কর্ণাটকে হিজাব–বিতর্ক চলছেই

এক নারী (সম্ভবত একজন শিক্ষক) স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে হিজাব পরে ভেতরে প্রবেশ করতে চাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বাধা দিচ্ছেন
ছবি: টুইটার

হিজাব–বিতর্কের মধ্যেই বিজেপিশাসিত ভারতের দক্ষিণি রাজ্য কর্ণাটকের কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ মুসলিম ছাত্রীদের গতকাল সোমবার হিজাব খুলে স্কুলে ঢুকতে বাধ্য করল। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না মেনে কোনো কোনো ছাত্রীকে তাদের অভিভাবকেরা স্কুলের দরজা থেকে বাড়িও ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন।

আদালতের নির্দেশে গতকাল থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল খোলা হলেও কলেজ এখনো বন্ধ রয়েছে। এদিন কর্ণাটক হাইকোর্টে শুরু হয় হিজাব মামলার শুনানি। মুসলমান ছাত্রীদের আইনজীবী দেবদত্ত কামাথ হিজাবের পক্ষে সওয়াল করে বলেন, শিক্ষালয়ে হিজাব নিষিদ্ধ এমন কোনো আইন নেই। হিজাব পরে শিক্ষাক্ষেত্রে ঢোকা যাবে না এমন আইনও নেই। হিজাব পরলে আইনশৃঙ্খলাও নষ্ট হয় না।

শুনানির সময় হিজাব নিয়ে মামলাকারীদের কোনো কোনো আইনজীবী বলেন, কয়েকটা রাজ্যে ভোট চলছে। এ সময় সামাজিক ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমের সংযত থাকা উচিত। নানান ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে। তা বন্ধ হওয়া দরকার। বিচারপতিরা বলেন, নির্বাচন নিয়ে তাঁদের কোনো আগ্রহ নেই। নির্বাচন কমিশন থেকে এমন ধরনের অনুরোধ এলে বিবেচনা করা যাবে। আজ মঙ্গলবারও শুনানি চলবে।

গণমাধ্যমে আসা খবরে জানা যায়, রাজ্যের বেশ কয়েকটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ শিক্ষালয়ের বাইরে এসে ছাত্রীদের হিজাব খোলার নির্দেশ দেয়। কেউ কেউ নির্দেশ মেনে স্কুলে ঢুকলেও কেউ কেউ বাড়ি ফিরে যান। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। হিজাব–বিতর্ক নিয়ে স্কুলের আশপাশে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজ্য সরকার কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। নিষিদ্ধ হয়েছে সব ধরনের জমায়েত।

হিজাব নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক বাড়ছেই। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের কিছু কথা গতকাল নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘এটা নতুন ভারত। এই ভারত সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা নরেন্দ্র মোদি পরিচালনা করছেন। এই নতুন ভারত চলবে সংবিধান মেনে। শরিয়ত আইন অনুযায়ী নয়।’

কর্ণাটকের কংগ্রেস বিধায়ক জমির আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ইসলামে হিজাব হলো পর্দা। একটা বয়সের পর মেয়েরা এ পর্দা ব্যবহার করেন। ভারতে ধর্ষণ বেশি হয়, কারণ অধিকাংশ নারীই পর্দানশিন নন।’

হিজাব প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জম্মু–কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বিজেপিকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন। গত রোববার তিনি বলেন, ‘আমার আশঙ্কা, বিজেপি শুধু হিজাবেই থেমে থাকবে না। মুসলিমদের অন্যান্য অনেক প্রতীকও তারা মুছে দেবে। ভারতীয় মুসলমানদের শুধু ভারতীয় হলেই চলবে না। তাদের বিজেপিও হতে হবে।’