নাগরিকত্ব আইন: কংগ্রেসের কপিল সিবালের ভিন্ন সুর

কেরালা সাহিত্য উৎসবে কংগ্রেস নেতা ও আইনজ্ঞ কপিল সিবাল। ছবি: এএনআই
কেরালা সাহিত্য উৎসবে কংগ্রেস নেতা ও আইনজ্ঞ কপিল সিবাল। ছবি: এএনআই

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে এখন পুরো ভারত উত্তাল। একে সংবিধানবিরোধী বলে সংখ্যালঘুরা তো বটেই, প্রতিবাদে শামিল হয়েছে আসাম, দিল্লি, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও পাঞ্জাবের কোটি কোটি লোক। এ বিরোধিতায় শামিল হয়েছে কংগ্রেসসহ প্রায় সব বিরোধী দল। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আইনজ্ঞ কপিল সিবাল শোনালেন লড়াইয়ের নতুন এক রাস্তার কথা। তিনি বলেছেন, সিএএ কার্যকর না করার কথা কোনো রাজ্য বলতে পারে না।

গতকাল শনিবার কেরালার কালিকটে কেরালা সাহিত্য উৎসবে যোগ দিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআইকে সাক্ষাৎকারে এবং আজ রোববার সকালে এক টুইটবার্তায় কপিল ওই আইনের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের পথ বাতলান। টুইটে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন অসাংবিধানিক। প্রতিটি রাজ্যের বিধানসভার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে এর বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস করার। তবে সমস্যা বাধবে যদি সুপ্রিম কোর্ট এই আইনকে সাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেন। আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া উচিত।’

নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সংকট এই সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকাকে ঘিরেই। আজকের টুইটের ব্যাখ্যা কপিল কালিকটে আগের দিনই দিয়েছেন। কেরালা সাহিত্য উৎসবের ফাঁকে এএনআইকে ৭১ বছরের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বলেন, ‘কোনো রাজ্য সরকারের পক্ষে এটা বলা কঠিন যে আমরা সংসদে পাস হওয়া আইনকে মেনে চলব না। রাজ্যগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বার্তা দিচ্ছে, তারা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), এনআরসি ও এনআরপি নিয়ে অখুশি। এনআরসি তৈরি হয় এনআরপির ওপরে ভিত্তি করে এবং সেটা কোনো স্থানীয় রাজ্যের রেজিস্ট্রার বাস্তবায়িত করবেন।’

কংগ্রেসের সরকারের আইনমন্ত্রী ছিলেন কপিল। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের তিনবারের সভাপতিও তিনি। বর্তমানে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার এই সাংসদ তবে পুরো পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ বলতে গিয়ে বলেন, ‘সিএএবিরোধী আন্দোলনে অন্য দলগুলোর উচিত কংগ্রেসকে সামনে রাখা। জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে আমি মনে করি, আমাদের সবার উচিত একসঙ্গে দাঁড়ানো। কেননা, এটা জাতীয় আইন। আমাদের যা করা উচিত, তা হলো রাজনৈতিকভাবে একত্র হয়ে এই লড়াই লড়া এবং কংগ্রেসকে সরকারের দায়িত্ব দেওয়া।’

কপিলের কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় আরেক বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের কথায়ও। এএনআইকে বলেন, ‘যদি সুপ্রিম কোর্ট সিএএ নিয়ে হস্তক্ষেপ না করে, তবে এই আইন আইনের বইয়ে থেকে যাবে। সে ক্ষেত্রে তাকে অমান্য করা কঠিন হবে।’

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালের আগে আগত অমুসলিম (হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও পার্সি) শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এসব দেশের মুসলিম শরণার্থী, শ্রীলঙ্কা থেকে তামিল শরণার্থী, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তিব্বতের বৌদ্ধ শরণার্থীদের এই আইনের বাইরে রাখা হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই আইন বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানে বর্ণিত দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তির পরিপন্থী।

কেরালার বাম সরকার দেশের প্রথম রাজ্য সরকার হিসেবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। পাঞ্জাবের বিধানসভাতেও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের প্রস্তাব পাস হয়েছে। কেরালার পর দ্বিতীয় রাজ্য হিসেবে এই আইন তাদের রাজ্যে কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। সুপ্রিম কোর্টে এই আইনের বিষয়ে জমা পড়েছে ৬০টি পিটিশন।