দালাই লামার সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ ‘নির্ভেজাল অপরাধ’: চীন

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া (সামনের সারিতে ডান থেকে দ্বিতীয়) ও দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুসহ (বাঁ থেকে প্রথম) অন্যান্য কর্মকর্তা গতকাল রোববার তিব্বতীয় ধর্মগুরু দালাই লামার সঙ্গে সাক্ষাৎকার করেন
ছবি: তিব্বত ডট নেটের টুইটার পেজ থেকে নেওয়া

তিব্বতীয় ধর্মগুরু দালাই লামার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ভারত সফর শুরু করলেন। সেই সঙ্গে শুরু হলো তীব্র বিতর্ক।

গতকাল রোববার ওই সাক্ষাৎকারের পর আজ সোমবার সকালে ভারতে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস থেকে প্রচারিত এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া ভাষায় বলা হয়েছে, তারা যেন চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিন্দুমাত্র নাক গলানোর চেষ্টা না করে। উজরা যা করেছেন, তা ‘নির্ভেজাল অপরাধ’।

দিল্লিতে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ওয়াং সিয়াওজিয়াং বিবৃতিতে বলেন, সিজাংকে (তিব্বত) চীনের অঙ্গ হিসেবে মেনে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেটা তাদের পালন করা উচিত। তিব্বতের দোহাই দিয়ে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো বন্ধ করুক। তিব্বতের ভারপ্রাপ্ত তথাকথিত বিশেষ কো–অর্ডিনেটর যা করেছেন, তা নির্ভেজাল অপরাধ। তিব্বতের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টায় তা এক রাজনৈতিক ছক।

মার্কিন বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত উজরা জেয়া গতকাল ভোরে দিল্লি আসেন। সেদিনই তিনি সদলে দালাই লামার সঙ্গে দেখা করেন। ৬ জুলাই ছিল তিব্বতীয় ধর্মগুরুর ৮৮তম জন্মদিন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা তিনি আগেই জানিয়েছিলেন। তাঁদের সাক্ষাৎকারের খবর জানিয়ে গতকাল রাতে টুইট করে কেন্দ্রীয় তিব্বতি প্রশাসনের সরকারি টুইটার পেজ ‘তিব্বত ডট নেট’। মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিব্বতীয় ধর্মগুরুর সাক্ষাৎকারের চারটি ছবিও তাতে দেওয়া হয়। তারপরই আজ সকালে প্রতিবাদ জানায় চীনা দূতাবাস।

দূতাবাসের মুখপাত্র জানান, তিব্বত পুরোপুরি চীনের ঘরোয়া বিষয়। সেখানে নাক গলানোর কোনো অধিকারই বাইরের কারও নেই। তিব্বতের স্বাধীনতাকামী শক্তিদের সঙ্গে বিদেশি কর্তাদের কোনো রকম যোগাযোগ চীন দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে। তথাকথিত তিব্বতের সরকার এক বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠী। অবৈধও। পৃথিবীর কোনো দেশ তাদের স্বীকৃতি দেয়নি।

উজরা জেয়া তিব্বতবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত ‘সমন্বয়ক’। ২০২১ সালে সেই দায়িত্ব পাওয়ার পরের বছর ২০২২ সালে ভারতে এসে তিনি দালাই লামার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেবারও চীন এমনই বিরোধিতা করেছিল। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ক্রমেই নিম্নগামী। ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও দক্ষিণ চীন সাগর এলাকায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে চলেছে। চীনবিরোধী অক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে ভারতকে টেনে এনেছে।

ভূরাজনৈতিক এই পটভূমিতে ভারত সফরে এসে দালাই লামার সঙ্গে উজরা জেয়ার সাক্ষাৎ স্বাভাবিক কারণেই চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে। চীন ঐতিহাসিকভাবেই তিব্বত সম্পর্কে স্পর্শকাতর। ভারতের সঙ্গে তাদের সীমান্ত বিরোধও ২০২০ সাল থেকে তীব্রতর হয়েছে।

দালাই লামার সঙ্গে ওই সাক্ষাতের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু, ইউএসএআইডির উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌর ও ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেট্টি।

উজরা জেয়া, ডোনাল্ড লু, অঞ্জলি কৌরসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ভারত সফরে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করবেন।

ভারতে পৌঁছেই উজরা জেয়া টুইট করে জানিয়েছিলেন, ‘নরেন্দ্র মোদির ঐতিহাসিক সফরের ধারা অব্যাহত রাখতে ভারত সরকার ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য মুখিয়ে আছি। আমরা সেই পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই, যা মুক্ত, সমৃদ্ধশালী, নিরাপদ, স্থিতিশীল ও যেখানে সবার অন্তর্ভুক্তি থাকবে।’

ভারত সফরের পর মার্কিন প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশে যাবে। ঢাকায় তাঁরা আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার স্বার্থে সরকার, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে কথা বলবে।

বাংলাদেশে নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হওয়ার পথে যাঁরা বাধা সৃষ্টি করবেন, তাঁদের ভিসা দেওয়া হবে না বলে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি তাদের নতুন নীতি ঘোষণা করেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লুর সফর যথেষ্ট আগ্রহ সঞ্চার করেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ দুপুর পর্যন্ত এই সফর নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। যদিও মনে করা হচ্ছে, উজরা জেয়ার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলোচনায় বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।