আসামের শিলচরের বন্যা পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ

আসামে বন্যা
ফাইল ছবি

পূর্ব ভারতের আসামের দক্ষিণে বরাক উপত্যকার বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চল শিলচর গত দুই সপ্তাহ ধরে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। গোটা অঞ্চল কার্যত পানির নিচে তলিয়ে গেলেও এখন পানি কিছুটা কমেছে। তবে ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। কয়েক দিন আগেও শিলচরের বিভিন্ন স্থানে মৃতদেহ ভেসে উঠতে দেখা গেছে। বিদ্যুৎ সমস্যা ছাড়াও খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সমস্যা তীব্র। এখনো অন্তত অর্ধেকের বেশি এলাকায় পানি।

সরকারের তরফে বলা হয়েছে, ছয় দুষ্কৃতকারী শিলচর শহরের কাছেই একটি অস্থায়ী বাঁধ কেটে দেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। তবে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।

শিলচরের গবেষক প্রজ্ঞা অন্বেষা প্রথম আলোকে বলেন, এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে শিলচরের মানুষ বসবাস করছেন। এনডিআরএফ (ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স) প্রধান যে সড়ক পানির নিচে রয়েছে, সেখান দিয়ে তাঁদের স্পিডবোট নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু যেহেতু তাঁরা এলাকার বাসিন্দা নন, তাই তাঁরা এ অঞ্চল চেনেন না। ফলে পানি জমে থাকা গলি বা ছোট রাস্তায় ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না।

অন্বেষা আরও বলেন, দেড়-দুই সপ্তাহ আগে আসামের যে অবস্থা ছিল, তা থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। এখন যত্রতত্র মৃতদেহ ভেসে উঠতে দেখা যাচ্ছে না। এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, সবখানে পানীয় জল এবং খাবার দ্রুত পৌঁছানো।

এ রকম বন্যা কাছাড় জেলার শিলচরে এবং সংলগ্ন করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে ১৯৮৫ সালের পরে আর হয়নি বলেও জানান স্থানীয় লোকজন। তাঁরা বলেন, গুয়াহাটিকেন্দ্রিক আসামের বন্যা নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু বরাক নদী প্লাবিত হয়ে দক্ষিণ আসামের পুরোটাই দীর্ঘ দুই সপ্তাহ ধরে পানির তলায় তা কেউ বলেননি। গণমাধ্যমেও বিষয়টি বিশেষ প্রচার পায়নি। শিলচরে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু সরকারের ফেসবুক পোস্টের পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

শিলচর শহরের অন্যতম বড় বইয়ের দোকান পার্থপ্রতিম দাসের। পার্থপ্রতিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এমন এক বাঙালি, যারা আদতে কোন দেশের বাসিন্দা, তা ভারতের মানুষ জানে না। একসময় এই অঞ্চলের অংশবিশেষ বাংলাদেশের সিলেটের সঙ্গে যুক্ত ছিল। অন্য প্রান্তের বাঙালিরাও আমাদের কোনো খোঁজখবর রাখেন না। এ অঞ্চলের ৩৫ থেকে ৪০ লাখ মানুষ কীভাবে আছেন বা আদৌ বেঁচে আছেন কি না, তা কেউ খোঁজ রাখেন না।’

স্থানীয় গণমাধ্যমের অভিযোগ, পুরো আসাম যখন বন্যায় ভাসছে, তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা মহারাষ্ট্রের এমএলএদের কেনাবেচা নিয়ে ব্যস্ত। বিশ্বশর্মা অবশ্য দাবি করেছেন, মহারাষ্ট্রের যে ঘটনা গুয়াহাটিতে ঘটছে, তার সঙ্গে আসাম সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। পরে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে কয়েকবার তিনি শিলচরে গেছেন।

আসামের বন্যায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের বড় অংশ বরাক উপত্যকার তিন জেলা কাছাড়, হাইলাকান্দি এবং করিমগঞ্জের বাসিন্দা। বর্তমানে এসব এলাকার অন্তত ২৯ লাখ মানুষ এখনো চরম ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

পার্থপ্রতিম বলেন, বরাক নদের যে অংশটি উত্তর দিক থেকে অর্থাৎ মণিপুরের দিক থেকে আসছে, সেখানকার বিভিন্ন শাখা নদী জাতিঙ্গা, জিরি ও মধুরাতে পানি বেড়ে যায়। পাশাপাশি দক্ষিণে মিজোরাম থেকে লঙ্গাই, সিংলা, সোনাই, রুকনি প্রভৃতি শাখা নদীতে পানি বেড়ে যায় এবং এসে পড়ে বরাক নদে। এতে উপত্যকাসহ আশপাশের জেলাগুলো প্লাবিত হয়। লাগাতার বৃষ্টির কারণেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে বড় বিপদ হয় যখন মহিষাবিলের অস্থায়ী বাঁধ ভেঙে যায়। এতে শিলচর শহরে পানি ঢুকতে শুরু করে।

স্থানীয় সংবাদপত্রে বলা হয়, প্রভাবশালীর নিম্নমানের কাজ আড়াল করতেই কেটে নেওয়া হয় বাঁধ। বাঁধের কিছু অংশ কেটে নেওয়ার পেছনে কিছু দুষ্কৃতকারীর হাত রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা গত শুক্রবার বলেন, বাঁধ কাটা নিয়ে গুয়াহাটিতে ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টে একটি অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন