কলকাতা-হাওড়ায় পথে পথে সংঘর্ষ

*বিজেপির ‘নবান্ন’ অভিযানে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ
*পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামানে বহু আহত
* চার হাজার পুলিশের সঙ্গে ছিল র‌্যাফ ও বিশেষ বাহিনী

বিজেপির নেতা-কর্মীদের ঠেকাতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, ০৮ অক্টোবর
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্ন’ঘেরাও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিজেপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। বিশেষ করে কলকাতা ও হাওড়ায় পথে পথে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে পুলিশের। পুলিশের ব্যাপক লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও জলকামানের জেরে বহু বিজেপি নেতা কর্মী আহত হয়।

বিজেপি আজ বৃহস্পতিবার রাজ্য সচিবালয় নবান্ন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি আগেই ঘোষণা করেছিল। এই লক্ষ্যে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলটি রাজ্যজুড়ে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এই কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ হতে পারে এই আশঙ্কাকে মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দেন রাজ্য সচিবালয় নবান্ন স্যানিটাইজ করার জন্য ৭ ও ৮ অক্টোবর বন্ধ থাকবে। কোনো কর্মচারীকে আর আসতে হবে না দপ্তরে। এই ঘোষণার পর বিজেপি পাল্টা ঘোষণা দেয়, মমতা ভয় পেয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন সচিবালয়। তবু তাদের ঘোষিত নবান্ন অভিযান চলবে।

সেই লক্ষ্য নিয়ে আজ দুপুর ১২টায় কলকাতা ও হাওড়ার চারটি প্রান্ত থেকে বিজেপির মিছিল বের হয়। চারটি মিছিলেরই গন্তব্য নবান্ন। রাজ্য সরকার এই অভিযান ব্যর্থ করার জন্য ৪ হাজার পুলিশ নিয়োগ করে। আনা হয় র‌্যাফও। কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার পুলিশের বিশেষ বাহিনীকেও আনা হয়। রাখা হয় জলকামান। ফলে সকাল থেকে কলকাতা এবং হাওড়া কার্যত এক যুদ্ধ ক্ষেত্রের রূপ নেয়।

দুপুর ১২টায় যথারীতি তিনটি মিছিল শুরু হয় হাওড়ার সাঁতড়াগাছি, হাওড়া ময়দান ও কলকাতার হেস্টিংস মোড় থেকে। বেলা দেড়টায় শেষের মিছিলটি বের হয় কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় বিজেপির রাজ্য কার্যালয়ের সামনে থেকে।

বিজেপির নেতা-কর্মীদের সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, ০৮ অক্টোবর
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কিন্তু পুলিশ নবান্ন যাওয়ার সব পথ বন্ধ করে দেয় আগেভাগেই। পথে পথে তৈরি করে ব্যারিকেড। পুলিশের ঘোষণা ১৪৪ ধারা আইন জারি থাকায় কাউকে নবান্নে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ফলে সব মিছিলকেই আটকে দেয় পুলিশ। তবুও বিজেপির কর্মীরা চার এলাকারই বিভিন্ন ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়।

এ সময় হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে পুলিশের সঙ্গে বিজেপি নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ লাঠিপেটা করে বিজেপির মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে চাইলে পুলিশ কেমিক্যাল মিশ্রিত বেগুনি রঙের পানি ছোড়ে জলকামান দিয়ে। এতে গুরুতর আহত হয় বিজেপি নেতা রাজু মুখোপাধ্যায়। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এতেও পুলিশ বিজেপি কর্মীদের থামাতে না পারলে ছোড়ে কাঁদানে গ্যাস। কাঁদানে গ্যাসের শেলে বহু বিজেপি কর্মী আহত হয়। একই চিত্র দেখা যায় হাওড়া ময়দান ও হেস্টিংস মোড়ে। এই দুই স্থানেও পুলিশ বিজেপি কর্মীদের খণ্ডযুদ্ধ চলে। কলকাতার বড় বাজার এবং সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে ব্যাপক খণ্ডযুদ্ধ হয় পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের। এ সময় বিজেপি কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে।

পুলিশের সঙ্গে বিজেপির নেতা-কর্মীদের বাগ বিতণ্ডা। পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, ০৮ অক্টোবর
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

বিজেপি নেতারা বলেছেন, বিজেপির উত্থানে ভয় পেয়ে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাইতো নিজে সচিবালয় বন্ধ করে পালিয়েছেন। ভবিষ্যতে পালিয়ে যাবেন এই বাংলা থেকেও। একুশ হবে বিজেপির। রাজ্যের ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। এই রাজ্যে ফিরবে গণতন্ত্র, বিদায় নেবে স্বৈরতন্ত্র।

যদিও বিজেপির এই স্বপ্নকে স্বপ্ন হিসেবে বিবেচনা করে তৃণমূল নেতা সৌগত রায় বলেছেন, বিজেপির এই স্বপ্ন দিবাস্বপ্নই থেকে যাবে। একুশে ক্ষমতায় আসবে তৃণমূলই। তৃতীয়বারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।

আজকের বিজেপির এই নবান্ন অভিযানে যোগ দিতে এসেছিলেন বিজেপির যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি বেঙ্গালুরুর সাংসদ তেজস্বী সূর্য। রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চা দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ, রাজনৈতিক হিংসা বন্ধ করা এবং বেকার সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে রাজ্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এই নবান্ন অভিযানের ডাক দেয়। এই অভিযানে অংশ নেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ, কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়, অরবিন্দ মেনন, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বস, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। যদিও আজ সকাল থেকে বিজেপির নেতা-কর্মীরা নবান্ন অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য কলকাতা ও হাওড়ার দিকে আসার সময় বহু বিজেপি কর্মীদের বহনকারী যানবাহন আটকে দেয়। এর ফলে বিজেপি কর্মীরা ওই সব স্থানে সড়ক অবরোধ করে। এসব ঘটনার জেরে আজ কলকাতা এবং হাওড়ার বিভিন্ন স্থান কার্যত খণ্ডযুদ্ধের রূপ নেয়।