নির্বাচনী প্রচারে উসকানি, ভারতীয় নেতাদের ওপর যত নিষেধাজ্ঞা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত শাহ, যোগী আদিত্য

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই শুধু নন। নির্বাচনী প্রচারে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে এর আগে অনেক ভারতীয় নেতাকেই নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য, বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীসহ অনেকেই আছেন।

৩ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলির তারকেশ্বরে এক নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের একজোট হয়ে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি বলেছিলেন, ‘সংখ্যালঘু ভোট যেন ভাগ না নয়। বিজেপি টাকার থলি নিয়ে মাঠে নেমেছে। ওরা সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করতে চায়। তাই আপনারা বিজেপির কথায় কান না দিয়ে একজোট হয়ে ভোট দিন।’

মমতার এই বক্তব্য ছিল কার্যত ভারতের নির্বাচন আচরণবিরোধী। তাই বক্তব্যের পর বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মমতার ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ তুলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান ভারতের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে। এরপরই এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন মমতাকে নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ এনে নোটিশ পাঠায়। নোটিশে বলা হয়, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই নোটিশের জবাব দিতে হবে কমিশনে। এরপর দ্বিতীয় নোটিশও পাঠানো হয় মমতাকে। কিন্তু মমতার পাঠানো শোকজ নোটিশের জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। তাই গতকাল সোমবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন মমতার নির্বাচনী প্রচারের ওপর ২৪ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

নির্বচন কমিশনের এই নির্দেশের পর রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়ে পড়ে। মমতা নিজেই বলেছেন, এটা নির্বাচন কমিশনের অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক নির্দেশ। তিনি গতকালই ঘোষণা দিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে কলকাতার কেন্দ্রস্থল ধর্মতলার গান্ধিমূর্তি পাদদেশে এই ঘটনার প্রতিবাদে এক অবস্থান ধর্মঘটে বসবেন। পাশাপাশি তৃণমূল থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ রাত ৮টা ৫ মিনিটে বারাসাতে মমতা যোগ দেবেন নির্বাচনী প্রচারসভায়। এর আগে বারাসাতের নির্বাচনী মঞ্চে মমতার ছবি রেখে চলবে প্রচার।

নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক মন্তব্যের কারণে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ওপরও ৭২ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্যের জন্য বহুজন সমাজ পার্টি নেত্রী মায়াবতী, কংগ্রেস নেতা নবজ্যোৎ সিং সিধু, সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খান, বিজেপি নেত্রী মেনকা গান্ধী, তামিলনাড়ুর ডিএমকে নেতা এ রাজা, আসামের বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মাসহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অমিত শাহের নির্বাচনী প্রচারের ওপরও এর আগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন। এই এপ্রিল মাসেই ডিএমকে নেতা এ রাজা এবং আসামের বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মার ওপর পৃথকভাবে ৪৮ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন।

তবে মমতার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার ঘটনাকে মেনে নিতে পারেনি তৃণমূল। তৃণমূলের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য গতকাল বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রুটির মতো। তাঁকে যত চাপবেন, তিনি তত ফুলবেন। দেবাংশু আরও বলেছেন, ২৪ ঘণ্টা মমতাকে নিষিদ্ধ করে বিজেপি আরও ২৪টি আসন হারিয়ে ফেলল।

আবার তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন বলেছেন, ১২ এপ্রিল একটি কালো দিন হিসেবে লেখা থাকবে ।

তবে বাম-কংগ্রেস নেতারা নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিলেও প্রশ্ন তুলেছেন, কেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহাদের বেফাঁস মন্তব্যের জন্য নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নিল না?

বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, মানলাম নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে। তবে নির্বাচন কমিশন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষদের ব্যাপারে তো কোনো সিদ্ধান্ত নিল না।

আর কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেছেন, এসব গটআপ খেলা মমতা-বিজেপির।
আর বিজেপির রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসু নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে মমতার উদ্দেশে বলেছেন, ‘কাউকে তো সম্মান করেন না উনি। ভোটের সময় কমিশন যে শেষ কথা, সেটাও ভুলে যান উনি।’