টিকা উৎপাদন দ্বিগুণ করার চেষ্টা ভারতের

ফাইল ছবি: রয়টার্স

অর্থনীতির স্বার্থে ব্যাপক লকডাউন আর সম্ভব নয়। অথচ নতুন সংক্রমণ দিন দিন মারাত্মক আকার নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দেওয়ার একমাত্র উপায় টিকাকরণে জোর দেওয়া। সেই লক্ষ্যে ভারতের প্রতিষেধক উৎপাদন অতিদ্রুত দ্বিগুণ করার চেষ্টা শুরু হয়েছে।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বায়োটেকনোলজি বিভাগ যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানিয়েছে, আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে ভারতে প্রস্তুত দুটি করোনা প্রতিষেধকের উৎপাদন মাসে ১৪ কোটি করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের বরাতে এই খবর জানিয়ে সংবাদমাধ্যম বলেছে, এই সঙ্গে চেষ্টা চলছে চলতি বছরেই টিকার উৎপাদন দ্বিগুণ করার।

পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’ উৎপাদিত হচ্ছে মাসে ৬ কোটি ডোজ। হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেকে ‘কোভ্যাক্সিন’ উৎপাদন হচ্ছে মাসে ৪ কোটি। ৪৫ ঊর্ধ্ব সবাইকে টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের পরিচালক রণদীপ গুলেরিয়ার মতে, দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে গেলে যত সম্ভব মানুষকে দ্রুত টিকা দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, বিধিনিষেধ মানানো কঠিন হয়ে পড়ছে। মানুষের ভয়ও তুলনায় কমে গেছে। সেই কারণে টিকা উৎপাদন দ্বিগুণ করার আবশ্যকতার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। উৎপাদন আরও বাড়ানোর জন্য নতুন স্থাপনার ওপরও জোর দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে শুধু উৎপাদন করলেই চলবে না, টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থাও একই সঙ্গে করতে হবে। আপাতত আগস্ট মাসের মধ্যে ১৪ কোটি উৎপাদন বর্তমান ব্যবস্থাতেই সম্ভব।

করোনার প্রথম ঢেউয়ে দৈনিক সংক্রমণ এক লাখ কখনো হয়নি। অথচ দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত সোমবার তা হয়ে যায়। মঙ্গলবার অবশ্য সংক্রমণের তীব্রতা (৯৬ হাজার) কিছুটা কম ছিল। তবে চিন্তার বিষয়, সংক্রমণের সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। মৃত্যুহার ৫ শতাংশে পৌঁছে গেছে। সামাল দিতে সরকার ২৪ ঘণ্টা টিকাকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারি ও বেসরকারি স্তরে টিকাকেন্দ্রের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। সোমবার পর্যন্ত দেশে মোট টিকা দেওয়া হয়েছে ৮ কোটি ৩১ লাখ মানুষকে। দৈনিক টিকার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪০ লাখের বেশি।

তবে চব্বিশ ঘণ্টা টিকাকরণ কর্মসূচি সর্বত্র সম্ভব হবে না। মহারাষ্ট্রের একাধিক শহরে নৈশকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। পাঞ্জাব ও ছত্তিশগড়েও। দিল্লিতেও মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা কারফিউ।

করোনার এই আবহে নতুন চিন্তা পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে। এই রাজ্যের মোট আট দফা ভোটের তৃতীয় দফা শেষ হলো মঙ্গলবার। এখনো বাকি পাঁচ দফার ভোট। অথচ দিন দিন রাজ্যে সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। এই অবস্থায় তৃণমূল নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, করোনার দোহাই দিয়ে কোনোভাবেই যেন ভোট স্থগিত রাখা না হয়। রাজ্যে প্রথম দুই দফার ভোট হয়েছে বিজেপির প্রভাবাধীন এলাকায়। উত্তরবঙ্গেও বিজেপির ঘাঁটি বেশ মজবুত। বাকি এলাকায় তৃণমূলের প্রভাব বেশি। সংগত কারণেই মমতা চাইছেন না, এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে বিজেপির সুবিধা করে দেওয়া হোক। সে জন্য নির্বাচন কমিশনের ওপর তিনি আগে থেকেই চাপ সৃষ্টি করে রাখলেন।