টিকাকরণেও কারচুপি, রেকর্ড গড়ে পপাত ধরণিতলে

ভারতে গত ১৬ জানুয়ারি করোনার গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়
ছবি: এএফপি

ভারতে কোভিডের সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা ঘিরে প্রশ্ন ওঠার পর এবার টিকাকরণের ‘রেকর্ড’ নিয়েও কারচুপির অভিযোগ উঠে গেল। এবারও অভিযোগে বিদ্ধ কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। অভিযোগ, দল ও প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে বিজেপিশাসিত বেশ কয়েকটি রাজ্যে টিকা মজুত করা হয়। যার দরুন, ১৮-ঊর্ধ্বদের বিনা মূল্যে টিকাকরণের প্রথম দিন প্রায় ৯০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়। অথচ তার পরের দিনই টিকার সংখ্যা ঝুপ করে কমে যায় ৪০ লাখের বেশি!

টিকাকরণে এই ‘রেকর্ড’ গড়ার জন্য বিজেপির নেতারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অথচ ‘কারচুপি’র অভিযোগ ওঠার পর তাঁরা নীরব। সরকারি স্তরেও কোনো ব্যাখ্যা নেই।

বিরোধীদের চাপ ও সুপ্রিম কোর্টের বিরূপ মনোভাব আন্দাজ করে দেশব্যাপী ১৮-ঊর্ধ্বদের ৭৫ শতাংশের টিকাকরণের দায় কেন্দ্রীয় সরকার হাতে নেয়। প্রধানমন্ত্রী নিজেই জাতির প্রতি ভাষণে সেই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ২১ জুন থেকে গণটিকাকরণের সেই কর্মসূচি শুরু হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, প্রথম দিন সারা দেশে ৮৬ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। কো-উইন অ্যাপ অনুযায়ী সংখ্যাটি আবার ৯০ লাখ। অভাবিত এই সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী সবাইকে অভিনন্দনও জানান। তাঁর নেতৃত্বের জয়গান গেয়ে শুরু হয় বিজেপি নেতাদের টুইট। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন মঙ্গলবার বলেন, এক দিনে এত জনকে টিকা দিয়ে ভারত বিশ্বে রেকর্ড গড়ল। যদিও ৯ জুন আন্তর্জাতিক ‘নেচার’ ম্যাগাজিন জানিয়েছিল, চীন এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দৈনিক দুই কোটি মানুষকে টিকা দিয়েছে।

অথচ পরের দিন, ২২ জুন সারা দেশে টিকা দেওয়া হয় মাত্র ৫৪ লাখ ২৪ হাজার জনকে! সংখ্যায় এই পতনের পর থেকেই শুরু হয় ‘রেকর্ড’ গড়ার নেপথ্য রহস্যের অনুসন্ধান। দেখা যায়, বহু বিজেপিশাসিত রাজ্য ২১ জুন রেকর্ড গড়ার উদ্দেশ্যে কদিন ধরেই টিকা মজুত করছিল। ইচ্ছাকৃতভাবে কম মানুষকে টিকা দিচ্ছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এমন ১০টি রাজ্যের মধ্যে ৭টিই বিজেপিশাসিত। দেখা যায়, ১৬ থেকে ২০ জুন সারা দেশে দৈনিক টিকার পরিমাণ ৪০ লাখের কম। অথচ ২১ জুন তা দ্বিগুণ হয়ে যায়!

রাজনৈতিক বাহবা নেওয়ার জন্য ‘রেকর্ড’ গড়ার এই মানসিকতার বিরুদ্ধে সরব বিরোধীরা। সরকারকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম বলেন, ‘রোববারে মজুত, সোমবার টিকা, মঙ্গলবার ফের খোঁড়ানো শুরু। এক দিনে টিকাকরণে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার এটাই নেপথ্য রহস্য।’

টুইট করে তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে এই কীর্তি গিনেস বুকে জায়গা পাবে। মোদি সরকার মেডিসিনের জন্য নোবেল পুরস্কারও পেতে পারে। “মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়” স্লোগানের বদলে এখন পড়তে হবে “মোদি হ্যায় তো মিরাকল হ্যায়”।’ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘এটা এক দিনের খেলা নয়। এখন পরিষ্কার যে ওই ঘটনা ছিল পরিকল্পিত। সরকারের নষ্ট হওয়া ভাবমূর্তি ফেরানোর তাগিদে। আমাদের দরকার চার-পাঁচ মাস ধরে দৈনিক ৮০ লাখ মানুষের টিকাকরণ।’

কোভিড বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান এন কে অরোরা জানান, ‘দৈনিক এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া ভারতের লক্ষ্য। সোয়া কোটি টিকা মজুত করার ক্ষমতা দেশের রয়েছে।’ কিন্তু জোগান? চাহিদা ও জোগানের বিস্তর ফারাকের দরুন চলতি বছরের শেষে ১০০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না, সেই সংশয় বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। সেই সঙ্গে বড় হচ্ছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন।