কেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায় পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি

দিলীপ ঘোষ
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এ বছরের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই রাজ্যে বিজেপিকে জেতানোর জন্য সব দিক থেকে প্রস্তুতি নিয়ে আদাজল খেয়ে নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। এবার রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব চাইছেন, কেন্দ্রের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে। দলটির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের গতকালের মন্তব্যে এ কেন্দ্রনির্ভরতা কমানোর ইঙ্গিত স্পষ্ট। রাজ্য নেতৃত্ব মনে করছেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের অতি তৎপরতা আখেরে খারাপ হয়েছে।

একেবারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাসহ গোটা দেশের তা–বড় বিজেপি নেতারা পশ্চিমবঙ্গে চষে বেড়িয়েছেন নির্বাচনের আগে। কিন্তু বিজেপি হেরেছে। যেখানে বিজেপির ২০০ আসনে জেতার দাবি ছিল, সেখানে বিজেপি মাত্র ৭৭ আসনে জয়ী হতে পেরেছে। তবে দলটির কাছে স্বস্তির বিষয়, ২০১৬ সালে এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল মাত্র তিনটি আসনে। এবার সেই আসন বেড়ে হয়েছে ৭৭টি।

তবে এবারের এ ফলাফলেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি রাজ্য নেতৃত্ব সন্তুষ্ট নন।

রাজ্য নেতৃত্ব মনে করেন, মমতা যেভাবে বিজেপির নেতাদের ‘বহিরাগত’ বলে প্রচার চালিয়েছিলেন, সেই প্রচারও বিজেপির বিপক্ষে গেছে। এ রাজ্যের বহু বাঙালিও মেনে নিতে পারেননি বিজেপিকে। বরং তাঁরা বিজেপির ‘বহিরাগত’ তত্ত্বকে সমর্থন করে ভোট দিয়েছিলেন তৃণমূলকে।

গতকাল রাজ্য বিজেপির নেতাদের এক বৈঠকে মমতার বহিরাগত তত্ত্বের ইতিবাচক ফলাফলকে কার্যত মেনে নিয়েছে বিজেপি। বিজেপির রাজ্য নেতাদের বৈঠকের পর রাজ্য কমিটির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘আমাদের ভাবনাটা এবার আমাদেরই ভাবতে দিন, বুঝতে দিন।’

দিলীপের এ বক্তব্যের পর বৈঠকে উপস্থিত নেতারা তাঁকে করতালি দিয়ে অভিনন্দিত করেন।

দিলীপ ঘোষ এ কথাও বলেছেন, ‘ভোট–পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কীভাবে তাঁরা আমাদের সাহায্য করতে পারেন। আমি তাঁদের বলে দিয়েছি, এত দিন আপনারা আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। এ জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। এবার আমাদের বিষয় আমাদেরই বুঝে নিতে দিন।’

ভোট–পরবর্তী এ রাজ্যের পরিস্থিতি জানার জন্য কেন্দ্রীয় বিজেপি এ রাজ্যে চার সদস্যের একটি তদন্ত দলও পাঠায় কেন্দ্র। শুধু তা–ই নয়, আগামী সপ্তাহে আরেকটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের আসার কথা এই রাজ্যে। ওই প্রতিনিধিদলের আপাতত এই রাজ্যে আসার দরকার নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন দিলীপ। তিনি আরও বলেছেন, এবার আক্রান্ত কর্মীদের পাশে থাকার জন্য বিজেপির রাজ্য নেতারা ছুটবেন এলাকায় এলাকায়। প্রয়োজনে দল ভোট–পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে রাজ্য সরকারের ওপর চাপের সৃষ্টি করবে।

দিলীপ বলেন, এবার এই রাজ্যের বিজেপি আর কেন্দ্রীয় কমিটির খবরদারি চাইছে না।