আব্বাস সিদ্দিকীও কেন মমতার ওপর মুসলিমদের আস্থায় চিড় ধরাতে পারলেন না

ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী এবার বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে লড়লেও কাজের কাজ হয়নি
ছবি: সংগৃহীত

হুগলি জেলার ফুরফুরা শরিফের পীর পরিবারের সন্তান মধ্য তিরিশের আব্বাস সিদ্দিকীর দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) বাম ফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধলে অনেকেই আশা করেছিলেন, স্বাধীনতা-উত্তর পশ্চিমবঙ্গে প্রথম মুসলমান সমাজের দল হিসেবে তারা একটা আলোড়ন সৃষ্টি করবে।

জনসভায় বক্তব্য দিয়ে আলোড়ন তোলা আব্বাস সিদ্দিকীও এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করতেই তাঁর রাজনীতিতে আসা। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে আইএসএফের শোচনীয় পরাজয় হলো। মোট ৩২টি আসনে লড়ে পেল একটি আসন। বাকি ৩১ আসনে জয়ের কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারেনি আইএসএফ।

উত্তর চব্বিশ পরগনার তিনটি ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার একটি আসনে তারা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, বাকি সব আসনে তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ স্থানে। ৩২টির মধ্যে ২২টি আসনে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, অর্থাৎ ১৬ শতাংশের কম ভোট পেয়েছে তারা।

অপর একটি মুসলমান সমাজের দল দক্ষিণ ভারতের হায়দরাবাদের অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (এমআইএম) ছয়টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল, সব কটিতে জামানত হারিয়েছে।

অথচ আব্বাস সিদ্দিকী বা এমআইএমের সভায় ব্যাপক জমায়েত হয়েছিল। দলে দলে তরুণ ও মধ্যবয়সীরা সভায় গিয়েছিলেন, কিন্তু ভোট দেননি। এটা কেন? তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাবেক সাংসদ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পত্রিকা ‘কলম’-এর সম্পাদক আহমেদ হাসান ইমরান বললেন, ‘জমায়েতকে ভোট বাক্স পর্যন্ত নিয়ে যেতে যে পরিকাঠামোর প্রয়োজন, সেটা আব্বাস সিদ্দিকীর ছিল না। ফলে জনসভায় জমায়েত বড় হলেও ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলন ঘটেনি।’

নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, কেবল আইএসএফ নয়, পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান সমাজ তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া আর কোনো দলকেই সেভাবে ভোট দেয়নি।

আব্বাস সিদ্দিকীর জনসভায় বিপুল জনসমাগম হলেও ভোটে তার প্রতিফলন ঘটেনি
ছবি প্রথম আলো

কলকাতার প্রতীচী ইনস্টিটিউটের জাতীয় গবেষণা সমন্বয়ক সাবির আহমেদ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ২৯৪টি আসনের কোনটিতে কত মুসলমান ভোট রয়েছে, নানান তথ্য থেকে তার সংকলন করেছেন। সেই সংকলন থেকে দেখা যাচ্ছে, মোট ২৯৪ আসনের মধ্যে যে ৯৪টি আসনে মুসলমান ভোট রয়েছে ৩১ শতাংশের ওপরে, সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ৮৮টি আসন। অর্থাৎ তৃণমূলের মোট আসনের (২১৩), ৪১ শতাংশ এসেছে এমন আসন থেকে, যেখানে মুসলমান ভোট ৩১ শতাংশের ওপরে।

এ কারণেই প্রবীণ সাংবাদিক দেবাশীষ ভট্টাচার্য দিন কয়েক আগে বলেছিলেন, বিজেপিকে সব সময়ই ৩০ শতাংশ আসন বাদ দিয়ে লড়াই করতে হবে। ফলে ২০০ আসনে লড়ে ১৪৮টি আসন (সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজন) পাওয়া সব দলের পক্ষেই কঠিন।

দিল্লির সমাজ গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজের (সিএসডিএস) বিশ্লেষণ বলছে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে মুসলমান ভোটের ৭০ শতাংশ পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস, বাকিটা ভাগ হয়েছিল বাম দল, কংগ্রেস ও কিছুটা বিজেপির মধ্যে। এবার বিধানসভায় ৭৫ শতাংশ মুসলমান ভোট পেয়েছে তৃণমূল। অপর দিকে বিজেপি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে যেখানে ৫৭ শতাংশ হিন্দু ভোট পেয়েছিল, এবার সেটা ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।

