তৃণমূলের ভোট–কুশলী প্রশান্ত কিশোরের অডিও টেপ ফাঁসের দাবি

প্রশান্ত কিশোর
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমাতাসীন  তৃণমূলের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর বা পি কে'র একটি অডিও টেপ ফাঁস হয়েছে। রাজ্য বিধানসভার চতুর্থ দফার ভোট চলার মাঝেই গতকাল শনিবার রাজ্য বিজেপি ওই টেপ ফাঁস করেছে।  ফাঁস করা ওই অডিও টেপে পিকের কন্ঠে বলা হয়েছে, এবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে মূল ফ্যাক্টর হয়ে দাড়িয়েছে মোদি, হিন্দুত্ব, মেরুকরণ, অবাঙালি-দলিত-মতুয়া ভোট। হিন্দুদের ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ ভোট যাবে বিজেপিতে। মতুয়াদের দুই তৃতীয়াংশ এবং দলিত ভোটও চলে যাচ্ছে বিজেপিতে। রাজ্যে খুব জনপ্রিয় মোদি।

বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য গতকাল কলকাতার একটি অভিজাত হোটেলে এক সাংবাদিক সন্মেলনে এই টেপ ফাঁস করেন। মালব্য দাবি করেছেন, 'তৃণমূলের ভোটগুরু বা ভোট কুশলী পিকে স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপি জিতছে এবার এই রাজ্যে।'

সাংবাদিক সন্মেলনে অমিত মালব্য বলেন, শুক্রবার রাতে এই অডিও টেপটি তাদের হাতে এসেছে। অমিত মালব্য দাবি করেছেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম 'ক্লাব হাউসে' কথোপকথনে এসব বলেছেন পিকে। সেখানে কিছু সাংবাদিকদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন পিকে।

আর পিকেও এই টেপ ফাঁসের পর স্বীকার করে নিয়েছেন টেপের কন্ঠ তাঁরই। তবে পিকের দাবি, সেই কথপকথনের অংশ বিশেষ প্রকাশ করা হয়েছে। পুরোটি প্রকাশ করলে জানা যাবে কথোপকথনে কী ছিল।

ওই অডিওতে পিকে বলেছেন, বাংলায় ভোট থাকলে তা মোদির নামে রয়েছে। মেরুকরণ, মোদি, হিন্দুত্ব, অবাঙালি, দলিত, মতুয়া ভোট এবারের ভোটের মূল ফ্যাক্টর। শুভেন্দু গেল কিংবা প্রশান্ত কিশোর এল তা ধর্তব্যের বিষয় নয়। মোদি এই বাংলায় জনপ্রিয়। পশ্চিমবঙ্গের এককোটির বেশি হিন্দিভাষী। ২৭ শতাংশ দলিত শ্রেণীর ভোটার। এই সব ভোটারের ভোট পুরোপুরি বিজেপির সঙ্গে রয়েছে। পাশাপাশি পিকে আরও বলেছেন, মতুয়াদের অন্তত ৭৫ শতাংশ ভোট যাবে বিজেপির পক্ষে। ২৫ শতাংশ যাবে তৃণমূলের পক্ষে। পিকে একথাও বলেছেন , ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে অবশ্য মতুয়া ভোটের প্রায় সবই চলে গিয়েছিল বিজেপির পক্ষে। এবার অবশ্য তেমন নাও হতে পারে।

ফাঁস করা ওই অডিও টেপে পিকের কন্ঠে বলা হয়েছে, এবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে মূল ফ্যাক্টর হয়ে দাড়িয়েছে মোদি, হিন্দুত্ব, মেরুকরণ, অবাঙালি-দলিত-মতুয়া ভোট। হিন্দুদের ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ ভোট যাবে বিজেপিতে।

পিকে একথাও বলেছেন, তাঁর সংস্থা এবার কোন দল ক্ষমতায় আসছে তাই নিয়ে একটি সমীক্ষা করে। সেই সমীক্ষায় অনেক ভোটারই বিজেপি জিতবে বলে জানিয়েছেন। এর অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন বাম ভোটারদের একটি বড় অংশ বিজেপির পক্ষে যাবে। পিকে আরও বলেছেন, অন্তত ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ হিন্দু ভোট বিজেপির পক্ষে যাবে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে কংগ্রেস, বামফ্রন্ট এবং তৃণমূল সরকার তোষণের রাজনীতি করেছে বলে মনে করেন অনেক হিন্দু ভোটার। আর দলিতদের বড় অংশ এখনো বিজেপির পাশে আছে।

তবে টেপের পুরো অংশটি প্রকাশ করার দাবি তুলেছে তৃণমূল। তৃণমূলের সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন বলেছেন, ওরা এখন পিকের টেপ নিয়ে মাতামাতি করছে, চতুর্থ দফায়তো শুন্য বা একটা দুটো আসন পেতে পারে। বিভ্রান্তি ছড়াতে এসব করছে বিজেপি। আর তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন আরও বলেছেন, ওরা এখন ওদের কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে এসব টেপ শুনিয়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। ২ মে'র পর আর এই স্বপ্ন থাকবেনা। আর তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ওরাতো টেপের কিছুটা অংশ শোনাচ্ছে। বিজেপির সাহস থাকলে পুরোটা প্রকাশ করুক।

আর প্রশান্ত কিশোর বা পিকে গতকালই এক ট্যুইট বার্তায় বলেছেন, আমি খুশি। কারণ বিজেপি এখন তাদের নেতাদের কথার চেয়ে আমার কথোপকথনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আমার কথা নির্দিষ্ট কিছু অংশ তুলে ধরে উত্তেজিত না হয়ে বিজেপির পুরো কথোপথনকে প্রকাশ্যে আনা উচিৎ। আমি আগেও বলছি , আবার বলছি বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ১০০ আসন পেরোবে না ।

আর বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় বলেছেন, মোদির গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে মমতার কোনো তুলনা হয়না। রাজনৈতিক নেত্রী, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও মমতার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।