দিল্লিতে কোভিডে নিহতদের জন্য শ্মশান দরকার

কোভিডে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের অনেকের একসঙ্গে দাহ চলছে। নয়াদিল্লি, ভারত, ২৮এপ্রিল
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতে করোনাভাইরাসে (কোভিড–১৯) আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় চাপ পড়েছে মর্গ ও শ্মশানগুলোর ওপর। এর মধ্যে দিল্লির অবস্থা ভয়াবহ। শ্মশানগুলোতে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের সারি। দিন-রাত কাজ করেও সব শবের দাহ শেষ করতে পারছেন না শ্মশানকর্মীরা। কোভিডে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাহ করার জন্য নতুন জায়গা বের করার আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যের কর্মকর্তারা। খবর বিবিসির।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা বেশ নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টা পর্যন্ত ভারতে এক দিনে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪৫২ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর আগে বিশ্বে কোনো দেশে এক দিনে এত মানুষ একসঙ্গে আক্রান্ত হননি। পাশাপাশি মারা গেছেন ৩ হাজার ৪৪৩ জন। এর মধ্যে দিল্লিতেই ৪০০, যা দিল্লির জন্য রেকর্ড।

ভারতে এখন করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন ও শয্যার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। স্বজনদের সাহায্য চেয়ে করা আকুতির পোস্টে ভরে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো।

দিল্লির একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা এনডিটিভি নিউজ চ্যানেলকে বলেন, ‘ জায়গার অভাবে কোভিড আক্রান্তদের জন্য নয় এমন শ্মশানেই স্বজনকে দাহ করছেন লোকজন। কোনো বাছবিচার নেই। তাই আমরা কোভিডে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য আলাদা শ্মশান গড়ে তোলার পরামর্শ দিচ্ছি।’

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত বছরে করোনায় নিহত ব্যক্তিদের সৎকারের বিধান নিয়ে বিস্তারিত গাইডলাইন দিয়েছিল। সেখানে সৎকারের সময় যাতে আর সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে, সেই ঝুঁকি এড়াতে বিশেষ নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়।

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ খুবই তীব্র। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুতে রেকর্ড হচ্ছে। আর পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় এবং এই সময় নির্বাচনী সভা ও ধর্মীয় উৎসবের আয়োজনের অনুমোদন দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, দেশটিতে মৃত্যুর হার বিশ্বে সর্বনিম্ন। আর অক্সিজেনের সরবরাহ ‘পর্যাপ্ত’ আছে বলে তিনি দাবি করেন।

হর্ষ বর্ধন বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, বাইরের দেশসহ বিভিন্ন উৎস থেকে এখন অক্সিজেন তৈরি হচ্ছে।

আরও পড়ুন

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক বিমান আজ শুক্রবার দিল্লিতে চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১০ লাখ কোভিড টেস্ট কিট, ১ লাখ এন–৯৫ মাস্ক। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা মোট ১ কোটি ৫০ লাখ এন–৯৫ মাস্ক দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক বিমান আজ শুক্রবার দিল্লিতে চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে এসেছে।
ছবি: রয়টার্স

ইউএস অ্যাজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের কোভিড টাস্কফোর্সের নির্বাহী পরিচালক জেরেমি কনিনদাক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, তাঁদের অগ্রাধিকার হলো এই মুহূর্তে ভারতের ‘সবচেযে বেশি কী প্রয়োজন’, তা চিহ্নিত করা। এদিকে এই সপ্তাহের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্য ভারতে ভেন্টিলেটর দিয়ে সাহায্য করেছে।

কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, আরও অনেক সহায়তা দরকার। মুম্বাইভিত্তিক ড. জরিরি ওদওয়াদিয়া বিবিসিকে বলেন, যে সহায়তা এসেছে বা আসবে, তা ‘সাগরের বুকে এক ফোঁটা পানি’।

ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ কোটি ১১ লাখ ১৭ হাজার ৬৭৯। বিশ্বে করোনায় মোট মারা গেছেন ৩১ লাখ ৭৯ হাজার ১৮৭ জন।

ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩ কোটি ৩০ লাখ ৪৪ হাজার ৬৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মোট মারা গেছেন ৫ লাখ ৮৯ হাজার ২০৭ জন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ভারত। ভারতের পর রয়েছে ব্রাজিল। সম্প্রতি সংক্রমণের দিক দিয়ে ব্রাজিলকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে ভারত। ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৪৫ লাখ ৯২ হাজার ৮৮৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৪ লাখ ১ হাজার ৪১৭ জন।

ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কেরালা, কর্ণাটক, উত্তর প্রদেশ, তামিলনাড়ু, দিল্লি, অন্ধ্র প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ। ছত্তিশগড়, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানার পরিস্থিতিও অবনতিশীল।

আরও পড়ুন