প্রতীচী ইনস্টিটিউটের সাবির আহমেদের মতে, মুসলমান সম্প্রদায়ের একচেটিয়া ভোট বলে যদি কিছু থাকে, তা এবার পেয়েছে তৃণমূল। এর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সোনারপুর অঞ্চলে আমার পরিচিত একটি পরিবার দীর্ঘ সময় ধরে সিপিআইএম দলের সমর্থক। বাড়ির কর্তা কট্টর বামপন্থী। কিন্তু মহিলারা তাঁকে না জানিয়ে তৃণমূলকে ভোট দিয়ে এসেছেন। তাঁরা ঠিক করে নিয়েছিলেন যে বাড়ির কর্তাকে বলা হবে না যে তাঁরা ভোট দিচ্ছেন তৃণমূলকে।’

এ রকম উদাহরণ অসংখ্য। সংবাদপত্রে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা ছাপা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলার পুরোনো সিপিএম ও কংগ্রেসের মুসলমান পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তাঁরা এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে নির্বাচনে খাটাখাটনি করেছেন। কলম-এর সম্পাদক আহমেদ হাসান ইমরান বলেন, এঁদের অনেকেরই বক্তব্য, তাঁরা সিপিআইএম ও কংগ্রেস ছাড়েননি, বস্তুত কোনো দিন ছাড়বেনও না। এঁরা বলেছেন, পরে আবারও কংগ্রেস বা সিপিএমকে ভোট দেবেন। কারণ, ওই দলের সঙ্গে তাঁদের রক্তের সম্পর্ক। কিন্তু এবার তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে আটকাতে।

তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপরই আস্থা রেখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম ভোটাররা
ফাইল ছবি

গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস মোট ২১৩টি আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। ২০১৬ সালের নির্বাচন থেকে এবার তাদের আসন বেড়েছে দুটি। বেড়েছে ভোট পাওয়ার হারও।

এবার তৃণমূল প্রায় ৪৮ শতাংশ (৪৭.৯৪%) ভোট পেয়েছে, যা তারা অতীতে কখনো পায়নি। বস্তুত ১৯৭২ সালের পর গত ৫০ বছরে এককভাবে কোনো দল পশ্চিমবঙ্গে এত বেশি ভোট পায়নি। নির্বাচনে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিজেপি পেয়েছে ৭৭টি আসন। অপরদিকে তিন দশকের বেশি সময় পশ্চিমবঙ্গ শাসন করা বাম ফ্রন্ট একটি আসনও পায়নি। তাদের আরেক জোটসঙ্গী ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের ভান্ডারও শূন্য।

মেরুকরণ ঠেকানোর তৃণমূলি কৌশল

এবারের নির্বাচনে তৃণমূলের ওপর চাপ ছিল অনেক বেশি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক সাংসদ বলেন, সাধারণভাবে নির্বাচনের রীতি হচ্ছে এক সম্প্রদায়ের ভোট জোটবদ্ধভাবে একটি দল পেলে, অপর বৃহৎ সম্প্রদায়ের ভোটও একসঙ্গে অন্যদিকে চলে যায়। তিনি বলেন, ‘এটা বোঝা যাচ্ছিল মুসলমান ভোট তৃণমূলের দিকে আসছে। ফলে ভয় ছিল যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের (অর্থাৎ হিন্দুদের) ভোট জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপির দিকে চলে যাবে, যেমনটা ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনে হয়েছিল। সেটা যে একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু যতটা হলে বিজেপি জিতত, ততটা হয়নি।’

তিনি বলেন, হিন্দু ভোট যাতে জোটবদ্ধ না হয়, সেটা মাথায় রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে যুক্ত প্রশান্ত কিশোর নির্দিষ্টভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকে বুঝিয়েছিলেন, কোনোভাবেই এমন ইঙ্গিত দেওয়া যাবে না, যাতে মনে হয় তৃণমূল মুসলমান সমাজের ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছে। মুসলমান ভোট তৃণমূল এমনই পাবে।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইতে ১৫ বার এই রাজ্যে এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ফাইল ছবি: এএনআই

