ধর্ষণের শিকার তরুণীর লাশ পরিবারের অমতে দাহ করল পুলিশ

গভীর রাতে মেয়েটির মরদেহ দাহ করতে নিয়ে যায় পুলিশ। হাথরাস, উত্তর প্রদেশ, ভারত, ৩০ সেপ্টেম্বর
ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ভারতে গণধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যাওয়া এক তরুণীর মরদেহ পরিবারের অনুমতি ছাড়া দাহ করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। উত্তর প্রদেশ রাজ্যের হাথরাস জেলায় গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঘটনাটি ঘটে। দলিত পরিবারের ওই তরুণী (১৯) দুই সপ্তাহ আগে নিজ গ্রামের উচ্চ বর্ণের চার ব্যক্তির দ্বারা নিগ্রহের শিকার হন।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সে করে মেয়েটির মরদেহ এলাকায় নিয়ে আসছে। এ সময় তাঁর শোকাহত পরিবার ও এলাকাবাসী বারবার মরদেহ দেওয়ার দাবি করছে। এক ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, মরদেহ শেষবারের মতো বাড়িতে নেওয়ার জন্য মেয়েটির মা গাড়ির সামনের অংশে মাথা রেখে আহাজারি করছেন। আরেক ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, মেয়ের মরদেহের দাবিতে মা অ্যাম্বুলেন্সের সামনে বসে আহাজারি করছেন ও বুক চাপড়াচ্ছেন।

পুলিশের এমন কীর্তির প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সাংবাদিক অভিষেক মাথুর বলেন, রাত আড়াইটায় পুলিশ মেয়েটির লাশ দাহ করে। সেখানে পরিবারের কোনো সদস্য বা কোনো সাংবাদিককে যেতে দেওয়া হয়নি। তিনি দূর থেকে দাহের দৃশ্য দেখেছেন। পরিবারের সদস্যদের দাবি, দাহের সময় তাঁদের ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখে যায় পুলিশ।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, অধিকারকর্মীরা পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা দাবি করেছেন। ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরোধী পক্ষ কংগ্রেস এ ঘটনাকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে। হাথরাসজুড়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে মানুষ। দলিত অধিকারকর্মীরা সেখানকার প্রধান বাজার বন্ধ করে দিয়েছে। তাঁরা সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করেছেন।

গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার চার অভিযুক্ত
ছবি: সংগৃহীত

মঙ্গলবার রাতে দিল্লির একটি হাসপাতালে মৃত্যুর পর ২০০ কিলোমিটার দূরের গ্রামে মেয়েটির মরদেহ নিয়ে আসে পুলিশ। মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা হিন্দু রীতি মেনে পরদিন সকালে (বুধবার) শেষকৃত্য করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে মেয়েটির শেষকৃত্য সম্পন্ন করার তাগিদ দিতে থাকে। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী। মেয়েটির বাবা ও ভাইয়ের অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের পরিবারের নারী সদস্যদের মারধর করে এবং পরিবারের সব সদস্যকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে। কোনো অনুমতি ছাড়াই পুলিশ মেয়েটির লাশ দাহ করে।

কিন্তু পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হাথরাস জেলার ম্যাজিস্ট্রেট প্রবীণ কুমার লস্কর বলেন, ‘আমাদের কাছে ভিডিও আছে। শেষকৃত্যের সময় পরিবারের কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। পরিবারের অনুমতি নিয়েই পুলিশ শেষকৃত্য করেছে। গণমাধ্যমে আসা সংবাদ সত্য নয়।’

ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁকে মারধরের পাশাপাশি শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। এতে তাঁর দুই পা ও একটি হাত অবশ হয়ে যায়। স্নায়ুতন্ত্র, ঘাড় ও জিব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অভিযুক্ত চার ব্যক্তি বর্তমানে কারাগারে আছেন। মেয়েটির ভাই বলেছেন, তাঁর বোনের ওপর বর্বরোচিত ওই ঘটনার প্রথম ১০ দিনে কোনো গ্রেপ্তারের ঘটনার ঘটেনি।

প্রসঙ্গত, পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তবে অধিকাংশ ঘটনাই প্রকাশ পায় না। ভারতে প্রায় ২০ কোটি দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে। হিন্দু বর্ণব্যবস্থার সবচেয়ে নিচের স্তরে থাকা এই জনগোষ্ঠীর সদস্যরা উচ্চ বর্ণের মানুষের দ্বারা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের নিগ্রহের শিকার হয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অধিকার কর্মীরা বলছেন, ভারতের আইন পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে তাদের অধিকার সংরক্ষণ করা জরুরি।