আরও ১২ বিএসএফ সদস্য ও শুল্ক কর্মকর্তার নাম

সীমান্তে পাচারের সময় গরু আটক করে বিএসএফ
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে গরু পাচার চক্রে এবার নতুন করে উঠে এসেছে বিএসএফ ও পশ্চিমবঙ্গের শুল্ক বিভাগের আরও ১২ কর্মকর্তার নাম। এদের মধ্যে পাঁচজন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ও ৭ জন শুল্ক দপ্তরের কর্মকর্তা।
সীমান্তে গরু পাচারে বিএসএফের দুই কর্মকর্তার নাম উঠে আসে গত বুধবার। এর একজন মুর্শিদাবাদের সাবেক কমান্ড্যান্ট সতীশ কুমার ও মালদহের কমান্ড্যান্ট জিবু ম্যাথু।

এই কর্মকর্তাদের সঙ্গে রয়েছে সীমান্তের পাচারচক্রের ‘মূল হোতা’ এনামুল হকের নামও। আছেন এনামুলের দুই সঙ্গী আনারুল সেখ ও মোহাম্মদ মোস্তফা। ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা-সিবিআইয়ের এক বিশেষ অভিযানে এসব নাম উঠে আসছে। সিবিআইয়ের এই অভিযান আজ শুক্রবারও চলছে মুর্শিদাবাদ ও মালদহ সীমান্ত এলাকায়।

এর আগে রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া সিবিআই এ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতে পারত না। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা দায়েরের জন্য কোনো অনুমতি নিতে হবে না রাজ্য সরকারের কাছ থেকে। এই নির্দেশের পর সিবিআই ২১ সেপ্টেম্বর সীমান্তে গরু পাচার নিয়ে দায়ের করে একটি মামলা। সেই মামলার তদন্তে কাজ শুরু করে বুধবার থেকে। ১২টি দলে ভাগ হয়ে ১১০ জন কর্মী অভিযানে নামে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, কলকাতা এবং শিলিগুড়িতে।

বুধবার সীমান্তে বিভিন্ন এলাকায় গরু পাচার মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সিবিআই হদিস পায় গরু পাচারকারী এবং এর মদদদাতা চক্রের। তদন্ত করতে গিয়ে সিবিআই হানা দেয় সীমান্তের পাচারচক্রের ‘মূল হোতা’ এনামুল হকের ডেরায়। এই এনামুল হকের কলকাতা ও মুর্শিদাবাদের শিল্প কারখানা এবং বাসভবনে অভিযান চালিয়ে জানতে পারে তিনি গরু পাচার ছাড়াও বিভিন্ন চোরাচালান, চাল-পেঁয়াজ, আবাসিক ও নির্মাণ শিল্প, পাথর ও বালির কারবারে যুক্ত। সিবিআই তল্লাশি করে তাঁর ১৩০ কোটি রুপির হদিস পেয়েছে ব্যাংকে। এ ছাড়া ব্যাংকে মিলেছে আরও ১০ লাখ ডলার। নামে-বেনামে মিলেছে বিপুল সম্পত্তির হদিস। রয়েছে বিদেশেও বাড়ি। ২০১৭ সালে এই এনামুল হক ৭ কোটি রুপি আয়কর দেন।

আর বিএসএফ কমান্ড্যান্ট সতীশ কুমারের একাধিক বাড়িতে তল্লাশি করে পেয়েছে বিপুল সম্পত্তির হদিস পায় সিবিআই। পেয়েছে কলকাতার সল্ট লেকে একটি বাড়ি, নিউটাউনে একটি বহুতল আবাসন, উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে ৩টি বাড়ি, দুটি প্লট, পাঞ্জাবের অমৃতসরে বাগানবাড়ি, উত্তরাখন্ডের মিশৌরিতে একটি হোটেল এবং ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুর এবং পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে জমি ও বাড়ির হদিস। সেখানেও সিবিআই তল্লাশি চালায়।

সিবিআই জানতে পারে, এই গরু পাচার হতো ১০ টাকার নোটে বিভিন্ন সংকেতে পাচারকৃত গরুর সংখ্যা, মূল্য ইত্যাদি লিখে। গরু পাচারকালে প্রতি গরুতে এনামুল বিএসএফকে দিতেন ২ হাজার রুপি আর শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা পেতেন ৫০০ রুপি করে। এ ছাড়া আটক গরুর নিলাম মূল্যের ১০ শতাংশও পেতেন শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা।