ত্রিপুরার স্থানীয় নির্বাচনে স্বপ্নভঙ্গ তৃণমূলের, জয়জয়কার বিজেপির

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ছবি: রয়টার্স

উত্তর-পূর্ব ভারতের বাঙালি অধ্যুষিত ছোট রাজ্য ত্রিপুরায় গত বৃহস্পতিবার ২০টি পৌরসভা ও রাজধানী আগরতলা পৌর করপোরেশন মিলে মোট ২২২টি ওয়ার্ডে নির্বাচন হয়। গতকাল রোববার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তাতে দেখা যায়, বেশির ভাগ ওয়ার্ডে জয় পেয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে আগরতলা পৌর করপোরেশনসহ অন্য পৌরসভায় তৃণমূল লড়লেও জিততে পেরেছে মাত্র একটি ওয়ার্ডে। অন্যদিকে বাম দল জিতেছে তিনটি ওয়ার্ডে।

একটি ওয়ার্ডে জয় পেয়েছে স্থানীয় আঞ্চলিক দল তিপ্রা মথা। অন্যদিকে আগরতলা পৌর করপোরেশনের ৫১টি ওয়ার্ডের সব কয়টিতেই জিতেছে বিজেপি। পৌর করপোরেশনের ২৬ ওয়ার্ডে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর বাম দল ২৫টি ওয়ার্ডে এগিয়ে থেকে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে।

ত্রিপুরার এবারের পৌর নির্বাচনে ৩৩৪টি ওয়ার্ডে ভোট হওয়ার কথা। তবে ১১২টি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় বিজেপি। অবশিষ্ট ২২২টির মধ্যে অধিকাংশ ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এতে করে ২০২৩ সালে অনুষ্ঠেয় রাজ্য বিধানসভার ৬০ আসনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আশা দেখছে দলটি।

ফল ঘোষণার পরই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘খেলা তো সবে শুরু। এবার আসল খেলা হবে ২০২৩ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে ওই রাজ্যে হারবে বিজেপি। ক্ষমতায় আসবে তৃণমূল।’ তবে ত্রিপুরায় বিজয়ের পর রাজ্যের বিজেপি দলীয় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব বলেছেন, ‘এই জয় আমার নয়, এটা ত্রিপুরাবাসীর জয়। জয়ের এই জাদু মুখ্যমন্ত্রীর নয়, ত্রিপুরার জনগণের জাদু।’

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ত্রিপুরার রাজ্য নির্বাচন কমিশন রাজ্যটির পৌরসভা নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচারে বাধা, ভোট কারচুপি, ভোট লুটতরাজ, ভোট ডাকাতি সহিংসতা ছড়ানো, ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল।

এত কিছুর পর তৃণমূল জীবনকে বাজি রেখে বিজেপির সঙ্গে লড়াই করেছে। মাত্র তিন মাসের প্রস্তুতিতে তৃণমূলের প্রতি ত্রিপুরা রাজ্যবাসীর এত ভালোবাসা ফুটে ওঠায় মুগ্ধ তৃণমূলের নেতারা। আগামীতে এই রাজ্যে জয়ী হবে বলে তৃণমূল গতকালই পৌর নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর প্রত্যয় ঘোষণা করেছে।

১৩টি পৌরসভা, ৬টি নগর পঞ্চায়েত ও আগরতলা পৌর করপোরেশন মিলিয়ে ২০টি পৌর অঞ্চলে ৭৮৫ জন প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে বিজেপির ২২২, সিপিএমের ১৯৭, তৃণমূলের ১২০ ও কংগ্রেসের ৯২ জন। আগরতলা পৌর করপোরেশনের ৫১ ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে শুধু বিজেপি ও তৃণমূল। সব কয়টিতেই জিতেছে বিজেপি।

তবে এবার হারলেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়ায় ২০২৩ সালে অনুষ্ঠেয় রাজ্য বিধানসভার ভোটে বিজেপিকে হারানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
ত্রিপুরায় সবশেষ বিধানসভা নির্বাচন হয় ২০১৮ সালে। বামফ্রন্টকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। রাজ্যের ৬০ আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ৩৫টি আসন। এ ছাড়া বামফ্রন্ট পেয়েছিল ১৬টি। স্থানীয় আঞ্চলিক দল আইপিএফটি পেয়েছিল আটটি আসন। ওই নির্বাচনে কংগ্রেস ও তৃণমূল কোনো আসন পায়নি।