নন্দীগ্রাম আসন ফুরফুরার নতুন দলকে ছেড়ে দিল বাম-কংগ্রেস জোট

অব্বাস সিদ্দিকি
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ঐতিহ্যবাহী নন্দীগ্রাম আসনটিতে এবার আর লড়বে না বাম-কংগ্রেস জোট। আসনটি দীর্ঘদিন বামফ্রন্টের দখলে ছিল। এবার জোটের নতুন শরিক ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির গড়া নতুন দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। আসন ভাগাভাগিতে আইএসএফকে আসনটি ছেড়ে দিচ্ছে বাম-কংগ্রেস জোট।

অন্যদিকে এই আসনে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি নন্দীগ্রামের এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এ আসনে লড়বেন বলে ঘোষণা দেন। আসনটিতে সর্বশেষ বিধায়ক ছিলেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।

নন্দীগ্রাম আসনটি সেই ১৯৫২ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ছিল সিপিআইয়ের দখলে। ২০০৬ সালে তৎকালীন সিপিআই বিধায়ক ইলিয়াস মোহাম্মদ সেখ দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়ার পর বিধায়ক পদ ছাড়েন। পরে ২০০৯ সালের উপনির্বাচনে এ আসনে জয়ী হয় তৃণমূলের প্রার্থী ফিরোজা বিবি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে মনোনয়ন না দিয়ে দেওয়া হয় শুভেন্দুকে।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির এক ঐতিহাসিক আঁতুড়ঘর নন্দীগ্রাম। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম ও হুগলির সিঙ্গুরের জমিবিরোধী আন্দোলনের পথ ধরে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতায় এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বিদায় দিয়েছিলেন বামফ্রন্টের ৩৪ বছর শাসনের। সেদিন সিঙ্গুরে টাটাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ন্যানো গাড়ি কারখানা গড়ার জন্য দেওয়া জমির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন মমতা। একই সময় নন্দীগ্রামে রসায়ন শিল্প গড়ার জন্য জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার।

দুই জায়গায় জমিবিরোধী আন্দোলনের জেরে মমতা ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত করেছিলেন। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর হয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এখনো তিনি এ পদেই আছেন। ২০১৬ সালে এই রাজ্যের সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে বহু ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। হারিয়েছিলেন বামফ্রন্ট প্রার্থীকে। পেয়েছিলেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬২৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রার্থী বামদল সিপিআইয়ের আবদুল কবীর সেখ পেয়েছিলেন ৫৩ হাজার ৩৯৩ ভোট। আর বিজেপি প্রার্থী বিজন কুমার দাস পেয়েছিলেন ১০ হাজার ৭১৩ ভোট। এবারও এই আসনে বিজেপি লড়ছে। প্রার্থী হতে পারেন শুভেন্দু নিজেই। কারণ, আগেই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন এ আসনে মমতা লড়লে তিনিও লড়ে দেখাবেন ও হারাবেন মমতাকে।

নন্দীগ্রাম আসনটি সেই ১৯৫২ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ছিল সিপিআইয়ের দখলে। ২০০৬ সালে তৎকালীন সিপিআই বিধায়ক ইলিয়াস মোহাম্মদ সেখ দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়ার পর বিধায়ক পদ ছাড়েন। পরে ২০০৯ সালের উপনির্বাচনে এ আসনে জয়ী হয় তৃণমূলের প্রার্থী ফিরোজা বিবি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে মনোনয়ন না দিয়ে দেওয়া হয় শুভেন্দুকে। আর ফিরোজাকে মনোনয়ন দেওয়া হয় পশ্চিম পাঁশকুড়া বিধানসভা আসনে। শুভেন্দু ও ফিরোজা দুজনই জয়ী হন।

এবার এই আসনে তৃণমূল থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা, বিজেপি থেকে শুভেন্দু ও তৃতীয় প্রার্থী হিসেবে আইএসএফের নতুন এক প্রার্থীর লড়াই করার কথা রয়েছে। নন্দীগ্রাম আসনটি সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত। ভোটারদের প্রায় ২৫ শতাংশ মুসলিম। ফলে এখানে জোর লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আইএসএফের নেতা পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি কলকাতার ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে আয়োজিত এক জনসভায় বলেন, ‘এই আসনে আমাদের লড়তে হবে রাজ্য সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে।’ তিনি ২৮ ফেব্রুয়ারি কংগ্রেস-বাম জোটের ডাকা বিগ্রেড সমাবেশে বিপুল কর্মী নিয়ে এই ময়দান ভরিয়ে দেবেন। সমাবেশে আরও যোগ দেওয়ার কথা আছে বিহারপতি লালুপ্রসাদের দল আরজেডির প্রধান লালুপুত্র তেজস্বী যাদবেরও।