জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে পারে ভারত

পপুলেশন মিথ: ইসলাম, ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যান্ড পলিটিকস সাহাবুদ্দিন ইয়াকুব কুরেশি

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন শিক্ষা, সচেতনতা ও প্রকৃত উদ্যোগ। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ইরানসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের ইমাম ও ওলামারা যেভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন, ভারতকে তা থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০টি মুসলমান দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন ভারতের সাবেক মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সাহাবুদ্দিন ইয়াকুব কুরেশি। তাঁর লেখা সাম্প্রতিক বই পপুলেশন মিথ: ইসলাম, ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যান্ড পলিটিকস নিয়ে গতকাল শুক্রবার আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

কুরেশি বলেন, এই বইয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কিছু ধারণা তিনি ভুল প্রমাণ করতে চেয়েছেন। প্রথম ধারণা, মুসলমানদের সন্তান বেশি হয়। দ্বিতীয় ধারণা, বেশি নারীকে বিয়ে করার দরুন ভারতীয় মুসলমানরা সংখ্যার দিক থেকে একদিন হিন্দুদের টপকে যাবে। তৃতীয় ধারণা, ইসলামে পরিবার নিয়ন্ত্রণ নিষিদ্ধ।

কুরেশি বলেন, ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে জন্মহার বেশি এবং পরিবার নিয়ন্ত্রণের গ্রহণযোগ্যতা হিন্দুদের তুলনায় কম, ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু এরই পাশাপাশি সত্য হলো, পরিবার নিয়ন্ত্রণে হিন্দুদের গ্রহণযোগ্যতা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন, হার ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

তথ্য দিয়ে কুরেশি বলেন, ১৯৫১ সালে ভারতের জনসংখ্যার ৮৪ শতাংশ ছিল হিন্দু। ৫০ বছরে তা কমে হয়েছে ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ। পক্ষান্তরে মুসলমান জনসংখ্যা ৯ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, গত ৫০ বছরে পরিবার নিয়ন্ত্রণের গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে মুসলমান জনতা হিন্দুদের তুলনায় এগিয়ে গেছে। ৫০ বছর আগে একজন হিন্দু পরিবারের তুলনায় মুসলমানদের সন্তান ছিল ২ দশমিক ১ জন। আজ দুই সম্প্রদায়েই তা কমে হয়েছে পরিবারপিছু শূন্য দশমিক ৫। কুরেশি বলেন, ‘মুসলমানরা একদিন হিন্দুদের টপকে যাবে—এই ধারণা কতটা ভ্রান্ত, সেটাই আমি দেখিয়েছি। ১৯৫১ সালে ভারতে মুসলমানদের চেয়ে হিন্দুদের সংখ্যা ছিল ৩০ কোটি বেশি। আজ তা ৮০ কোটি বেশি। এই হারে চললে ৮০ বছরে মুসলমানদের চেয়ে হিন্দু জনসংখ্যা হবে ১০০ কোটি বেশি।’

কুরেশি বইয়ে ধর্মসংক্রান্ত একটা আলাদা অধ্যায় রেখেছেন। কুরেশি বলেন, ভারতে প্রতিটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিষয়টি রাখা উচিত ছিল। কিন্তু কেউ উদ্যোগী হয়নি। জরুরি অবস্থার অভিজ্ঞতার পর কেউ সাহসও দেখায়নি। ভারতীয় সংসদে যত বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, জনসংখ্যা বা পরিবার নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত প্রশ্নের হার সেখানে মাত্র শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ! ফলে একমাত্র উপায় শিক্ষার প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন, বাল্যবিবাহ বন্ধ, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন পরিষেবার জোগান বৃদ্ধি এবং ধর্মীয় প্রচার।

ধর্মীয় প্রচার কীভাবে সহায়ক—কুরেশি সেই প্রমাণও বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন। ইরান, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০ মুসলিম দেশের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দেশগুলো পরিবার নিয়ন্ত্রণে ইমাম ও ওলামাদের সাহায্য নিয়েছে। মসজিদ থেকে বারবার ইমামরা এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণকে সজাগ ও শিক্ষিত করেছেন।