এক মাসে মোদি-অমিত শাহের দুই দফা পশ্চিমবঙ্গ সফর

নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ
ফাইল ছবি: এএফপি

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৃহস্পতিবার আবার আসছেন পশ্চিমবঙ্গ সফরে। তিনি গত বৃহস্পতিবার ১১ ফেব্রুয়ারি এ রাজ্যে এসেছিলেন। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সফরে আসছেন ২২ ফেব্রুয়ারি, সোমবার। তিনিও শেষবার রাজ্যে এসেছিলেন চলতি মাসেই, ৭ ফেব্রুয়ারি। দুজনেই নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেবেন। ইতিমধ্যে বুধবার বিজেপিতে সরাসরি যোগ দিলেন কলকাতা সিনেমাপাড়া টালিগঞ্জের এমন অনেক মাঝারি মাপের অভিনেতা-অভিনেত্রী, যাঁদের তৃণমূল কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হতো। আশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতে পারে।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের সফরে যাবেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় বঙ্গোপসাগরের সাগরদ্বীপে, কপিল মুনির আশ্রমে। সেখানে পূজা দিয়ে তিনি যাবেন ওই জেলারই নামখানা ব্লকে ভাষণ দিতে। বিকেলে কাকদ্বীপ ব্লকে মিছিল করবেন। এই অঞ্চল সুন্দরবনের মধ্যে পড়ে এবং এখানে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাব গত কয়েক বছরে ভালো রকম বেড়েছে। পরিবর্তন যাত্রার নাম দিয়ে বিজেপি রাজ্যে একাধিক ধর্মীয় রথযাত্রা করছে। শেষ যাত্রাটির সূচনা করতেই বৃহস্পতিবার আসছেন অমিত শাহ।

যদিও এই রথযাত্রা নিয়ে যে উন্মাদনা সৃষ্টি হবে বলে মনে করা হচ্ছিল তা হয়নি, কয়েক জায়গাতে বিজেপি নেতারা প্রস্তাবিত কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে দিল্লিতে ফিরে গিয়েছেন। গত সপ্তাহে দ্বিতীয় পর্যায়ে রথযাত্রার উদ্বোধন করার পর দক্ষিণ বাংলার ঝাড়গ্রাম জেলায় একটি জনসভায় বক্তব্য দিতে গিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। কিন্তু লোক না হওয়ার কারণে তিনি মঞ্চে না উঠে ফিরে গিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে বিজেপি জানায়, ওই অনুষ্ঠানে কিছু শিল্পীর অংশ নেওয়ার কথা ছিল, তাঁরা সময়মতো পৌঁছাতে না পারার কারণে নাড্ডা ফিরে যান। সেই কারণেই অমিত শাহের সভার ব্যবস্থাপনা নিয়ে বারবার বৈঠক করছেন এবং সভাস্থল পরিদর্শন করছেন বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। নামখানার সভাস্থল ইতিমধ্যেই পরিদর্শন করেছেন রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গী। বিজেপির নেতারাও সাগরদ্বীপ পরিদর্শন করেছেন।

অমিত শাহের সফরের ১০০ ঘণ্টার মধ্যেই আগামী সোমবার রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। ওই সময় সেখান থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের বড় নেতা শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এবার প্রধানমন্ত্রী মোদি যাবেন হুগলি জেলায়। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, এই জেলা থেকেই টাটা শিল্পগোষ্ঠীকে ২০০৬-০৭ সালে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনের জেরে ২০১১ সালে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত হেরে যান বামপন্থীরা। বিরোধীরা মনে করেন, শিল্পবিরোধী আন্দোলনের জেরে গত কয়েক বছরে রাজ্যে বড় শিল্প আসেনি, যদিও ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের প্রসার ঘটেছে। সেই কারণে হুগলি থেকে ভাষণ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

