নন্দীগ্রামে মমতার বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম আসনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ আসনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ও দলটির শীর্ষ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর থেকে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল, এ আসনে বিজেপি প্রার্থী কে হচ্ছেন? তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণার এক দিন পর সব জল্পনা–কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এ আসনে প্রার্থী হিসেবে মমতার একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহচর শুভেন্দু অধিকারীর নাম ঘোষণা করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।

একই সঙ্গে প্রথম দুই দফার ভোটের ৬০টি আসনের মধ্যে ৫৭টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি। আজ শনিবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়। এ তালিকায় সবচেয়ে বড় চমক নন্দীগ্রামে মমতার বিরুদ্ধে শুভেন্দু অধিকারীর নাম।

নন্দীগ্রাম আসনটি পূর্ব মেদিনীপুরে। ২০০৭ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার এখানে রসায়নশিল্প গড়ার জন্য ২৭ হাজার একর জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নিলে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলেন মমতা। এ আন্দোলনে মমতার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন শুভেন্দু। নন্দীগ্রামের পাশাপাশি সিঙ্গুর আন্দোলনে ভর করে রাজ্যে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটান মমতা। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দুকে মন্ত্রী করা হয়।

এবার পাশার দান বদলে গেছে। সেই আন্দোলনের দুই দিকপাল মমতা-শুভেন্দু লড়ছেন একই আসনে। একে অপরের বিরুদ্ধে। গত ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু। এরপর মমতাকে নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে লড়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তিনি। কলকাতায় বিজেপির এক রোড শোতে যোগ দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ‘মমতা নন্দীগ্রামে দাঁড়ালে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেব।’

প্রার্থী হতে কেন্দ্রীয় সরকারের জুট করপোরেশনের অস্থায়ী চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন শুভেন্দু। এরপর থেকে নন্দীগ্রামে মমতা–শুভেন্দুর দ্বৈরথ দেখার অপেক্ষায় ছিলেন সবাই।

লড়াকু মমতাও এ চ্যালেঞ্জ লুফে নেন। ১৮ জানুয়ারি নন্দীগ্রামের তেখালির এক জনসভায় ঘোষণা দেন, ‘এখানকার মানুষ চাইলে আমি নন্দীগ্রাম আসনে লড়ব।’ শুক্রবার প্রার্থী ঘোষণার সময় মমতা বলেন, ‘কথা দিলে কথা রাখি আমি। নন্দীগ্রাম থেকেই এবার ভোটে লড়ছি।’ এ সময় তিনি কলকাতার ভবানীপুর আসনটি ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। ওই আসনের বিধায়ক হিসেবে তিনি এখন মুখ্যমন্ত্রীর পদে রয়েছেন।

আগামী ১ এপ্রিল নন্দীগ্রাম আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় আসন রয়েছে ২৯৪টি। এর মধ্যে শুক্রবার ২৯১ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা তিনটি আসন ছেড়ে দিয়েছেন বন্ধুদল দার্জিলিংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে। একই দিন পশ্চিমবঙ্গের বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটও প্রথম ও দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের ৬০টি আসনের মধ্যে ৩৮ আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। আর আজ শনিবার বিজেপি প্রথম দুই দফার ৬০টির মধ্যে ৫৭ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল।