী হয়েছে।

এই মামলায় এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে আম আদমি পার্টির কেজরিওয়াল, সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া, রাজ্যসভার সদস্য সঞ্জয় সিং ও বিআরএস নেত্রী কবিতাকে। একমাত্র সঞ্জয় সিং জামিন পেয়েছেন। বাকিরা কারাগারে আছেন।