তিন কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা মোদির

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

অবশেষে কৃষকদের আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর সরকার তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি।

ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, এসব আইন প্রণয়নের পর প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলন করছেন কৃষকেরা। এ আন্দোলনের জেরে রাজধানী দিল্লি অবরুদ্ধও করেছিলেন দেশটির কৃষকেরা। কিন্তু সরকার প্রথমে অনমনীয় অবস্থানে ছিল। ফলে কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করলেও দুই পক্ষ কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। এরপর উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের নির্বাচনের আগমুহূর্তে এসে আজ শুক্রবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

গত বছর মোদি সরকার তিনটি কৃষি আইন পাস করার পর ভারতের কৃষকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন
ফাইল ছবি: এএফপি

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, মোদি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘এই তিনটি কৃষি আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল কৃষকের মঙ্গলের জন্য। কিন্তু আমরা একদল কৃষককে এটা বোঝাতে সক্ষম হতে পারিনি।’

ভারতে আজ গুরু পুরাব উৎসব। শিখদের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে ভারতজুড়ে এ উৎসব শুরু হয়েছে। এ উৎসবের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন ঘোষণা দিলেন। এনডিটিভি বলছে, ভারতের পাঞ্জাবে এ উৎসব বড় পরিসরে উদ্‌যাপন করা হয়। সেখানে আগামী তিনি মাসের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে মোদি এমন ঘোষণা দিলেন।

মোদি বলেন, ‘হয়তো আমাদের চেষ্টার ঘাটতি ছিল, যার কারণে কৃষকদের এই আইন সম্পর্কে বোঝাতে পারিনি। কিন্তু আজ গুরু নানকের জন্মদিন। এদিন কাউকে দোষ দেওয়ার নয়। আজ আমি দেশের মানুষকে বলতে চাই, আমরা এই তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি বলেন, এ মাসের শেষে পার্লামেন্টে অধিবেশন বসবে। এ অধিবেশনে আইন তিনটি বাতিলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

নয়াদিল্লিতে কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল
ফাইল ছবি: এএফপি

কৃষি আইন তিনটি বাতিলের ঘোষণা দিলেও এ আইনের পক্ষে কথা বলেছেন মোদি। তিনি বলেন, দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য এসব আইন করা হয়েছিল। কিছু কৃষক এতে সম্মতি দিয়েছিলেন, বাকিরা সম্মতি দেননি। মোদি বলেন, ‘আমি যা করেছি, কৃষকের জন্য করেছি। আমি যা করছি, দেশের জন্য করছি।’

গত বছর এই আইন তিনটি পাস করেছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর সারা দেশে বিভিন্ন রাজ্যে আন্দোলন শুরু হয়। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানের কৃষকেরা দিল্লির সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান নেন। কৃষকেরা এই তিন আইনকে ‘কালো আইন’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

তিন কৃষি আইন

দেড় বছর আগে কোভিড পরিস্থিতির সময় এই তিন কৃষি আইন প্রণয়নে কেন্দ্র অধ্যাদেশ জারি করেছিল। তারপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে সংসদের খণ্ডকালীন অধিবেশনে প্রায় বিনা আলোচনায় বিরোধীদের দাবি উপেক্ষা করে তিন আইন পাস করানো হয়।

প্রথমটি ‘অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) আইন’ বা ‘দ্য এসেনশিয়াল কমোডিটিজ (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট’। দ্বিতীয়টি ‘কৃষি পণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন আইন’ বা ‘ফারমার্স প্রডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রমোশন অ্যান্ড ফ্যাসিলিয়েশন) অ্যাক্ট’। তৃতীয়টি ‘কৃষক সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন (মূল্য এবং কৃষি পরিষেবাসংক্রান্ত) আইন’ বা ‘ফারমার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন) অ্যাগ্রিমেন্ট অন প্রাইস অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস অ্যাক্ট’।

মোদি সরকারের দাবি ছিল, মূলত তিনটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য এই তিনটি কৃষি আইন কার্যকর করা হচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে কৃষিক্ষেত্রে ফড়িয়া বা দালালদের আধিপত্য কমিয়ে কৃষকের আয় বাড়ানো। দ্বিতীয়টি হচ্ছে রাজ্যগুলোতে চুক্তিভিত্তিক চাষের ব্যবস্থা আইনসিদ্ধ করা ও তৃতীয়টি হচ্ছে কৃষিপণ্য বিপণন নিয়ে যে আইন রয়েছে, তা দূর করে আন্তরাজ্য কৃষিপণ্যের অবাধ বাণিজ্যের রাস্তা খুলে দেওয়া।

অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) আইনের মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সরাসরি কৃষকদের থেকে কৃষিপণ্য কিনে মজুত ও বিক্রির অধিকার দেওয়া হয়।