টিকা নীতি নিয়ে বাগ্‌যুদ্ধ

নরেন্দ্র মোদি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ফাইল ছবি

ভারতে নতুন টিকা নীতি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক বাগ্যুদ্ধ। শাসক বিজেপি নেতারা যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদৃষ্টির প্রশংসায় পঞ্চমুখ, বিরোধীরা তেমন মুখর প্রধানমন্ত্রীর বিলম্বিত সিদ্ধান্তের সমালোচনায়। বিরোধী নেতাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী চার মাস আগে এই সিদ্ধান্ত নিলে বহু মানুষকে অকারণে মরতে হতো না।

প্রধানমন্ত্রীর নতুন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য আলোচনার স্তরে উঠে এসেছে নতুন টিকানীতি বাস্তবায়নে খরচের প্রসঙ্গ। দেশের ৭৫ ভাগ জনতার টিকার দায় নেওয়ার ফলে কেন্দ্রীয় কোষাগারে বাড়তি চাপ কত পড়বে, তার কোনো সরকারি হিসাব এখনো দেওয়া হয়নি। যদিও অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্রমতে, শুধু টিকার জন্যই বাড়তি খরচ হবে ৫০ হাজার কোটি রুপি। তা ছাড়া নভেম্বর পর্যন্ত দেশের দরিদ্রদের বিনা মূল্যে খাদ্য সরবরাহের জন্য সরকারের বাড়তি খরচ হবে আরও ৩০ হাজার কোটি। এই ৮০ হাজার কোটি রুপি কীভাবে জোগাড় হবে, তার কোনো ইঙ্গিত এই মুহূর্তে সরকার দেয়নি।

বিজেপি নেতারা সোমবার থেকেই সমস্বরে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা শুরু করেছেন। সরকার পক্ষের এই প্রশংসার পাশাপাশিই শোনা গেছে বিরোধীপক্ষের তীক্ষ্ণ সমালোচনা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, দেরি করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কত মানুষকে খামোখা প্রাণ দিতে হলো। একই সুর কংগ্রেসের সাবেক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের কণ্ঠে। তাঁর কথায়, অবশেষে বিরোধীদের দাবি মানতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী। সামাজিক মাধ্যম কিন্তু ভরে গেছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের প্রশংসায়, যাঁরা মাত্র কদিন আগে টিকা নীতিকে ‘খামখেয়ালি’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে বুঝিয়েছিলেন, সরকার রাজি না হলে তাঁরা নীতি পরিবর্তনে বাধ্য করবেন। সুপ্রিম কোর্টের কঠোর মনোভাব আঁচ করেই মোদি শেষ পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ দায়িত্ব ঘাড়ে নিতে বাধ্য হন। পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম নেতা আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য প্রবল কটাক্ষে বলেছেন, ‘গাধারা নাকি ঘোলা করে জল খায়।’ টিকা নীতি নিতে শুরু থেকে মোদির প্রবল সমালোচক কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর মন্তব্য, ‘আপনি যে ক্ষত সৃষ্টি করেছেন, এই ঘোষণায় তা সারবে না।’ প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেছেন, ‘ভাষণ নয়, ক্ষমা চান।’

নতুন এই টিকা নীতি নতুন করে যে প্রশ্ন সামনে এনেছে, তা অর্থনীতিকেন্দ্রিক। গত বাজেটে টিকাকরণের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ৩৫ হাজার কোটি রুপি। সেই টাকা কীভাবে খরচ হচ্ছে, টিকার খরচ সরকার কীভাবে মেটাবে—সব জানতে চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। তার আগেই এই নতুন নীতি ঘোষণা। টিকা ও বিনা মূল্যে দরিদ্রদের খাদ্য বিতরণে বাড়তি খরচ ৮০ হাজার কোটি রুপি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ দীপংকর দাশ গুপ্ত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোষাগার ঘাটতি এমনিতেই উদ্বেগজনক অবস্থায় চলে গেছে। বাড়তি খরচের বোঝা প্রধানমন্ত্রী সাধারণের ওপর কতটা চাপাবেন, তা দেখার বিষয়। রাজ্যের যে দায় তিনি নিয়েছেন, তা রাজ্যগুলোর প্রাপ্য থেকে পুষিয়ে নিতে পারেন।’ বিভিন্ন রাজ্য অবশ্য জানতে আগ্রহী, টিকা কিনতে তারা ইতিমধ্যে যে টাকা খরচ করেছে, তা কেন্দ্র শোধ করবে কি না। কেন্দ্র এখনো নির্বাক।

টিকা নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই মন পরিবর্তনের একটা বড় কারণ আগামী বছরের উত্তর প্রদেশ বিধানসভার ভোট। রাজ্যবাসীর মনে বিজেপির যে স্থান ছিল, এখন যে তা নেই, পঞ্চায়েত ভোটের ফল তা বুঝিয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক ধারণা, নতুন টিকা নীতি সেই প্রতিকূল অবস্থা অনুকূলে আনতে সহায়ক হবে।