‘এই নির্দেশের অঙ্গ হিসেবে তৃণমূলের শীর্ষ মুসলমান নেতৃত্বকে (যেমন মন্ত্রিসভার সদস্য সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে) বিশেষ প্রচার করতে দেওয়া হয়নি। দিল্লিতে ২০২০-এ বড় দাঙ্গা হলেও অতীতের মতো সেটিকে রাজ্যে বড় ইস্যু করেনি তৃণমূল। ভোট-কৌশলের পরিকল্পনাকারী যে শীর্ষ কমিটি তাতেও ফিরহাদ হাকিম ছাড়া কাউকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, প্রচারের সময় মুসলমানপ্রধান হিন্দু অঞ্চলের সংলগ্ন আসনে মুসলমানদের দেখাও যায়নি।’

উল্টো দিকে সারাক্ষণই চণ্ডীমন্ত্র আবৃত্তি, বাড়িতে পুজো পাঠ, মন্দির দর্শন থেকে পুরোহিতদের ভাতা দেওয়া—এসবের মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ধর্মীয় ভাবমূর্তি হিন্দুদের কাছে কিছুটা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। বিজেপিসহ অন্যান্য দলের তাঁর বিরুদ্ধে আনা প্রধান অভিযোগ যে মমতা একজন ‘মুসলমান তোষণকারী নেত্রী’ বিশেষ কাজে আসেনি। এ কারণে মমতার হিন্দু ভোটও বেড়েছে, আর বিজেপির হিন্দু ভোট কমেছে। ফলে শেষ পর্যন্ত দুই সম্প্রদায়ের ভোট পেয়েই লাভবান হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী ও তাঁর দল।

প্রার্থী কম, আসন বেশি

মুসলমান ভোটের বড় অংশ তৃণমূলে এসে যাওয়ায় এবার কম মুসলমান প্রার্থী দিয়েও অনেক বেশি সংখ্যালঘু প্রার্থীকে জেতাতে পেরেছে তৃণমূল। ২০১৬ সালে ৫৬ জন মুসলমানকে প্রার্থী করে তৃণমূল ৩২ জনকে জেতাতে পেরেছিল। এবার ৪৫টি আসনে (২৯২-এর মধ্যে) তৃণমূল মুসলমান প্রার্থী দেয়, জেতেন ৪৪ জন। একটি আসন পায় আইএসএফ।

‘তবে তৃণমূলের মোট মুসলমান বিধায়ক ৩২ থেকে ৪৪ হলেও বিধানসভায় মুসলমান এমএলএর সংখ্যা ৫৯ (২০১১, ২০১৬) থেকে কমে এবার ৪৫ হয়ে গেল। বাম ফ্রন্ট ও কংগ্রেসের কেউ জিততে না পারার কারণেই এটা হলো,’ জানালেন কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মহম্মদ রিয়াজ।

পশ্চিমবঙ্গে মোট মুসলমান বিধায়কের সংখ্যা ৫৯ থেকে কমে ৪৫ হয়ে যাওয়ায় আইনসভার মুসলমান বিধায়কের হার ২০ থেকে নেমে ১৫ শতাংশ হয়ে গেল। বাম ফ্রন্ট সরকারের শেষ দফায় (২০০৬-২০১১) মুসলমান এমএলএর হার ছিল ১৫ শতাংশ। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরে ২০১১ সালে এ হার বেড়ে ২০ শতাংশ হয়, ২০১৬ সালেও মুসলমান প্রতিনিধির সংখ্যা ২০ শতাংশই ছিল।

স্বাধীনতার পর কখনোই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় মুসলমান প্রতিনিধিত্বের হার ২০ শতাংশে পৌঁছায়নি, তৃণমূল আসার আগে। কিছুটা বিজেপির চাপে আর কিছুটা বাম ফ্রন্ট-কংগ্রেস-আইএসএফের ব্যর্থতায় এ হার ২০ থেকে আবার ১৫ শতাংশে নেমে গেল।

বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির ব্যর্থতা

তৃণমূলের কিছু মুসলমান নেতাকে ভাঙিয়ে আনলেও মুসলমান ভোট যে শেষ পর্যন্ত তৃণমূলেই যাবে, এটা বুঝে মেরুকরণের রাস্তাতেই হেঁটেছিল বিজেপি। কিন্তু মেরুকরণ সঠিকভাবে তারা করতে পারেনি বলে মনে করেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাবেক সভাপতি ও ত্রিপুরার সাবেক রাজ্যপাল তথাগত রায়।

