করোনার মধ্যেই রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের তোড়জোর

নরেন্দ্র মোদি
নরেন্দ্র মোদি

করোনায় গোটা দেশ বিপর্যস্ত। দৈনিক নতুন সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ হাজার। জনজীবন বিপর্যস্ত। সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আচার আচরণ প্রায় স্তব্ধ। অথচ, আগামী ৫ আগস্ট, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের তোড়জোর চলছে বিরামহীন! সরকারি সব নিষেধাজ্ঞা সেখানে উপেক্ষিত। হিন্দুত্ববাদের প্রতিষ্ঠায় করোনা বাধা হতে পারেনি।

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ আজ শনিবার অযোধ্যায় গিয়ে রাম মন্দির নির্মাণের আসন্ন ভিস্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর্ব তদারকি করেন। মন্দির যেখানে তৈরি হবে, সেখানে তিনি লক্ষ্মণ, ভরত ও শত্রুঘ্নের মূর্তি তাঁদের নতুন ‘আসনে’ স্থাপন করেন।

সরকারিভাবে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে সব ধরনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা, অনুশাসন ও নিরাপদ দূরত্ববিধি মানা হবে। শিলান্যাস অনুষ্ঠানে ২০০ জনের বেশি অতিথি থাকবেন না। এ কথা বললেও তা মানা সম্ভবপর কি না সেই প্রশ্ন উঠছে। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গেই যুক্ত শতাধিক রক্ষীর উপস্থিতি অবধারিত। যদিও এই সব প্রশ্ন সরকারি স্তরে আদৌ কল্কে পাচ্ছে না। কারণ বিধি রক্ষিত হচ্ছে কি না তা বিচারের ভার সরকারেরই।

প্রধানমন্ত্রী ৪০ কেজি ওজনের রুপোর ইট ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে স্থাপন করবেন। অযোধ্যায় তিনি থাকবেন দুই ঘন্টা। তাঁর সঙ্গে থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ। তবে রাম মন্দির আন্দোলনের হোতা ৯২ বছরের লালকৃষ্ণ আধবানি, নব্বই বছরের মুরলী মনোহর যোশি বা উমা ভারতী উপস্থিত থাকবেন কি না এখনো অনিশ্চিত। বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় তাঁরা অভিযুক্ত। সুপ্রিম কোর্টে এখনো এই মামলা শেষ হয়নি।

স্পষ্টতই, অযোধ্যায় রাম মন্দির স্থাপনের কোনো কাজই করোনার জন্য বিন্দুমাত্র ব্যাহত হচ্ছে না। দিন, ক্ষণ ও তিথি অনুযায়ী সব কিছু ঠিক ঘড়ি ধরে চলছে। অথচ করোনার অজুহাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ স্তব্ধ। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ ন্যায়ালয়। সুপ্রিমকোর্ট সহ কোনো আদালতে এখনো স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয়নি। শুনানি হচ্ছে ভিডিও কনফারেন্স মারফত। অর্থাৎ ভার্চুয়াল। সর্বোচ্চ আদালতে বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলার দিন স্থির করা হচ্ছে না করোনার দরুণ। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল, জম্মু–কাশ্মীরের দ্বিখন্ডিকরণ, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরি, নাগরিকত্ব আইন সংশোধন কিংবা হেবিয়াস কর্পাস সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি এখনো শুরু হয়নি। পার্লামেন্ট বা সংসদের অধিবেশনও ডাকা হচ্ছে না। সংসদীয় কমিটির বৈঠকও হয়ে গেছে অনিয়মিত।

করোনার জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। যদিও শাসক দলের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে করোনা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। মার্চ মাসে করোনার প্রকোপ দ্রুত বাড়তে থাকলেও মধ্য প্রদেশে পালাবদলের স্বার্থে সংসদের অধিবেশন চালিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই মুহূর্তে রাজস্থানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল। রাজ্যের কংগ্রেস সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমান দিতে অবিলম্বে বিধানসভার অধিবেশন ডাকার দাবি জানালেও কেন্দ্রের শাসক দলীয় যুক্তিতে করোনা প্রাধান্য পাচ্ছে। অথচ এই করোনাকালে রাজ্যসভার ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। নতুন সদস্যরা শপথ গ্রহণও করেছেন। গোয়া ও পন্ডিচেরী বিধানসভার অধিবেশন ডাকা হয়েছে। স্পষ্টতই, করোনা হয়ে দাঁড়িয়েছে একাধারে শাসক দলের হাতিয়ার ও অজুহাত।