করোনার সংক্রমণ কমে আসছে পশ্চিমবঙ্গে

ভারতের কলকাতার পিজি হাসপাতালে দেওয়া হচ্ছে করোনার টিকা।ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের কলকাতাসহ সারা পশ্চিমবঙ্গে ধীরে ধীরে কমে আসছে করোনার সংক্রমণ। গত এপ্রিল-মে মাসে যেখানে এই রাজ্যে সংক্রমণের গড় ছিল দৈনিক ২০ হাজার, এখন এই জুন মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে দিনপ্রতি ৩ হাজারের মধ্যে।

গতকাল শনিবার রাতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় কলকাতাসহ পুরো রাজ্যে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২ হাজার ৪৮৬ জন। আর মারা গেছেন ৫৫ জন। এর মধ্যে কলকাতায় সংক্রমণের সংখ্যা ২১৭ জন, আর মৃতের সংখ্যা ৯ জন। আর এই রাজ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনার পরীক্ষা হয়েছে ৫৩ হাজার ১১৭ জনের। এখন পর্যন্ত এই রাজ্যে করোনায় সংক্রমিত হলেন ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৫২৩ জন। আর মোট করোনামুক্ত হলেন ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ২১৫ জন।

করোনায় পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসায় স্বস্তি ফিরে আসছে রাজ্যবাসীর মনে। যদিও ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, আগামী অক্টোবরে ফের এই রাজ্যে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। আর সেই লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তরও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তৃতীয় ঢেউ শিশুদের আঘাত করতে পারে—এ আশঙ্কার কথা প্রকাশিত হওয়ার পর রাজ্য সরকার রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসার জন্য সাড়ে ১১ হাজার করোনা বেড প্রস্তুত রাখছে।

এদিকে এই রাজ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য গড়া হয়েছে ২৫১টি মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোন। যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে এখন করোনা সংক্রমণের হার কমে এসেছে, তাই যেসব এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে সংক্রমণ হচ্ছে, সেসব এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে এই মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোন। রাজ্যের ১৬টি জেলা বাছাই করে গড়া হয়েছে এই জোন। তবে পুরুলিয়াসহ ৭টি জেলায় এই সংক্রমণের হার কম থাকায় সেসব এলাকায় মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোন গড়া হয়নি। এই জোনগুলোতে কড়া নজর রাখবে রাজ্য সরকার। এসব এলাকায় প্রয়োজনে দোকানপাট বন্ধ রাখা হবে, প্রতিটি নাগরিকের করা হবে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট। পাশাপাশি ওই এলাকায় বাসিন্দাদের করোনার টিকা দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হবে। এ ছাড়া ওই এলাকায় যাতায়াতের ওপরও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

গতকাল শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় কুমার ভাল্লা দেশের সব রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে এক চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, সংক্রমণের হার কমার সঙ্গে সঙ্গে যেসব রাজ্য লকডাউনের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে, সেসব রাজ্য যেন সরেজমিনে করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পাশাপাশি আরও বলা হয়েছে, কোনো ছোট অঞ্চল বা এলাকায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে সেই সব এলাকাকে স্থানীয় প্রশাসন কনটেনমেন্ট জোন হিসেবে বিবেচনা করে করোনা প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

গতকাল রাজ্য সচিবালয় নবান্ন থেকে জানানো হয়েছে, এখন মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোনের তালিকার শীর্ষে রয়েছে হাওড়া। এরপর রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা। তবে কলকাতায় করোনা সংক্রমণ অনেকটাই কমে এসেছে। আর বাকি জেলাগুলোতে করোনা যাতে নিয়ন্ত্রণে আসে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার।

এখন পর্যন্ত রাজ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে কলকাতার পাশের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। আর সর্বনিম্নে রয়েছে পুরুলিয়া জেলা। রাজ্য সচিবালয় আরও বলেছে, কোন এলাকাকে মাইক্রো কনটেনমেন্টের জোনের আওতায় নেওয়া হবে, তা ঠিক করবে প্রতিটি জেলার স্থানীয় প্রশাসন।