তথাগত রায় বলেন, ‘মেরুকরণটা ঠিক যেভাবে করা উচিত ছিল, সেভাবে হয়নি। বাঙালি হিন্দুর যে আবেগ ও স্মৃতির জায়গা, তার দেশভাগের দুঃখ, তা বিজেপি তেমনভাবে বুঝতে পারেনি। বাঙালিরা যাঁদের শ্রদ্ধা করে, যেমন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, এঁদের ভূমিকাকে তুলে ধরার দরকার ছিল। এবং তার মাধ্যমে এটা বলার দরকার ছিল, বাঙালি হিন্দুদের জন্য গঠিত হয়েছিল যে রাজ্য, সেই রাজ্যে আজ মুসলমান ভোট নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করে। এটা বিজেপি বুঝতে পারেনি, তুলেও ধরতে পারেনি। সাংস্কৃতিকভাবে উত্তর ভারতের বিজেপি নেতারা পূর্ব ভারতের মানুষের সঙ্গে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেনি। এটা বড় ব্যর্থতা।’

তথাগত রায় মনে করেন, শুধু বিভ্রান্তিকর মেরুকরণের নীতিই বিজেপির হারের কারণ নয়। আরও অনেক কারণ রয়েছে, যেমন ‘উনিশে হাফ, একুশে সাফ’ স্লোগান তৈরি হওয়ার পর বিজেপির নেতারা স্লোগানের প্রেমে পড়ে যান। তাঁদের ধারণা হয়, স্লোগানটা তোতা পাখির মতো বললেই সব কাজ হয়ে যাবে। নির্বাচনের জন্য যে কঠিন কাজের প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়নি। অনেক জায়গাতেই বুথ কমিটি তৈরি হয়নি, ভোট গণনার সময় চরম গাফিলতি ছিল। বিজেপির যাঁরা কর্মী, তাঁদের যথাযথ শিক্ষা না দেওয়ারই ফল এটা।

বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতি তৃণমূলের সুবিধা করে দিয়েছে বলে মনে করেন মুসলমান সমাজের পর্যবেক্ষকেরা। এ বিষয়ে আহমেদ হাসান ইমরান বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য মুসলমানদের খুবই ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন বিজেপি ক্ষমতায় এলে এই রাজ্য যোগী-রাজ্যের (উত্তর প্রদেশের সঙ্গে) সঙ্গে তুলনীয় হবে। এ ছাড়া বারবার যোগী আদিত্যনাথকে এনে বিজেপি প্রচার করেছে, বারবার পাকিস্তানের কথা বলেছে। এতে বাংলার গ্রামগঞ্জে মুসলমানদের ভয় বেড়েছে, হিন্দুদেরও অনেকেই ব্যাপারটাকে ভালোভাবে নেননি।’

সাবির আহমেদও বলছিলেন, তৃণমূলকে নিয়ে নানা ক্ষোভ থাকলেও মুসলমান ভোট এক জায়গায় আসার মূলে রয়েছে তীব্র ভয়। আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অনেকেই বিশেষ সাহায্য পাননি। কিন্তু তবু তাঁরা হয়তো ভাবলেন জীবন, সম্পত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য সুরক্ষিত রাখতে এবার কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না।

গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৩০০ শিক্ষা মিশন তৈরি হয়েছে মূলত মুসলমান সমাজের দুস্থ ছেলেমেয়েদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার প্রসারের জন্য, মুসলমান সমাজেরও কিছু উন্নতি হয়েছে, শিক্ষিত-মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়ে বেরোচ্ছেন মুসলমান সমাজ থেকে।

তবে মেরুকরণের ফলে বিজেপিও যে লাভবান হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। বিজেপির ভোট ২০১৬ সালে ১০ থেকে বেড়ে ৩৮ শতাংশ হয়েছে। বিজেপির রাজ্যস্তরের এক নেতা বললেন, মেরুকরণের রাজনীতি তাঁদের চালিয়ে যেতে হবে। তাঁর মতে, ‘পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান সম্প্রদায় বিজেপির দিকে আসবেন না, আসামের মতো স্থানীয় মুসলমান সমাজের দল তৃণমূলের ভোট ভাঙবে না। ফলে মেরুকরণই হয়তো একমাত্র রাস্তা।’

সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গে কাজে দেবে কি না, তা সময় বলবে। তবে এর ফলে পশ্চিমবঙ্গে অস্থিরতা যে বাড়বে, তা স্বীকার করছে সব পক্ষই।