কোভিশিল্ডের টিকা: ভারতের হুমকিতে নমনীয় ইউরোপ

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি করোনার টিকা কোভিশিল্ড
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) কড়া হুমকি দেওয়ার দুদিনের মধ্যে ইউরোপের নয়টি দেশ ভারতে তৈরি কোভিডের টিকা ‘কোভিশিল্ড’কে মান্যতা দিল। সরকারি সূত্রের বরাতে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা বৃহস্পতিবার এই খবর জানিয়ে বলে, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, জার্মানি, স্লোভেনিয়া, গ্রিস, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও ইস্টোনিয়া জানিয়েছে, তারা ‘কোভিশিল্ড’ টিকা নেওয়া পর্যটকদের বিনা বাধায় সে দেশে ঢোকার অনুমতি দেবে।
এর আগে ইইউ স্বীকৃত ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি জানিয়েছিল, তারা মাত্র চারটি টিকাকে মান্যতা দিচ্ছে। ফাইজার, মডার্না, জনসন ও অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এই চারটি টিকা নেওয়া যাত্রীদের বিনা বাধায় ইউরোপের দেশগুলোয় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কেভিশিল্ডের নাম সেই তালিকায় ছিল না।

ইইউয়ের এই সিদ্ধান্ত জানার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের দিক থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে প্রকারান্তরে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র অনুযায়ী, ইইউকে জানিয়ে দেওয়া হয়, কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনকে মঞ্জুরি না দেওয়া হলে ভারতও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। ইইউ যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের নিভৃতাবাসের নির্দেশ দেওয়া হবে।

গত মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এই বিষয়টি নিয়ে ইইউ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের ভ্যাক্সিনেশন পাসপোর্টে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনকে ঢোকানো নিয়ে আলোচনা করেন। পরে টুইট করে বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে ভারত কথা চালিয়ে যাবে। জয়শঙ্করের দৌত্যে কাজ হয়। সরকারি সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার ৯টি দেশ কোভিশিল্ডকে গ্রাহ্য করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এবার কোভ্যাক্সিনের অনুমতির জন্যও চাপ দেওয়া হবে।

ইইউয়ের মান্যতা আদায় হলেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বৃহস্পতিবার একটা বড় ধাক্কা খেয়েছে। আমেরিকার সংস্থা ‘নোভাভ্যাক্স’ এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেরাম ভারতে ‘কোভাভ্যাক্স’ টিকা তৈরি করেছে। ২ থেকে ১৭ বছয় বয়সীদের উপর এই টিকা প্রয়োগের পরীক্ষার অনুমতি তারা চেয়েছিল। কিন্তু ভারতের ড্রাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের সেই ট্রায়ালের অনুমতি দেয়নি। সেরাম চেয়েছিল ২–১১ ও ১২–১৭ বছর বয়সীদের ওপর মোট ৯২০ জনের ক্ষেত্রে এই টিকা পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করতে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই বৃহস্পতিবার সরকারি সূত্রের বরাতে জানায়, বিশেষজ্ঞ কমিটি সেই অনুমতি দিতে রাজি হয়নি। সেরামকে কমিটি জানিয়েছে, ১৮ বছর বয়সীদের ওপর এই টিকার পরীক্ষার বিস্তারিত ফল আগে জানাতে হবে। তা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত।

কোভাভ্যাক্স–এর মতো তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হয়নি রাশিয়ার তৈরি ‘স্পুতনিক লাইট’কেও। হায়দরাবাদের ডক্টর রেড্ডিজ ল্যবরেটরিজ এই অনুমতি চেয়েছিল। তাদের বলা হয়েছে, স্পুতনিক লাইট–এর তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
ভারতীয় বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা জাইডাস ক্যাডিলা তাদের তৈরি টিকা ‘জাইকভ–ডি’র জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের জন্য ড্রাগস কন্ট্রোলার অফ ইন্ডিয়ার কাছে আবেদন জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার এই খবর জানিয়ে তারা বলেছে, অনুমতি পেলে তারা বছরে ১২ কোটি টিকা তৈরি করতে পারবে। সংস্থার দাবি, ইতিমধ্যেই তারা তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ করেছে। অনুমতি পেলে এটি হবে ভারতে ব্যবহারযোগ্য পঞ্চম টিকা।