জনগণকে আগ্রহী করতে টিকা নেবেন মোদি

ভারতে গণটিকাকরণ শুরু হয়েছে ১৬ জানুয়ারি থেকে। গড়ে দিনে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল কমবেশি ৩ লাখ। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দেশে মোট টিকা নিয়েছেন ৮ লাখ মানুষ।

নরেন্দ্র মোদি
ফাইল ছবি

ভারতে অনাগ্রহ কাটিয়ে দেশবাসীকে টিকায় আরও বেশি আগ্রহী করে তুলতে আসরে নামল খোদ কেন্দ্রীয় সরকার। টিকা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা কাটাতে সরকারি উদ্যোগে দেশব্যাপী প্রচার অভিযান শুরু হলো। তার সূচনা করলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। এই প্রচারাভিযানের পাশাপাশি বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও টিকা নেবেন। টিকা নেবেন পঞ্চাশোর্ধ্ব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও।


সরকারি সূত্রের বরাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রধানমন্ত্রীর টিকা নেওয়ার এই খবর জানিয়েছে।


গণটিকাকরণে দেশজোড়া অনাগ্রহ সরকারকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। ফেলেছে চিন্তাতেও। শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের প্রথম পর্যায়ে টিকা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত অন্য রকমের সমালোচনাও সৃষ্টি করেছে। বলা হচ্ছে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত না হওয়ার দরুন নেতারা টিকা নিচ্ছেন না। জনগণকে গিনিপিগ বানানো হচ্ছে। অপপ্রচার ও সমালোচনা এড়াতে যেমন প্রধানমন্ত্রীসহ শীর্ষ নেতাদের টিকা গ্রহণের সিদ্ধান্ত, তেমনি বিভ্রান্তি দূর করতে শুরু হয়েছে প্রচারাভিযান। বলা হচ্ছে, টিকাসংক্রান্ত সরকারি তথ্যের ওপরই যেন সবাই আস্থা রাখেন।


প্রথম পর্যায়ে টিকা দেওয়ার কথা তিন কোটি জনতাকে। তাঁদের মধ্যে আছেন সব ধরনের চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী ও জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। এর পরের পর্যায়ে টিকা দেওয়ার কথা দেশের ২৭ কোটি প্রবীণ ও কোমর্বিডিটি (একজন ব্যক্তি, যাঁর একটি রোগ বা উপসর্গ আছে, তার আরও এক বা একাধিক অন্যান্য রোগ বা উপসর্গ) থাকা নবীন নাগরিকদের। প্রধানমন্ত্রীসহ রাজনৈতিক নেতারা এই পর্বেই টিকা নেবেন। যদিও সেই সময় কবে আসবে, কারও জানা নেই। কারণ, যে ঢিমেতালে টিকা চলছে, তাতে প্রথম পর্বের ৩ কোটি মানুষের টিকা শেষ হতে চার-পাঁচ মাস লেগে যাবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের শুরু হবে তার পর।

বিতর্ক ও সংশয়ের সূত্রপাত ভারত বায়োটেকের তৈরি ১০০ শতাংশ দেশজ টিকা ‘কোভ্যাক্সিন’ জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের ছাড়পত্র দেওয়াকে কেন্দ্র করে। ওই টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ না হওয়া সত্ত্বেও ছাড়পত্র পাওয়ায় বহু বিশেষজ্ঞ বিস্মিত। তাঁরা প্রশ্নও তুলেছেন।


ভারতে গণটিকাকরণ শুরু হয়েছে ১৬ জানুয়ারি থেকে। দেশে মোট ৩ হাজার ৬টি টিকাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে গড়ে দিনে ১০০ জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে। অর্থাৎ দিনে কমবেশি ৩ লাখ। অথচ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন বলেছেন, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দেশে মোট টিকা নিয়েছেন ৮ লাখ মানুষ। প্রথম দুদিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সংখ্যা ছিল ছয় শর মতো। দু-তিন জনের মৃত্যুও হয়েছে—যদিও তা টিকার জন্য কি না, সে বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। সরকার মনে করছে, বিভিন্ন মহলের নানা ধরনের ‘অপপ্রচার ও গুজব’এই অনাগ্রহের কারণ। বিরোধীরা আবার বলছেন, শীর্ষ নেতাদের উচিত সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া। নেতারা এগিয়ে এলে জনতা আস্থা পায়।

বিতর্ক ও সংশয়ের সূত্রপাত ভারত বায়োটেকের তৈরি ১০০ শতাংশ দেশজ টিকা ‘কোভ্যাক্সিন’ জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের ছাড়পত্র দেওয়াকে কেন্দ্র করে। ওই টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ না হওয়া সত্ত্বেও ছাড়পত্র পাওয়ায় বহু বিশেষজ্ঞ বিস্মিত। তাঁরা প্রশ্নও তুলেছেন। বহু সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা নিতে চাইছেন না। অনেকে আবার ‘কোভ্যাক্সিন’ টিকায় আপত্তি জানাচ্ছেন।

প্রথম পর্যায়ে টিকা দেওয়ার কথা তিন কোটি জনতাকে। তাঁদের মধ্যে আছেন সব ধরনের চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী ও জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন বিশেষজ্ঞদের তোলা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করেছেন। বৃহস্পতিবার ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভারতে তৈরি টিকা নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে। পেতে চাইছে। অথচ দেশের এক স্বার্থান্বেষী মহলের অপপ্রচার বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, এই মিথ্যাচার বন্ধ হওয়া উচিত। সব বড় হাসপাতালের চিকিৎসকেরা টিকা নিয়েছেন। শুধু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।