উত্তাল মেঘালয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বোমা হামলা, শিলংয়ে কারফিউ

মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমা।
ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।

স্বাধীনতা দিবসের দিনে উত্তাল ছিল ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় মেঘালয় রাজ্য। এদিন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পেট্রোল বোমা হামলা হয়েছে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমার ব্যক্তিগত বাড়িতে। পদত্যাগ করেছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষণ রায়েমবুই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে দুই দিনের জন্য কারফিউ জারি করেছে রাজ্য সরকার। খবর এনডিটিভির।

ঘটনার সূত্রপাত সাবেক বিদ্রোহী নেতা ক্রিস্টারফিল্ড থাংখিইউয়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। তিনি স্থানীয় বিদ্রোহী দল হানিয়েট্রেপ ন্যাশনাল লিবারেশন কাউন্সিলের নেতা ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি সরকারি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। গত শুক্রবার মেঘালয় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ক্রিস্টারফিল্ড।

রাজ্য পুলিশ বিবৃতিতে জানায়, বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গেলে পুলিশের ওপর ছুরি নিয়ে হামলা চালান সাবেক এ বিদ্রোহী নেতা। এসময় পুলিশ আত্মরক্ষায় গুলি চালায়। নিহত হন তিনি। তবে এ নেতার পরিবারের দাবি, পরিকল্পনা করে ঠান্ডা মাথায় তাঁকে হত্যা করেছে পুলিশ।

এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রোববার সকালে পদত্যাগ করেন মেঘালয়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষণ। মুখ্যমন্ত্রী সাংমার কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রে তিনি এ ঘটনাকে ‘হত্যাকান্ড’ বলে উল্লেখ করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।

রোববার সাবেক এ বিদ্রোহী নেতার শেষ যাত্রায় সামিল হন শত শত মানুষ। এসময় অনেকে কালো পোশাক পরে, হাতে কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করেন। রাজধানী শিলংসহ অন্তত চারটি জেলায় পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের সংঘর্ষ হয়। এসময় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিলংসহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। রাত দশটার পরপর শিলংয়ে মুখ্যমন্ত্রী সাংমার ব্যক্তিগত বাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলা চালানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, দুটো পেট্রোল বোমার একটি বাড়ির সামনে ও অন্যটি পেছনের উঠানে বিস্ফোরিত হয়। তবে এতে কেউ হতাহত হননি। মুখ্যমন্ত্রী সাংমা হামলার সময় তাঁর সরকারি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

এদিন শিলংয়ে পাশের রাজ্য আসাম থেকে আসা একটি গাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ওই গাড়ির চালক মারাত্মকভাবে আহত হন। হামলা হয়েছে পুলিশের চেকপোস্টেও। স্বাধীনতা দিবসের দিনে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে। শিলংসহ আশেপাশের এলাকাগুলোয় এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুই দিনের জন্য শিলংয়ে কারফিউ জারির ঘোষণা দিয়েছে মেঘালয়ের রাজ্য সরকার। রোববার রাত আটটা থেকে শুরু হওয়া কারফিউ চলবে মঙ্গলবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত।

গত শনিবার মুখমন্ত্রী সাংমা ঘোষণা দিয়েছেন, সাবেক বিদ্রোহী নেতা ক্রিস্টারফিল্ডের মৃত্যুতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হবে। এদিকে আসাম পুলিশের স্পেশাল ডিজিপি জিপি সিংহ টুইট বার্তায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জেরে আসামের বাসিন্দাদের কারফিউ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত শিলং ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।