কঙ্গনাকে নিয়ে বিপাকে সরকার ও বিজেপি

কঙ্গনা রনৌত

ভারতের শাসক দল বিজেপি ও সরকারকে ব্যাপক বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছেন পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত। বিড়ম্বনা এতটাই যে কীভাবে এর সামাল দেওয়া যায়, সে বিষয়ে ভেবে কেউ কূলকিনারা পাচ্ছেন না। বিরোধীদের সম্মিলিত দাবি, কঙ্গনাকে দেওয়া পদ্মশ্রী সম্মাননা অবিলম্বে ফেরত নেওয়া হোক।

তিন দিন আগে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ রাষ্ট্রপতি ভবনে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে দেশ–বিদেশের পদ্ম সম্মানে ভূষিত ব্যক্তিদের হাতে পদ্ম সম্মাননা তুলে দেন। কঙ্গনার অসামান্য অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে দেওয়া হয়েছে পদ্মশ্রী সম্মাননা। তা গ্রহণের পর এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কঙ্গনা বলেন, ভারত স্বাধীন হয়েছে ২০১৪ সালে (নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতাসীন হওয়ার বছর)। ১৯৪৭ সালে পাওয়া স্বাধীনতা ছিল ‘ভিক্ষা’। এই মন্তব্যের পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা দাবি করেছেন, অবিলম্বে কঙ্গনাকে দেওয়া সম্মাননা প্রত্যাহার করা হোক। কোনো কোনো দলের নেতা তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগও এনেছেন। এই সম্মিলিত দাবির মুখে শাসক দল বিজেপি ও সরকার বিব্রত বোধ করছে।
কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা টুইট করে বলেছেন, এখনই কঙ্গনার পদ্মশ্রী খেতাব প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক। রাষ্ট্রপতিকে ট্যাগ করে তিনি বলেছেন, এ ধরনের সম্মাননা অর্পণের আগে দেখা উচিত প্রাপক মানসিক দিক থেকে স্থিতিশীল কি না।

আনন্দ শর্মা লিখেন, মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদের মতো অগণিত স্বাধীনতাসংগ্রামীর ত্যাগকে তিনি অসম্মান করেছেন। কংগ্রেসের মতে, কঙ্গনা যা বলেছেন, তা দেশদ্রোহের নামান্তর।
মহারাষ্ট্রের শাসক শরিক দল এনসিপি নেতা নবাব মালিক সরাসরি কঙ্গনাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর ধারণা, মাদকের নেশার ঘোরে অভিনেত্রী এমন ধরনের কথাবার্তা বলেছেন। কংগ্রেসের মতো নবাব মালিকেরও দাবি, খেতাব ফিরিয়ে নেওয়া হোক।

শিবসেনার নেতা নীলম গোরে বলেন, কালক্ষেপণ না করে কঙ্গনার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা দায়ের হোক। একই দাবি আম আদমি পার্টির নেতা ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালেরও। মুম্বাই পুলিশকে তিনি কঙ্গনার বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিজেপি লক্ষণীয়ভাবে চুপ। পান থেকে চুন খসলেই যারা বিরোধীদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ আনে, মামলা দায়ের করে, তারাও কঙ্গনার বক্তব্য আড়াল করার উপায় পাচ্ছে না। দলের একজন শীর্ষ নেতা এ বিড়ম্বনা মেনে নিয়ে বলেন, রাষ্ট্রপতিকে পর্যন্ত ওই অভিনেত্রী অসম্মান করলেন।

বিজেপি নির্বাক হলেও শাসক দলের সাংসদ বরুণ গান্ধী সরব। বরুণ ইদানীং কৃষি আইনসহ বেশ কিছু বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করছেন। কঙ্গনা বিতর্কে তিনি টুইট করে বলেন, কখনো গান্ধীজির আত্মত্যাগের সমালোচনা, কখনো তাঁর হত্যাকারীর বন্দনা, এখন মঙ্গল পান্ডে, রানি লক্ষ্মীবাঈ, ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ও লাখ লাখ স্বাধীনতাসংগ্রামীকে অবজ্ঞা করা হলো। এটা কি নিছক পাগলামি নাকি দেশদ্রোহ?

কঙ্গনা রনৌত কিছুকাল ধরে মোদি সরকার ও বিজেপির স্বঘোষিত সমর্থক হয়েছেন। নানা বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্তকে শুধু সমর্থনই তিনি করছেন না, বিবাদেও জড়াচ্ছেন। বস্তুত, কঙ্গনা ও বিতর্ক সমার্থক হয়ে উঠেছে। বৃহন্মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের সঙ্গে তিনি বিবাদে জড়িয়েছেন। মামলা হয়েছে। অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার জন্য মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মানসিকতাকে দায়ী করেছেন। নারীবাদীদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন। কৃষক আন্দোলনকে সমর্থনের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গায়িকা–অভিনেত্রী রিয়ানাকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলার পাশাপাশি আন্দোলনরত কৃষকদেরও ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেছেন। সরকারকে সমর্থনের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশ কিছুদিন ধরে কঙ্গনার নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা করেছে। এখন তাঁর এ মন্তব্যের পর সরকার কিংকর্তব্যবিমূঢ়।