করোনার কোপ, পশ্চিমবঙ্গ থেকে চীনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ

করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এবার পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্রোপকূলবর্তী এলাকা থেকে চীনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ হয়ে গেছে রপ্তানি। এতে বিপাকে পড়েছেন কাঁকড়াচাষিরা।

পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সাড়ে ৭২ কিলোমিটার সমুদ্রোপকূলীয় এলাকা রয়েছে। উপকূলীয় এলাকা হলো দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর, শঙ্করপুর, খেজুরি, নন্দীগ্রাম ও নয়াচর। এর মধ্যে খেজুরি, নয়াচর ও নন্দীগ্রামে প্রচুর কাঁকড়া চাষ হয়। এসব এলাকার আড়াই হাজারের বেশি মানুষ এই কাঁকড়া চায়ের সঙ্গে যুক্ত। গত ২৬ জানুয়ারি থেকে এই এলাকা থেকে চীনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। শুধু কাঁকড়া নয়, এই এলাকার সমুদ্রের মাছ, বিশেষ করে রুপচাঁদা, চিংড়ি, কাঁকড়া, পাতা মাছ, স্কুইড ও কাটেল প্রজাতির মাছ রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মৎস্যচাষিরা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এক দশক আগে এই এলাকায় বাগদা চিংড়ি চাষে ভাইরাসের আক্রমণ ঘটলে সে বছর এই বাগদা রপ্তানিও বন্ধ হয়েছিল চীনে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, এবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার সমুদ্রোপকূলবর্তী এলাকা থেকেও কাঁকড়া, চিংড়ি, পমফ্রেটসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছও রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে।

পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির বাসিন্দা কাঁকড়াচাষি নবেন্দু দাস সাংবাদিকদের বলেন, কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি হওয়ার কারণে তাঁরা কাঁকড়া বিক্রিতে ভালো উপার্জন করতে পারতেন। এক কেজি মাদি কাঁকড়া বিক্রি করতে পারতেন ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯৫০ রুপিতে। আর পুরুষ কাঁকড়া প্রতি কেজি ১ হাজার ৪০০ রুপিতে। এখন তাঁরা সেই কাঁকড়ার অর্ধেকও দাম পাচ্ছেন না।

ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন থেকে রপ্তানিকারীরা কাঁকড়া নিতে চাইছেন না। এ কারণে তাঁরা বিরাট এক আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছেন। কবে চীনে আবার এই কাঁকড়া রপ্তানি করা যাবে, সেদিকে তাঁরা এখন তাকিয়ে আছেন, আর প্রহর গুনছেন—কবে করোনাভাইরাস বিদায় নেবে দেশ থেকে।

পশ্চিমবঙ্গ বা কলকাতায় করোনাভাইরাসে কারও আক্রান্ত হওয়ার খবর এখনো মেলেনি। তবে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তর গত সপ্তাহে বলেছিল, করোনাভাইরাসের সন্দেহে কলকাতার হাসপাতাল ও ব্যক্তিগত বাড়িতে ৪৫ জন রোগীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরে ওই সব রোগীর মুখের লালা মহারাষ্ট্রের পুণে এবং কলকাতার বেলেঘাটার পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করার পর জানা যায়, তাঁদের দেহে পাওয়া যায়নি করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব। এ কারণে ওই রিপোর্টের পর সেই রোগীদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

তবুও গোটা পশ্চিমবঙ্গ থেকে আতঙ্ক কাটেনি এই করোনাভাইরাসের। কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের বাগডোগরা বিমানবন্দর, বেনাপোল-পেট্রাপোলসহ পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য স্থলসীমান্তে জারি করা হয়েছে কড়া সতর্কতা। যাঁরাই ভারতে ঢুকছেন, তাঁদের ওপর কড়া নজরদারি করা হচ্ছে। নিয়োগ করা হয়েছে মেডিকেল টিম। সন্দেহভাজনদের কড়া পরীক্ষার পর তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে ভারতে।

এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ গতকাল রোববার এক নির্দেশে জানিয়ে দিয়েছে, ১৫ জানুয়ারির আগে যেসব ভারতীয় চিনে গিয়েছেন, তাঁদের এই মুহূর্তে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তবে বিমানের ক্রু ও বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হবে না। যদিও এখন ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো বিমান সংস্থা তাদের উড়ান বন্ধ রেখেছে চীনে; ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমারের সীমান্তগুলোতেও কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে।

চিড়িয়াখানায় কড়া নজরদারি
করোনাভাইরাস–আতঙ্কে কলকাতার চিড়িয়াখানায় জারি হয়েছে কড়া সতর্কতা। এই ভাইরাস যাতে কোনো পশুপাখি বা জীবজন্তুর মধ্যে আক্রমণ ঘটাতে না পারে, এই লক্ষ্যে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে কলকাতা চিড়িয়াখানায় আসা বিদেশি পর্যটকদের ওপর নজরদারি আরও বেশি জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া চীনা পর্যটকদের ওপর একইভাবে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।