ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) প্রতি ইঙ্গিত করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যা করা হচ্ছে তা ‘বাড়াবাড়ি’। তিনি ভারতীয় নাগরিকদের প্রতিবেশী দেশে ঠেলে দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছেন।
গতকাল সোমবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহারে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে। আমি রাজ্য পুলিশকে বলব, ভয় পাবেন না। একটু সক্রিয় হোন। নাকা (তল্লাশি) অপারেশনের ওপর জোর দিতে হবে।’
বাসিন্দাদের ওপর হয়রানির অভিযোগ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কোচবিহার একটি সীমান্ত জেলা। সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে হবে। কোনো বাড়াবাড়ি সহ্য করা হবে না। কেউ বাংলা বললেই সে বাংলাদেশি হয়ে যায় না। বাংলাদেশ একটি দেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ একটি রাজ্য।
মমতা বলেন, উত্তর প্রদেশের অনেকে উর্দু বলেন। পাকিস্তানিরাও উর্দু বলেন। পাকিস্তানেও একটি পাঞ্জাব আছে। ভারতেও পাঞ্জাব আছে। দুই পাশের বাসিন্দারা পাঞ্জাবি বলেন। বাংলার বাসিন্দাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
রাজ্যের উত্তরবঙ্গে যাওয়ার আগে কলকাতায় মমতা লোকসভায় ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে আলোচনার সময় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যায়কে ‘বঙ্কিমদা’ হিসেবে উল্লেখ করায় বিজেপির কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা যা মনে করেন, তা–ই করেন। আগেও রাজ্যসভায় ঘোষণা করা হয়েছিল, “জয় হিন্দ”, “বন্দে মাতরম” চলবে না। আমি শুনলাম তারা নেতাজি, গান্ধীজি, রামমোহনকে পছন্দ করেন না। আপনারা দেশের ইতিহাস জানেন? তারা (বিজেপি) কি বাংলার অবদান সম্পর্কে জানে?’
কোচবিহারে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, অন্য কোনো রাজ্যের কোনো সংস্থা যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ না করে পশ্চিমবঙ্গে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যদি কারও নাম (কোনো মামলায়) অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তবে তার তদন্ত করা উচিত। আসাম থেকে কয়েকজনকে বিদেশি আইন অনুযায়ী নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।
মমতা আরও বলেন, পুলিশের গাড়িতে টহল কমে গেছে। আগে একটি পুলিশ ভ্যান একটি এলাকায় তিন-চারবার টহল দিত। এখন সেটা দেখা যায় না। এটা ঠিক না। দিন-রাত টহল দিতে হবে।
ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) সময় সব বিভাগকে বুথ স্তরের আধিকারিকদের (বিএলও) সঙ্গে সহযোগিতা করতে মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেন এবং জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন যেন নাম সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক নাম সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। অনেকে বাইরে (বাংলার বাইরে) বিয়ে করেছেন। এ ছাড়া পরিযায়ী শ্রমিকদেরও সমস্যা রয়েছে।
মমতা বাসিন্দাদের এসআইআরের শুনানির জন্য ডাকলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে রাজ্যে ৩ জন বিএলওসহ ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট ও কেরালার এসআইআরের সময়ও মানুষ মারা গিয়েছিল। আগে এসআইআর দুই বছরে শেষ হতো। এখন এটা দুই মাসের মধ্যে শেষ করা হচ্ছে। এটা কীভাবে সম্ভব? তারা (বিজেপি) যা খুশি তা–ই করছে।