‘আশা করা হচ্ছে, তিনি এখান থেকে একটা বার্তা দেবেন, বলবেন কীভাবে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনতে হবে বিনিয়োগ ও বড় শিল্পকে, শুধু হুগলি জেলাতে নয়, গোটা রাজ্যেই,’ বলেন বিজেপির রাজ্যস্তরের এক নেতা। কিন্তু নির্বাচনের উত্তপ্ততা এখানেই থেমে থাকছে না। প্রধানমন্ত্রীর সভা করার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হুগলিতে জনসভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির দুর্বল দিকটা নিয়ে কথা বলবেন তৃণমূল নেত্রী।
‘এখন পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদি কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন করতে পারেননি। সেটাই তুলে ধরবেন মুখ্যমন্ত্রী,’ বলেন হুগলির এক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা। সম্প্রতি হুগলি জেলায় বেশ কিছু মাঝারি ও ছোটখাটো তৃণমূল কংগ্রেস নেতা পার্টি ছেড়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটও কমেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আগামী সপ্তাহে সেখানে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী।

বিজেপিতে যোগ দিলেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা

একাধিক মাঝারি ও ছোটখাটো অভিনেতা ও অভিনেত্রী বুধবার যোগ দিলেন বিজেপিতে। বিজেপির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বেশ বড় মাপের অন্তত একজন অভিনেতা এবং নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলে রাজনীতি ছাড়বেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের এক এমএলএ (বিধায়ক), যিনি অতীতের এক তারকা। প্রথমেই বলতে হয় জনপ্রিয় অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কথা। তিনি বিজেপিতে সরাসরি যোগ দেননি বটে কিন্তু বৈঠক করেছেন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ঘনিষ্ঠ এবং বিজেপির অন্যতম পরামর্শদাতা বলে পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ঘনিষ্ঠ এই ব্যক্তির নাম অনির্বাণ গাঙ্গুলি।

অনির্বাণ গাঙ্গুলি দিল্লির শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি গবেষণাকেন্দ্রের অধিকর্তা। গবেষণাকেন্দ্রটি বিজেপির পূর্বসূরি সংগঠন ভারতীয় জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির নামে। অমিত শাহ ও বিজেপিকে নিয়ে বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন গাঙ্গুলি, যার সঙ্গে প্রসেনজিতের বই বিনিময়ের ছবিটি ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ছবিটি নিয়ে ভালো রকম জল্পনাও শুরু হয়েছে।

এ ছাড়া তৃণমূল কংগ্রেসের এমএলএ, আরেক সাবেক তারকা চিরঞ্জিত বলেছেন, নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলে তিনি রাজনীতি থেকে সরে যাবেন। তবে বিজেপিতে যোগ দেবেন কি না, তা পরিষ্কার করেননি। ‘এস ও এস কলকাতা’ বলে একটি জনপ্রিয় ছবির অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত বিজেপিতে যোগ দিয়ে বলেছেন, রাজ্যের উন্নতির লক্ষ্যে তিনি হিন্দুত্ববাদী দলটিতে যোগ দিলেন।

‘তবে আমি দিদিকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে) ভালোবাসি। আমি আজও বলি, আমি ওনার ভাই। আমি মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়ে আশীর্বাদ চেয়েছি,’ বলেন দাশগুপ্ত। সৌমিলি বিশ্বাস নামের এক অভিনেত্রীও এদিন বিজেপিতে যোগ দেন। এ ছাড়া হিরণ চট্টোপাধ্যায় নামের এক অভিনেতা বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁরা কেউই সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেস করতেন না, কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে দলীয় প্রচারে তাঁদের অনেককেই দেখা যেত। পরিবর্তে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের ঘনিষ্ঠ এই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সিনেমায় কাজ পাইয়ে দিত বলে এখন অভিযোগ করা হচ্ছে।

টালিগঞ্জের এক পরিচালক-প্রযোজক এই প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, অনেক কিছুর মতোই ব্যাপক হারে অভিনেতাদের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল, এখন তারই খেসারত দিতে হচ্ছে।