করোনার ভয়াবহতার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে ভোটযুদ্ধের শেষ পর্ব

ভয়াবহ করোনা সংক্রমণের মধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের ভোটযুদ্ধের শেষ পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২৯৪ আসনে ৮ দফায় অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে আজ ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে কড়া নিরাপত্তা ও করোনাবিধি মেনে।

আজ ভোট নেওয়া হচ্ছে চার জেলার ৩৫টি আসনে। জেলা চারটি হলো মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও উত্তর কলকাতা। এর মধ্যে মালদহের ৬টি, মুর্শিদাবাদের ১১টি, বীরভূমের ১১টি ও উত্তর কলকাতার ৭টি আসন রয়েছে। এই ৩৫ আসনের প্রার্থীসংখ্যা ২৭৮।
আজ সকাল সাতটায় শুরু হয়েছে শেষ দফার নির্বাচন। বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষিত হবে আগামী ২ মে। ওই দিন পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আরও তিনটি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পদুচেরির ফলাফল ঘোষণা হবে একযোগে। বাকি তিনটি রাজ্য হলো আসাম, কেরালা ও তামিলনাড়ু।

আজকের নির্বাচনে অবশ্য রুপালি পর্দার তারকাদের আনাগোনা কম। মাত্র একজন আছেন। তিনি হলেন অভিনেত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্বামী তৃণমূলের নেতা ও সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। নয়না লড়ছেন তৃণমূলের টিকিটে উত্তর কলকাতার চৌরঙ্গী আসনে। বাকি প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন চার বিদায়ী মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী ও রাজ্যসভার একজন সাবেক সদস্য।

বিদায়ী মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন শশী পাঁজা (শ্যামপুকুর), সাধন পান্ডে (মানিকতলা), আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় (রামপুরহাট) ও চন্দ্রনাথ সিনহা (বোলপুর)। রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী (ইংরেজ বাজার, মালদহ)। এ ছাড়া তৃণমূলের তারকা প্রার্থীদের মধ্যে আরও রয়েছেন কলকাতা পৌর করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ (কাশীপুর-বেলেঘাটা আসন), পরেশ পাল (বেলেঘাটা), সাবেক রাজ্য সভার সদস্য বিবেক গুপ্তা (জোড়াসাঁকো) ও স্বর্ণকমল সাহা (এন্টালি) প্রমুখ।

বিজেপির প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কলকাতা পৌর করপোরেশনের সাবেক ডেপুটি মেয়র মীনাদেবী পুরোহিত (জোড়াসাঁকো), শিবাজি সিংহ (কাশীপুর-বেলগাছিয়া), প্রখ্যাত আইনজীবী প্রিয়াংকা টিবরেওয়াল (এন্টালি) এবং সাবেক ফুটবলার ও ভারতের জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক গোলকিপার কল্যাণ চৌবে (মানিকতলা)।

আর বাম দল সিপিএমের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক বিধায়ক ও কলকাতা করপোরেশনের সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী রূপা বাগচি (মানিকতলা), বিদায়ী বিধায়ক শ্যামলী প্রধান (নানুর) ও নয়বারের সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমান (ডোমকল, মুর্শিদাবাদ)।
শেষ দফায় ভোট নেওয়া হচ্ছে রাজ্যের ১১ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্রে। ভোটারের সংখ্যা ৮৪ লাখ ৮৬ হাজার ৪১৬।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই ৩৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ১৭টি, কংগ্রেস ও বাম দলের জোটও পেয়েছিল ১৭টি আসন। আর একটি পেয়েছিল এক স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এই ৩৫ আসনের মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে ছিল ১৯টি আসনে, বিজেপি ১১টি আসনে এবং কংগ্রেস ৫টি আসনে। বাম দল কোনো আসনে এগিয়ে থাকতে পারেনি।
এর আগে প্রথম দফায় গত ২৭ মার্চ ৩০টি, দ্বিতীয় দফায় ১ এপ্রিল ৩০টি, তৃতীয় দফায় ৬ এপ্রিল ৩১টি, চতুর্থ দফায় ১০ এপ্রিল ৪৪টি, পঞ্চম দফায় ১৭ এপ্রিল ৪৫টি, ষষ্ঠ দফায় ২২ এপ্রিল ৪৩ ও সপ্তম দফায় ২৬ এপ্রিল ৩৪টি আসনে ভোট নেওয়া হয়। তবে দুই প্রার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় সপ্তম দফায় ৩৬ আসনের পরিবর্তে ৩৪ আসনে ভোট নেওয়া হয়।

আজকের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে। ৩৫টি নির্বাচনী এলাকার ভোটকেন্দ্রে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। আজকের ভোটকে নির্বিঘ্ন করতে গোটা ভোটকেন্দ্র এলাকায় মোট ৬৬৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। আর রাজ্য পুলিশ থেকে নিয়োগ করা হয়েছে ২৪ হাজার ৭০৬ জন পুলিশ সদস্য।