করোনার মধ্যে ভারতে নতুন মহামারি ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’

ডায়াবেটিস রয়েছে—এমন কোভিড পজিটিভ রোগীদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি
ফাইল ছবি। রয়টার্স

করোনার পাশাপাশি মিউকরমাইকোসিস বা ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের’ বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে ভারতকে। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এ সংক্রমণের জেরে বাড়ছে মৃত্যুও। এ পরিস্থিতিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণকে মহামারি ঘোষণা করতে রাজ্য সরকারগুলোকে চিঠি দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

আজ বৃহস্পতিবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিঠিতে রাজ্য সরকারগুলোকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণকে মহামারি ঘোষণা করতে বলেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ সংক্রমণের ঘটনাগুলোকে ‘এপিডেমিক ডিজিজেস অ্যাক্ট’-এর আওতায় বিবেচনা করতে হবে। এর ফলে সংক্রমণের প্রতিটি ঘটনা নথিভুক্ত করে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে রাজ্য সরকারকে।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল রাজ্য সরকারগুলোকে দেওয়া চিঠিতে লিখেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণের নতুন একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিশেষত, বিভিন্ন রাজ্যে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষ, যাঁরা স্টেরয়েড থেরাপি নিচ্ছেন ও যাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁরা এ সংক্রমণে বেশি ভুগছেন। তিনি আরও বলেন, এর ফলে কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি তৈরি হয়। এ রোগের হাত থেকে সেরে উঠতে বিভিন্ন মাত্রিকের চিকিৎসা দরকার হয়। যেমন চোখের সার্জন, ইএনটি বিশেষজ্ঞ, সাধারণ সার্জন, নিউরোসার্জন, ডেন্টাল ফেসিয়াল সার্জন ও বিশেষ অ্যান্টি-ফাঙাল মেডিসিন অ্যামফোটেরিসিন প্রয়োজন হয়।

মহামারি ঘোষণার ফলে সব সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজকে মিউকরমাইকোসিসের শনাক্তকরণ, নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে বলেও চিঠিতে লিখেছেন তিনি।

আরও পড়ুন

এরই মধ্যে রাজস্থান ও তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকার ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। যদিও এ সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি ভুগছে মহারাষ্ট্র। রাজ্যটিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে দুই হাজারের বেশি মানুষের। সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৯০ জন। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫০০ জন, জানিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

তামিলনাড়ুতে ৯ জনের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এরই মধ্যে এ সংক্রমণকে ‘পাবলিক হেলথ’ আইনের আওতায় বিবেচনা করো হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, দিল্লি ও ঝাড়খন্ডে। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী দিল্লির তিনটি হাসপাতালে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিল্লির হাসপাতালগুলোয় ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ২০০ জনের বেশি মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন। আরও অনেকেই হাসপাতালে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছেন।

মিউকরমাইকোসিস একটি বিরল সংক্রমণ। মিউকর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এ সংক্রমণ হয়। সাধারণত মাটি, গাছপালা, পচনশীল ফল ও শাকসবজিতে এ ছত্রাক দেখা যায়। অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস) জানিয়েছে, মিউকরমাইকোসিস মুখে আক্রমণ করতে পারে। নাক, চোখ ও মস্তিষ্কে এর সংক্রমণ ঘটতে পারে। এ সংক্রমণে সাইনাসের ব্যথা, এক নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথার এক পাশে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, দাঁতে ব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। সংক্রমণে রোগী দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন।

এআইআইএমএস আরও জানিয়েছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষত ডায়াবেটিস রয়েছে—এমন কোভিড পজিটিভ রোগীদের এ ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কেননা, স্টেরয়েডের অপব্যবহার কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

আরও পড়ুন

সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার জেরে ভারতজুড়ে এ রোগ নিরাময়ের ওষুধ এম্ফোটেরিসিন বি-এর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এম্ফোটেরিসিন বি বা এম্ফো-বি নামের ছত্রাকনিরোধক ইনজেকশন মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত রোগীকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিদিন দিতে হয়। এটির দাম তুলনামূলক বেশি। এ কারণে সংকট থাকায় ভারতে কালোবাজারে ওষুধটির বেচাকেনা বেড়েছে। অনেকের পক্ষেই ব্যয়বহুল এ চিকিৎসার চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ পরিস্থিতিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসাসংক্রান্ত খরচের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার। গতকাল বুধবার রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ তোপে বলেছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র রাজ্যে নতুন চ্যালেঞ্জ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। এ রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই অনেকেই এর ব্যয়ভার বহন করতে পারছেন না।

আরও পড়ুন

তিনি আরও জানান, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য আগে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত রাজ্য সরকার খরচ করতে প্রস্তুত ছিল। এখন এ ক্ষেত্রে কিছু বদল আনা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য দুই লাখ রুপি পর্যন্ত ব্যয় করবে মহারাষ্ট্র সরকার। শুধু রেশন কার্ড থাকলেই এ সুবিধা পাওয়া যাবে।